পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক দলগুলো রাজধানীর সংগঠনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ঢাকায় সংগঠনের কমিটি গঠনে খুবই সতর্ক থাকে যে কোন দল। সংগঠন শক্তিশালী করতে ঢাকা মহানগরকে বিভক্ত করেছিল বিএনপিও। বিভক্ত উত্তর-দক্ষিণে একাধিকবার নেতৃত্ব বদল করেছে। কিন্তু ব্যর্থতার কারণে গতি আসছে না ঢাকা মহানগর বিএনপিতে। এখন যে কোনো সময় ভেঙে দেয়া হতে পারে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি। নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড সতর্কতার সাথে এগোচ্ছে। এবার ব্যর্থ ও আত্মগোপনে থাকা নেতাদের বাদ দিয়ে যারা দলীয় কার্যক্রমে সময় দিতে পারবে এমন নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি করার কথা জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। এক্ষেত্রে ছাত্রদল থেকে বাদ পড়া এবং অন্য সংগঠনের আগ্রহী তরুণদেরও মহানগর বিএনপির কমিটিতে প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, যে চিন্তা থেকে উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করা হয়েছিল মহানগর বিএনপি সেটি অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। শক্তিশালী নয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর নেতৃত্বের সঙ্কটে বিপর্যস্ত মহানগর উত্তর বিএনপি। কমিটি ঘোষণার আগে থেকেই মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুম। সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরইমধ্যে গত সোমবার ঢাকা মহানগর উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। যা দলের অন্য নেতাকর্মীদের মনোবল দুর্বল করেছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি বিভিন্ন সঙ্কট মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। সদ্য কারামুক্ত মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল জানিয়েছেন- তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করতে শিগগিরই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। অবশ্য দুই বছর মেয়াদী কমিটি দীর্ঘদিন পর হলেও মহানগরীর থানা-ওয়ার্ডে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পেরেছে। তবে এসব কমিটি গঠন নিয়েও ক্ষোভ এবং অসন্তোষ রয়েছে দলের ভেতরেই।
যদিও এর আগে সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও সদস্য সচিব আব্দুস সালামকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং হাবিব উন নবী খানকে সদস্য সচিব করে কমিটি দেয়া হয় মহানগর দক্ষিণে। তারাও আন্দোলনে সফল হননি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগরকে দুই ভাগ করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি। আর এমএ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসানউল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা উত্তরের কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে বিএনপির মহানগর কমিটিগুলোর মেয়াদ দুই বছর। এসব কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। কমিটি ঘোষণার এক মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নিদের্শনা ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি। মহানগরীর দুই অংশের যেসব থানা-ওয়ার্ডের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল সেগুলোও অপূর্ণাঙ্গ।
মহানগরীর নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানান, রাজপথের আন্দোলন কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রম- কোথাও নেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। রাজধানীতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সাংগঠনিক ইউনিটকে শক্তিশালী করার জন্য কেন্দ্রের কোনো উদ্যোগই সাফল্য পায়নি। বরং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আরো বিপর্যস্ত হয়েছে নগর বিএনপি। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় কোনো আন্দোলন কিংবা নির্বাচনী কার্যক্রম জমিয়ে তুলতে পারেনি দলটি। তাদের মতে, মহানগরীর দুই অংশের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ দীর্ঘদিন ছিলেন কারাগারে। আবার কেউ কমিটি ঘোষণার আগ থেকেই আত্মগোপনে। উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুম সভাপতি হওয়ার আগ থেকেই বিদেশে অবস্থান করছেন। সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও মামলার অজুহাতে আত্মগোপনে থাকেন। দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর স¤প্রতি মুক্তি পেয়েছেন দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলেও তিনিও একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এমন দশায় ঢাকা মহানগরীতে দলীয় কার্যক্রমে নেই কোনো গতি। তাদের অনুপস্থিতিতে থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কমিটি ঘোষণার আগেই তৃণম‚ল নেতাকর্মীদের অভিযোগ বিএনপির হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছিল- যারা দেশে নেই কিংবা নিজেকে বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের যেন শীর্ষ পদে না আনা হয়। কিন্তু সেসব অভিযোগ ও দাবি আমলে নেয়নি বিএনপি। ফলে মহানগরীর রাজনীতিতে বিএনপিকে ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে অধিকাংশ থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হলে তা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দিয়ে প্রায় সব জায়গায় পকেট কমিটি করা হয়েছে। ফলে অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনও করেন মহানগর নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক কার্যক্রম না থাকায় অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ সংগঠন থেকে পদত্যাগও করছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি আব্দুল মোতালেব পদত্যাগ করেছেন। অব্যাহতি চেয়েছেন কোতোয়ালি থানা বিএনপির মোল্লা সাইফুল ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর থানা কমিটিগুলো কিছু পূর্ণাঙ্গ এবং আংশিক গঠন করতে পেরেছি। এখন দ্রুত সময়ের ভেতরে আলোচনার মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠন করা হবে। আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভেদাভেদ ভুলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। ইনশাআল্লাহ সামনে এগিয়ে যাবো।
মহানগর উত্তরে নেতৃত্বের সঙ্কট: জানা গেছে, মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি থাকেন মালয়েশিয়া। সাধারণ সম্পাদকও প্রায় আত্মগোপনে থাকেন। নির্বাচন পরবর্তী শারীরিক ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিএনপির সব পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন। ২১ মার্চ উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি হাজী মো: দুলাল দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দারুস সালাম থানা বিএনপির সভাপতি হাজী আব্দুর রহমানকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরো বেশ কয়েকজন নেতা মুচলেকা দিয়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান। এরইমধ্যে গত সোমবার মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি বলেন, বিএনপিতে এতো কোন্দল যে, সেখানে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। তাই তিনি চলে এসেছেন। আরো অনেক নেতাও দল ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এছাড়া ২০১৮ সালের ৩ জুন মহানগর উত্তর বিএনপির ২৫টি থানা ও ৫৮টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসব কমিটি গঠনে সবার সাথে আলোচনা না করা এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের লোকজনকে পদ দেয়া সহ নানা অভিযোগ উঠে। একপর্যায়ে মহানগর উত্তরের ৬৬ জন নেতার মধ্যে ৩২ জন নেতা ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা ঘোষিত কমিটির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ লিখিত আকারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে দিয়ে সমস্যা সমাধানের দাবি জানান। কিন্তু সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন নিয়ে নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন। মহানগর উত্তর বিএনপির সেক্রেটারি আহসান উল্লাহ হাসানকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা প্রতিদিন রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। প্রায় দেড় বছর ধরে নেতাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাছাড়া একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি অনুকূলে ছিলনা। সভাপতি দীর্ঘ ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এরপরও আমরা ২৪ টি থানা কমিটি গঠন করেছি। হয়তো কোনো কোনো থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বৈঠকে মিলিত হব। সেখানে সার্বিক বিষয় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতিমধ্যে মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।