Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে

গুলি দু’বার-তিনবার করুন আপনাদের ব্যাপার : হাইকোর্ট

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ : সাত দিনের মধ্যে ওষুধ আনার নির্দেশ
বিশেষ সংবাদদাতা
মানুষের জীবন আগে। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। আপনারা গুলি তিনবার করুন আর পাঁচবার করেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। ইঁদুর কিংবা কীটপতঙ্গ মারা গেলে ক্ষতি নেই। আমরা চাই মশা মরুক। মানুষ বাঁচুক। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন বিচারপতি তারিক উল হাকিম এবং বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারর্দীর ডিভিশন বেঞ্চ।

আদালত তাদের এডিস মশা নিধন এবং ডেঙ্গু দমনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনের আইনজীবী আদালতকে এই মর্মে আশ্বস্ত করেন যে, তারা এখন সকাল এবং বিকেল দুই বেলা এডিস মশার ওষুধ ছিটাবে।

হাইকোর্ট নির্দেশিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন ব্যক্তিগত হাজিরা দিতে আসেন। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

শুনানিকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আইনজীবী স্বীকার করেন যে, ডেঙ্গু মহামারীতে রূপ নিয়েছে। মহামারীতে পরিণত মশা নিধনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে আমরা মশার ওষুধ ছিটানোর মাত্রা বাড়িয়ে দেবো। একবারের স্থলে সকাল-বিকাল দু’বার ওষুধ ছিটাবো। এ সময় আদালত বলেন, আপনারা গুলি তিনবার করেন আর পাঁচবার করেন সেটা আপনাদের ব্যাপার। আমরা চাই মশা মরুক। মানুষ বাঁচুক।

গতকাল আদালতে ঢাকা উত্তরের পক্ষে ছিলেন শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. তৌফিক ইনাম টিপু। ঢাকা দক্ষিণের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। শুনানিকালে সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ওষুধ আমদানি করা হবে চায়না থেকে। ১৫ জুলাই একটি যৌথসভা হয়েছে। ২৮ জুলাই আরেকটি সভা হবে। এক মাস লাগবে নতুন ওষুধ আমদানি করতে। সিটি করপোরেশনের দুটি বিভাগের মতামত লাগে। তারা পরীক্ষা করেন ওই ওষুধ জীব বৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর কি না। ওষুধের প্রভাবে অনেক ইঁদুর মারা যায়। আবার উপকারী কীটপতঙ্গ মারা যাবে। সবকিছু ঠিক রেখে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। আদালত বলেন, এখন যে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে সেটা তো কাজ করে না। আইনজীবী বলেন, আমরা মাত্রা বাড়িয়ে দেব।

আদালত বলেন, একজন মন্ত্রী বলেছেন, ওষুধ অকার্যকর। এ সময় আইনজীবী বলেন, এ বছর অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্রতার কারণে মশার প্রকোপ বেশি। এতে মশার আক্রমণ বেড়েছে। সিটি করপোরেশনেরও অবহেলা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এখনকার মশা বিটুমিন খায়, ফিনাইল ও হারপিকও খায়। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। ডেঙ্গু সমস্যাকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। মশা দমনে আদালতের কাছে আরো সময় চান এ আইনজীবী। তিনি বলেন, আমরা মাত্রা বাড়িয়ে দেখি মশা নিধন হয় কি না। আমাদের ৩/৪ দিন সময় দিন। তিনি জানান, সেনানিবাসে ওষুধ প্রয়োগের পর মশা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সোনানিবাসের আদলে একটি ওয়ার্ডকে মডেল ধরে ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। আদালত বলেন, গত বছর যে ওষুধ ছিল সেটা তো কাজ করেছে। ওই ওষুধের যে রং ও গন্ধ ছিল এখনকার ওষুধ তার ধারে কাছেও নেই।

আইনজীবী বলেন, একই কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। উত্তর সিটির আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, আমরা একটি সমন্বিত কর্মসূচিতে যাবো। দুই সিটিতে এ কর্মসূচি চলবে। আদালত বলেন, ইঁদুর মারা গেলে ক্ষতি নেই। মানুষের জীবন আগে। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে।

এর আগে সকালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ওষুধ আমদানি করতে কতদিন সময় লাগবে তা দুপুরের মধ্যে হলফনামা আকারে জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ১৪ জুলাই রাজধানীতে ডেঙ্গু নির্মূল ও ধ্বংসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নিতে বলেন। রুল জারি করে ২২ জুলাইর মধ্যে ডেঙ্গু নিধনে গৃহীত পদক্ষেপের তথ্য জানাতে বলেন আদালত। পরে ২২ জুলাই দুই সিটি প্রতিবেদনে জানায় জনসচেতনতা কর্মসূচির পাশাপাশি ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আদালত এ প্রতিবেদনে অসন্তুষ্ট হয়ে ২৫ জুলাই দুই সিটির প্রধান দুই স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন। গতকাল তারা হাজিরা দেন।

সাত দিনের মধ্যে কার্যকর ওষুধ আনার নির্দেশ
গতকাল হাজিরা প্রদান করে দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাদের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এডিস মশা ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া ছড়াচ্ছে। আফ্রিকার মতো আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এটি। আমরা ওষুধ এনেছি। তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। আদালত বলেন, আপনারা যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না তখন নতুন পদক্ষেপ নেননি কেনো? সারা দেশের মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত। ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূলে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যকর ওষুধ আনবেন। কীভাবে আনবেন, সেই প্রক্রিয়া বলুন। আদালত বলেন, ঘরে ঘরে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেকে হাসপাতালে যায় না। সবাই হাসপাতালে গেলে এ সংখ্যা আরও বেশি হতো। দ্রæত কিভাবে ওষুধ আনা যায় সে ব্যবস্থা নিয়ে দুপুর ২টার মধ্যে আমাদের জানান। পরে বিকেলে আদালত আবার বসেন। এ সময় দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে আদালত অব্যাহতি দেন।

ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণের নির্দেশ
এদিকে হাইকোর্টের পৃথক একটি বেঞ্চ বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কে.এম. কামরুল কাদেরের ডিভিশন বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। বেসরকারি মেডিক্যাল, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ফি নির্ধারণ এবং তা সবার সাধ্যের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ আদেশ দেন আদালত। এ সময় আদালত বলেন, বেসরকারি মেডিক্যাল, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ফি যেন মানুষের সাধ্যের বাইরে না হয়, মানুষ যাতে সাধ্যের মধ্যে ন্যূনতম সেবা পেতে পারে সে জন্য একটি ফি নির্ধারণ করে দিতে হবে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতাল যাতে বিনামূল্যে এ দুই রোগের পরীক্ষা করা যায় সে বিষয়ে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচারককে দ্রæত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ