Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারবিরোধী সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ

প্রথম গুজব দুবাই থেকে : সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিদের লিংক পাওয়া গেছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল সুপরিকল্পিতভাবে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রথম যে পোস্টটি আমাদের নজরে আসে সেটি ছিল দুবাই থেকে। দুবাইয়ের একজন প্রবাসী বাংলাদেশী এই পোস্টটি করেন। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। গুজব ও গণপিটুনির ঘটনায় ৩১টি মামলায় এ পর্যন্ত ১০৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, মাথা কাটার গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত ৬০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ২৫টি ইউটিউব লিংক এবং ১০টি ওয়েব পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। এসব ফেসবুক ও ইউটিউব লিংকের মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছিল। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সবই গুজব। যারা নিহত হয়েছে কেউই ছেলেধরা ছিল না। একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আন্দোলনসহ নানা উপায় অবলম্বন করে ব্যর্থ হয়ে এখন গুজব ছড়াচ্ছে। তারা দেশের বাইরে থেকেও গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। গুজবের ঘটনায় এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কয়েকজনের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের লিংক পেয়েছি। জড়িতদের প্রোফাইল তৈরির কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

আইজিপি বলেন, স¤প্রতি স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে। এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়। অনেকে না বুঝেই এগুলো শেয়ার করছে, এগুলোতে মন্তব্য করছে। অথচ আমরা এই গণপিটুনির ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখলাম, এতে যে আটজন মানুষ মারা গেল তাদের সবাই নিরপরাধ। তাদের কেউই ছেলেধরা ছিল না। নেত্রকোনায় ১৮ জুলাই এক শিশুর মাথাকাটাসহ একজনকে ধরে গণপিটুনি দিয়েছিল স্থানীয়রা। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তি রবিন ছিল একজন মাদকাসক্ত। সে কয়েকবার তার স্ত্রীর গলা কাটতে চেয়েছিল। আমরা নিহত শিশুর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করেছি। পারিপার্শ্বিক ঘটনার বিশ্লেষণে আমরা বলতে পারি, শিশুটিকে রবিন প্রথমে বলাৎকারের চেষ্টা করে, এরপর শিশুটি এর প্রতিবাদ করতে গেলে সে তাকে হত্যা করে। বাড্ডায় নারী নিহতের ঘটনাটিও ছেলেধরা ছিল না। ওই নারী তার মেয়েকে ভর্র্তির জন্য স্কুলে গিয়েছিল। একইভাবে যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জের ঘটনাটিও ব্যক্তিগত বাগি¦তন্ডায় ছেলেধরা বলে চিৎকার করার কারণে ঘটেছে।

তিনি বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমরা দেখেছি প্রতিটি ঘটনায় ইতিপূর্বেও গুজবকে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের দেশে সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে, এমন গুজবও ছড়িয়েছে। আমাদের মানুষ খুব সহজ সরল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্ট হলে, আর সেটি যদি নেগেটিভ হয় তাহলে খুব দ্রুত শত শত লাইক-শেয়ারে ভরে যায়। এই ঘটনাগুলো পুলিশ সদর দফতরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। প্রতি জেলার এসপি, মেট্্েরাপলিটন পুলিশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে ছোট ছোট আকারে সভা করেছে। প্রতিটি স্কুল-মাদরাসার বাইরে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সাদা পোশাকে পুলিশ রাখা হয়েছে।

আইজিপি বলেন, দেশবাসীর উদ্দেশে আমি বলতে চাই, এ ঘটনাটি একটি গুজব, ¯্রফে গুজব। পুলিশ যেকোনো প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে থাকবে। আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আমরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে ভিকটিম না হয়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। গুজব বন্ধে বৃহস্পতিবার থেকে আমরা সারাদেশে সচেতনতা সপ্তাহ ঘোষণা করছি। এই সচেতনতা সপ্তাহে পুলিশের প্রতিটি সদস্য হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় যাবেন। অভিভাবক শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ ছাড়াও শুক্রবার জুমার নামাজের আগে প্রতিটি মসজিদের ইমামদের এ বিষয়ে কথা বলতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, মূলত দু’ভাবে গুজব ছড়িয়েছে। কেউ না বুঝে হুজুগে গুজব ছড়িয়েছে। আবার কেউ পরিকল্পিতভাবে ছড়িয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আপনি আইন হাতে তুলে নিলেন মানে অজান্তে হত্যা মামলায় জড়িয়ে গেলেন।
আইজিপি বলেন, কেউ যদি এ রকম ঘটনা (ছেলেধরা) দেখতে পান বা জানতে পারেন, কাউকে যদি সন্দেহ হয় আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবেন। অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের ডিজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ ও সদর দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ