Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইলিশ ধরতে যাচ্ছে ট্রলারগুলো : বাজারে বাড়বে মাছের সরবরাহ

সাগরপাড়ের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণের স্পন্দন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০১ এএম

 

সাগরে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিসহ ইলিশের গর্ভসঞ্চার নির্বিঘœ করতে টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পরে উপকূলের প্রায় দু’লাখ জেলের মধ্যে নতুন প্রাণসঞ্চার হয়েছে। দাদন নিয়ে বরফসহ রসদ মজুদ করে জেলেরা সাগরে যেতে শুরু করেছে। তবে দুর্যোগের মৌসুম বিধায় অধিকাংশ যন্ত্রচালিত নৌকা ও ছোট মাপের ট্রলার সাগরে যেতে পারবে না। ঐসব নৌকা ও ট্রলার সাগর মোহনার উপকূলীয় নদ-নদীতেই আগের মত মাছ শিকার করছে। সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার ফলে বাজারে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের সরবারহ বাড়বে বলেও আশা করা যাচ্ছে।
গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে এবার দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় ৬টি জেলার প্রায় ২ লাখ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল প্রদান করেছে সরকার। তবে সে খাদ্য সহায়তা পৌঁছেছে প্রায় শেষ দিকে। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, দক্ষিণাঞ্চলে ৩ লাখ ৫২ হাজার জেলের মধ্যে প্রায় দুই লাখ সাগরে মৎস্য আহরণ করে থাকে।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী আগামী আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পরের ২২ দিন উপকূলের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রজনন ক্ষেত্রে গভীর সমুদ্র থেকে মা ইলিশ ছুটে আসবে ডিম ছাড়তে। আর ঐসব ইলিশ-এর নিরাপদ গর্ভধারণ নিশ্চিত করতেই প্রথমবারের মতো গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। এরফলে শুধু ইলিশ নয়, সাগরে সবধরনের মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে বলেও জানিয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।

আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার সময় সাগর থেকে গর্ভবতী মা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে এসে বঙ্গোপসাগর উপকূলের মীরসরাই উপজেলার শাহের আলী হতে হাইতাকান্দী পয়েন্ট, তজুমদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গÐামারা পয়েন্ট এলাকার ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে ডিম ছেড়ে আবার সাগরেই ফিরে যাবে। অভিপ্রয়ানি মাছ ইলিশ স্রোতের বিপরীতে প্রতিদিন ৭১ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটে চলতে পারে।

ফলে ঐ ৭ হাজার বর্গকিলোামিটার এলাকায় সব ধরনের মৎস্য আহরণসহ সারা দেশে ইলিশ শিকার এবং পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ থাকবে। সদ্যসমাপ্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন মৎস্যজীবী ও জেলেদের তরফ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ করা হলেও সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। মূলত সাগরে দুর্যোগকালীন সময়েই এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় বাস্তবে তা জেলেদের খুব বেশি ক্ষতি করেনি বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক মৎস্য বিজ্ঞানী। তাদের মতে, বৈশাখের শেষ ভাগ থেকেই সাগর উত্তাল থাকে। যা আরো অন্তত দেড় মাস অব্যাহত থাকবে। ফলে এসময় ছোট ও মাঝারী ট্রলারও সাগরে যাওয়া নিরাপদ নয়।

বিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যবস্থাপনার ফলে সারা বিশ্বের ৭৫% ইলিশ উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এখন শীর্ষস্থানে রয়েছে। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারসহ বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ইলিশ উৎপাদন ক্রমাগত হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে তা প্রতিবছর ৮Ñ১০% পর্যন্ত বাড়ছে। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ১৭ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। যা এর আগের বছর ৪.৯৬ লাখ টন ছিল বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে তা অন্তত সোয়া ৫ লাখ টনে উন্নীত হবার কথা।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এরও বেশি। আর মৎস্য সম্পদে ইলিশের অবদান প্রায় ১২-১৩%। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, গত দেড় দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য বিভাগের মতে, সারা দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৬০ ভাগ অর্থাৎ ৩.৩০ লাখ টন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা থেকে আহরিত হয়ে থাকে।

দেশের ৪০টি জেলার ১৪৫টি উপজেলার দেড় হাজার ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ জেলে পরিবার ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত। যার ৩২% সার্বক্ষণিক, ৬৮% খÐকালীন। এমনকি ইলিশ বিপণন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, জাল, নৌকা ও বরফ তৈরি এবং মেরামত কাজে আরো ২০-২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। দেশের ৬টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে এ পেশায় জড়িত। যার ৬৫% সার্বক্ষণিক ইলিশ আহরণে জড়িত বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে।
#

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ