Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সুযোগে বাংলাদেশের সাগরে মাছ ধরেছে ভারতীয়রা

অভিযোগ দক্ষিণের জেলেদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৯ এএম

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে মাছধরার ওপর দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার, অর্থাৎ আজ বুধবার থেকে জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের অভিযোগ, দুই মাসেরও বেশী সময় তারা সাগরে মাছ ধরতে পারেননি, কিন্তু সুযোগটি নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা - তারা এ সময় বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বরগুনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দ‚রে নলিবাজার। বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকাটি জেলে অধ্যুষিত।
এখানকার বেশিরভাগ মানুষ ম‚লত সাগরের মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভর।
মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়ে সাগরে যেতে পারলে তাদের জীবিকা চলে, নতুবা জীবন থমকে যায়।
টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সময় জেলেরা অলস সময় কাটিয়েছেন।
একজন জেলের স্ত্রী রেনু বেগম বলছিলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সময়টাতে তার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল।
"খাওয়া-দাওয়া চলাফেরায় সমস্যা হয়। এহন তো জাল বাইতে পারে না," বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন রেনু আক্তার।
সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার ব্যবস্থা নেয়।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, শুধু নিবন্ধিত জেলেরাই এই সহায়তা পাবে।
অন্যদিকে, ৬৫ দিনের জন্য ৪০ কেজি চাল নিতান্তই কম বলে জানালেন জেলে আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বহু জেলে আছেন যারা সরকারের খাতায় নিজেদের নাম নিবন্ধন করাতে পারেননি।
"আমি যখন মাছ ধরতে সাগরে গেছি, তখন কার্ড কইরা ওরা চইল্যা গেছে। এই রকম আমার মতো হাজার-হাজার জেলে আছে কার্ড করতে পারে নাই," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আব্দুর রাজ্জাক।
জেলা মৎস্য অফিসের হিসেব অনুযায়ী, বরগুনায় ৪৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে আছে।
তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।
মৎস্য আহরণের সাথে জড়িতরা বলছেন, ভারতে যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ থাকা উচিত।
বরগুনা জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম দাবি তোলেন, ভারতের সাথে মিল রেখে এই 'অবরোধ' কার্যকর করা হোক।
"ভারতে বাংলা পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মাছ ধরার উপরে অবরোধ। আমাদের এখানে মাছ ধরার উপর অবরোধ ৬ই জ্যৈষ্ঠ থেকে ১০ই শ্রাবণ। বঙ্গোপসাগর একটাই। সাগরে তো কোন ওয়াল দেয়া নাই যে ইলিশ মাছ ওপাশে যাবে না," বলছিলেন নজরুল ইসলাম।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, একই বঙ্গোপসাগরে দুই রকমের নিয়ম হয় কিভাবে?
তবে বরগুনা জেলার মৎস্য অফিস বলছে, বিচার-বিশ্লেষণ করেই এ সময়টিতে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জেলেদের অভিযোগ হচ্ছে, বাংলাদেশের সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ অংশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোবসাগরে ৩২টি ভারতীয় ট্রলারসহ ৫০০ জেলে আটক করা হয়েছিল। এ খবর প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
বরগুনার ট্রলার মালিক এবং জেলেরা তাদের অভিযোগ জানাতে এ বিষয়টির কথা উল্লেখ করছেন।
ইলিশ কি মিঠা পানির মাছ হয়ে যাচ্ছে?
কিন্তু পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ঝড়ের কবলে পড়ে তারা বাংলাদেশের জলসীমা এসেছিলেন।
তবে ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশে এসে মাছ ধরার বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে বলে জানান বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
এক্ষেত্রে কোস্ট গার্ড এবং নৌবাহিনী সজাগ রয়েছে বলে তিনি জানান।
কর্মকর্তারা বলছেন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়টি ২০১৫ সাল থেকে শুরু হলেও চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এই সময়টিতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার কারণে মাছের উৎপাদন বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মি. আজাদ। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Nasir Tushar ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
    দেশটা কি আর আমাদের আছে?নিজেকে কেমন জানি পরাধীন পরাধীন লাগে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mosarofhossain Mosaraf ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:০৬ এএম says : 0
    হা হা হা এরা নানার দেশের লোক কিছুই মনে করবেন না না হয় তোমার নামে মামলা হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Anarul Islam Rana ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
    ভারত,মায়ানমারের আচারন ও বাংলাদেশের কিছু দালালদের কার্যক্রম দেখে মনে হয় এদেশের সার্বভৌমত্ব বলে কিছু নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Safikul Islam Rana ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
    বিগত ১৫ দিনে শেয়ার বাজার থেকে ২৭০০০ কোটি টাকা লুট,আর ৬৫ দিনে সাগর লুট করে নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা ! এক সময় শুধু এদেশের মানচিত্রটাই থাকবে বাকী সব লুট হয়ে যাবে। আমরা সবাই চুপ,কারন আমাদের মধ্যে ছেলে ধরা আতংক ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Shebliee Nomine ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 0
    আমরা পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি, ভারতীয়দের শোষনের কবলে পড়েছি। ধিক্কার জানাই আমাদের জাতীয় নেতৃত্বের। এখনো সময় আছে, অনেক কিছু করার। প্লীজ সবাই এগিয়ে আসুন।
    Total Reply(1) Reply
    • Billal Hossain ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:৫৯ এএম says : 4
      Kindness of BAL.
  • Monir Mahmud ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
    আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য বরাদ্দ ছিলো এই ৬৫দিন, কিছু করার নাই, হে বন্ধু আর কি চাও বল, আর কি দিলে স্বাধীনতা যুদ্ধের অবদান শেষ হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Rakibul Islam Akash ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
    it's right.but our government is silent and they are not take proper action.shame for bangladesh because of this.
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Jwel ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১৩ এএম says : 0
    এটা নুতন কি ঘটনা.এটা তো অনেক পুরনো খবর.আমাদের দুরভাগ্য যে আমরা শ্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ হয়েও ওদের করা বিভিন্ন অন্যায় কে প্রতিহত করতে পরিনা.....
    Total Reply(0) Reply
  • Murtuza Chowdhury ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
    মাছধরার নিষিদ্ধ দিনগুলোতে বাংলাদেশের জলসীমায় কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশ নেভীর টহল জোরদার করা উচিত যাতে বিদেশি ট্রলার এসে মাছ মেরে নিয়ে যেতে না পারে। নাহলে তো যে উদ্দেশ্যে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয় সে উদ্দেশ্য টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kayum Rahman Sabuz ২৫ জুলাই, ২০১৯, ২:১৪ এএম says : 0
    তখন যদি জামাই আদোর না করে ট্রলার সহ জেলেদের অবৈধ প্রবেশের জন্য আটক করে বিচার করা হতো তাহলে আজ এই সাহস পেতো না।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ২৫ জুলাই, ২০১৯, ৪:৪৬ এএম says : 0
    COST GURD, BNAGLADESH NAVY KI .......... .........?? ODER KI BOSHIE BOSHIE MOTA TAJA KORA HOCHE NAKI??
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ