Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘লেখাপড়া যত বেশি চাকরি পেতে তত দেরি’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

দেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা তাতে করে দেশের যুবসমাজের শতকরা ২০ ভাগ মনে করেন তাদের শিক্ষা চাকরি পেতে সহায়তা করবে। তবে শিক্ষিত নারী-পুরুষের বেশিরভাগ পাস করেই চায় সরকারি চাকরি। তাদের লেখাপড়াও যেন সরকারি চাকরির জন্যই। শতকরা ৫৭ নারী এবং ৪২ ভাগ তরুণ সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেন। তবে ধনী পরিবারের শিক্ষিতদের অনেকেই চান মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং তাদের নিজস্ব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভ করতে। অপরদিকে শিক্ষাবঞ্চিত বা স্বল্পশিক্ষিত অতিদরিদ্র আর নি¤œবিত্তরা চাকরি না পেয়ে জীবিকার তাগিদে বিদেশে পাড়ি জমাতে চান। যুব জরিপ-২০১৮ এই চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে আরো বলা হয়, লেখাপড়া যত বেশি চাকরি পেতে তত দেরি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এই জরিপ পরিচালনা করে। জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক এই যুব-জরিপের ফলাফল গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর উদ্দিন, ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং বিআইজিডি’র নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

যুব জরিপ-২০১৮ শীর্ষক এ জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবক-যুবতী। দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর (১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী) সংখ্যা কর্মসক্ষমতাহীন ব্যক্তির (১৫ বছরের নিচে এবং ৬০ বছরের ওপরে) সংখ্যার চেয়ে এই সংখ্যা বেশি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমৃদ্ধ করতে এই যুবরা মূল চালিকাশক্তি হতে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুবদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতেই এই যুব-জরিপ পরিচালনা করা হয়।

এতে বলা হয় শিক্ষিত যুবদের মধ্যে শতকরা ৫৭ নারী এবং ৪২ পুরুষ সরকারি চাকরি করতে চান। এইচএসসি অথবা এর নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতার পুরুষদের মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ উপার্জনমূলক কাজের সাথে যুক্ত। যাদের লেখাপড়া যত বেশি, তারা উপার্জনমূলক কাজের সঙ্গে বেশি দেরিতে যুক্ত হন। নারীদের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষিতদের মাত্র শতকরা ৫ শতাংশ উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত। যারা লেখাপড়া করেন না, উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত নেই, এমনকি কোনো প্রশিক্ষণও (এনইইটি) গ্রহণ করছেন না, এদের প্রায় ৯০ ভাগই নারী। প্রায় শতকরা ২০ ভাগ অংশগ্রহণকারী বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী হলেও তাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ এ ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা করছে।

পছন্দের স্বাধীনতা অনুযায়ী পুরুষ যুবরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বন্ধু ও পেশা নির্বাচন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং অর্থ ব্যয়ে অধিক স্বাধীনতা উপভোগ করছে। নারীরা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ নারী স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ পায়; যা পুরুষের অর্ধেক। তবে সবাই প্রধানত দু’টি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন; লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা (যেমন বাল্যবিয়ে, যৌতুক, যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ) এবং মাদক সম্পর্কিত সমস্যা।

যুব জরিপ-২০১৮ কে স্বাগত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, এ ধরনের কাজ আমাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে। কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে। তবে সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা বাড়ছে, প্রাথমিক শিক্ষক পদে শতকরা ৬০ ভাগের ওপরে নারীদের নিয়োগ দেয়া হয়। যুবসমাজের উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুব গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যুবকদের সমস্যা, সম্ভাবনা ও চাহিদা নিরূপণ করে এসব কেন্দ্র থেকে সহায়তা দেয়া হবে।

ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্র্যাক অনেক দিন ধরেই কাজ করছে। আমরা স্কুলভিত্তিক কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছি, যাতে এখানকার শিক্ষা পরবর্তীতে তাদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক হয়। জরিপে আরো বলা হয়, বিদেশে পাড়ি জমাতে চাওয়াদের আরো দু’টি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এবং সম্পদের মালিক হওয়া। যুবসমাজের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ বিশ্বাস করেন যে, তাদের শিক্ষা চাকরি পেতে সহায়তা করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ