Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মরুর মরিয়ম এখন পাবনার চলনবিলে

থোকায় থোকায় ঝুলছে অপরূপ রঙের ফল

মুরশাদ সুবহানী, পাবনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম ফলের মধ্যে অন্যতম। সউদী আরব, ইরাক, দোজলা-ফোরাত কূলে, মিশর খেজুর গাছ ও ফলের আদি স্থান বলেই অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। প্রাচীনকাল থেকে খেজুর মানুষের জীবন ধারণের অন্যতম অবলম্বন হিসেবে আরব বিশ্বে চলে আসছে।
মরু ভূমি এলাকায় যেখানে অন্য কোনো গাছপালা জন্মানো সহজ নয় সেখানে খেজুর গাছ আল্লাহর এক নিয়ামত। খেজুর মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও আফ্রিকার আলজেরিয়া, রিবিয়া, তিউনেশিয়া, সুদান, এশিয়ার পাকিস্তান ও ভারতের মরু এলাকা বাগান রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকা ও চীনের কোন কোন এলাকায় সফলভাবে খেজুর চাষ করা হচ্ছে। রমজান মাসে ইফতারের একটি অপরিহার্য ফল হচ্ছে খেজুর।

বাংলাদেশে সউদী আরবের মতো সুমিষ্ট ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খেজুর বাগান গড়ে তোলার কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে দেশীয় যে খেজুর হয়, সেই ফল ক্ষুদ্রাকৃতির। আর খেজুর গাছের রসে পাটালী, বর্তমানে মিষ্টির দোকানে খেজুরের রস দিয়ে শীত মৌসুমে সন্দেশ তৈরী করা হয়। শীতকালে খেজুর গাছের বুক চিরে বের করে আনা হয় রস। এই রস দিয়ে দুধের পিঠার স্বাদ গ্রহণ করেননি এমন মানুষ বোধ করি নেই।

সউদী আরবের খেজুর আকারে বড় আকারের এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ ও সুস্বাদু। দুই চারটি খেজুর সঙ্গে এক গøাস পানি হলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগবে না। সে সঙ্গে শরীরে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে আরবের খেজুর জন্মানোর চেষ্টা চলে আসছে। কিন্তু সফলতা তেমন আসেনি।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামার বাড়ীর উপ-পরিচালক আজাহার আলী এর কারণ সম্পর্কে বলেছেন, সউদী আরবের মতো খেজুর বাগান তৈরীর উপযোগি মাটির অভাব রয়েছে। এর জন্য বিশেষ করে মরুময় এলাকার প্রয়োজন। মাটি বালুময় না হওয়ায় অনেকই এই চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

কিন্তু মানুষ চেষ্টা করলে কি না পারে। অবশেষে পাবনার বৃহত্তর চলনবিল এলাকার চাটমোহরে আলহাজ্ব আব্দুল জলিল সউদী আরবের খেজুর গাছ লাগিয়ে সফল হয়েছেন। মরিয়ম নামের অত্যন্ত সুমিষ্ট খেজুর ফলাতে সক্ষম হয়েছেন। এই খেজুর দেখতে তার বাগানে লোকজন ভীড় করছেন। পাবনার চাটমোহরের চলনবিল সংলগ্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল হান্ডিয়াল এলাকায় আব্দুল জলিল বাড়ির পাশে প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে মরিয়ম খেজুরের বীজ রোপন করেন।

আব্দুল জলিল অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। তিনি মরিয়ম খেজুরের বীজ রোপন করার পর চারা বের হলে পরিচর্চা করেন। চলনবিল এলাকার পানি সরে গেলে পলি ও বালি জমে। সেই মরিয়ম খেজুর গাছে খেজুর ফল ফলেছে। তিনি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। তিনি গোটা চলনবিল এলাকায় সুমিষ্ট সউদী আরবের মরিয়ম খেজুর আবাদ ছড়িয়ে দিতে চান। বাণিজ্যিকভাবে এই খেজুর আবাদ হলে লাভজনক হয়ে উঠবে।

তিনি মনে করেন, সারাদেশে ধীরে ধীরে খেজুরের আবাদ বাড়বে। শিক্ষকতা থেকে ২০১২ সালে অবসর নেয়ার পর পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। মক্কায় বিভিন্ন খেজুরের বাগান পরিদর্শন করেন। মরিয়ম খেজুরের বীজ নিয়ে আসেন সাথে করে।

প্রথম দিকে গ্রামের লোকজন বলতেন, মরু অঞ্চলের খেজুর বাংলাদেশে আবাদ হয় না। অনেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ধৈর্য্যরে সাথে অপেক্ষা করেন। এখন তার পরীক্ষামূলক বাগানে মরিয়ম খেজুরের গাছে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে ফল। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই আবাদ বাড়াতে পারবেন। তিনি মনে করেন, দেশে এই খেজুরের বাণিজ্যিক আবাদ হলে দাম কম পড়বে।

আব্দুল জলিলের চলনবিল এলাকায় আরব দেশের খেজুরের সফল ফলন বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলনবিলে বর্ষাকালের পানি সরে গেলে পলি ও বালি মাটি পড়ে। এই কারণে আরবের খেজুর উৎপাদনে এই এলাকা উপযোগি হয়েছে। তারা আব্দুল জলিলকে সব ধরণের সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।



 

Show all comments
  • দক্ষ উদ্দীন সা'দী ২৭ জুলাই, ২০১৯, ৬:৫০ এএম says : 0
    বাংলাদেশে পবিত্র আরব মরুর মরিয়ম খেজুর বানিজ্যিকভাবে ফলাতে পারা হবে, বিরাট গৌরবের বিষয়। অর্থকরি তাজা খেজুর ফসল দেশের ফলের বিশাল বাজারে নতুন মাত্রা যোগ করবে। উদ্যোক্তা কৃষিবিদ ও সরকারি অনুদানে সুস্বাদু অত্যন্ত পুষ্টিকর মরিয়ম খেজুর দেশের আবহাওয়া উপযোগী চারা উতপাদন করে আশানুরূপ খেজুর ফলন অবশ্যই সম্ভব।।
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:২৪ পিএম says : 0
    খবরটি পড়ে খুব ভালো লাগলো।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:৩০ পিএম says : 0
    বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এজন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:৩১ পিএম says : 0
    এই সম্ভবনাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:৩২ পিএম says : 0
    রমজান মাসে ইফতারের একটি অপরিহার্য ফল হচ্ছে খেজুর।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ