Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিন্নির বাবা-মার গ্রেফতার দাবি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় এবার নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মা জড়িত বলে দাবি করেছেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ। এ জন্য তিনি মিন্নির বাবা-মাকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন। একই সঙ্গে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই বা অন্য কোনো সংস্থায় হস্তান্তরে আপত্তি জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল হালিম শরীফ এমন দাবি করেন।

অন্যদিকে গতকাল সকালে জেলহাজতে মিন্নির চিকিৎসায় যাওয়া বরগুনা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি মেডিক্যাল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান দাবি করেছেন, মিন্নি তেমন কোনো গুরুতর অসুস্থ নয়। এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে, তাই মানসিকভাবে একটু চাপে আছে। ভয়ের কিছু নেই, দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। তিনি অনেক ভালো আছেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুল হালিম শরীফ বলেন, পুলিশ যথাযথ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রিফাত শরীফ হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মিন্নিকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া ঘটনায় জড়িত ১৬ জন আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার ও প্রত্যেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু আসামি পক্ষের কেউ কেউ ‘কুচক্রী মহল’ এর ইন্ধনে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মামলাটি যাতে অন্য কোনো সংস্থার কাছে তদন্তভার হস্তান্তর না করা হয় সে দাবিও করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আমার একমাত্র ছেলের হত্যাকারী মিন্নির বাবা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এতে আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছি।
এত দিন পরে কেন এমন অভিযোগ তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হালিম শরীফ বলেন, নিহত নয়ন বন্ডের সঙ্গে আগে বিয়ের তথ্য গোপন করে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন আমার ছেলে রিফাতের সঙ্গে প্রতারণা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মিন্নির বিয়ে না হলে রিফাতের এমন খুনের ঘটনা ঘটতো না। এ জন্য আমি মনে করি রিফাত হত্যার সঙ্গে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল ও মা মিলি বেগম জড়িত। তাদের গ্রেফতার করলে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে।

অন্যদিকে গতকাল মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়ের আগে যে বিয়ের কাবিননামা এখন দেখানো হচ্ছে তাতে আমাদের স্বাক্ষর আছে কি না আপনারা যাচাই করে দেখুন। আর এখন যারা এ বিয়ের বিষয়টি সামনে আনছে তারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। এই মামলার মান নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে তার মেয়েকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। কেননা এই মামলার আসামিদের সঙ্গে প্রভাবশালী পরিবারের সখ্য এবং আত্মীয়তা রয়েছে। তা ছাড়া এই হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের আড়াল করতেই পরিকল্পিতভাবে তার মেয়ে মিন্নিকে জড়ানো হয়েছে। এখন তাদেরও জড়ানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
তিনি বলেন, প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার মেয়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নানা পোস্ট, এডিট করা ছবি, ভিডিও প্রচার করে তার চরিত্র হরণ করে জনমত তৈরি করা হয়েছে। এরপর প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন করে বিষয়টির পূর্ণতা দেয়া হয়। এ সবকিছুই একটি নিখুঁঁত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করা হয়েছে।

মানসিক চাপে মিন্নি
গতকাল সকালে জেলহাজতে মিন্নিকে দেখতে যান বরগুনা সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি মেডিক্যাল অফিসার ডা. হাবিবুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, না তেমন কোনো সমস্যা নেই। মিন্নিও তেমন কিছুই বলেননি। তবে তার ঘুম কম হচ্ছে। সকালবেলা যেহেতু জেলখানার কিছু নিয়ম-কানুন আছে, সেহেতু সকালে তিনি ঘুমাতে পারেন না। আমরা কারা কর্তৃৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি, উনি যতটুকু রেস্ট নিতে চান, তিনি যেন তা নিতে পারেন। জেল কর্তৃৃপক্ষও সেটা দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে মহিলা ডাক্তারও ছিলেন। মিন্নির পরিবারের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এর আগে গত বুধবার বরগুনা জেলা কারাগারে মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম দাবি করেছিলেন, মিন্নি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি বলেছিলেন, মিন্নি খুঁঁড়িয়ে খুুঁঁড়িয়ে হঁাঁটছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত হত্যাকান্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওইদিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি। খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন। মিন্নি ছিলেন সেই মামলার এক নম্বর আসামি। পরে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ