পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রিয়া সাহা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার অদ্ভূত নালিশ নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধিক্কার অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষুব্ধ কয়েকজন নাগরিক গতকাল তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে ঢাকা, যশোর, নাটোর, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতে মামলার আবেদন করলেও পরে সেগুলো খারিজ হয়েছে। সর্বত্রই পিয়া সাহাকে নিয়ে তর্ক বিতর্ক, সমালোচনা এবং তার বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া শুরুর দাবি উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন অন্যেরা সামান্য কিছু বললেই তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগে একদিনে অসংখ্য মামলা হয়। অথচ পিয়া সাহার ক্ষেত্রে উল্টো শ্রোত। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন পিয়া সাহার খুঁটির জোর কোথায়?
প্রিয়া সাহা গতকাল ট্রাম্পের কাছে নালিশের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমি অধ্যাপক আবুল বারাকাতের সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই গবেষণায় দেখিয়েছেন প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন সংখ্যালঘু বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন’। প্রিয়া সাহা আরো দাবি করেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়েই ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারাকাত উত্তরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। আরেকটি সেমিনারে দেখা যায় খুশি কবিরের পাশেই প্রিয়া সাহা বসে আছেন। তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে সরকারি দল ও সুশীল সমাজের বিভিন্ন জনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছেন। দেশাত্ববোধ ও মানবাধিকারের বুলি আওড়ালেও তার মূল লক্ষ্য মুসলিম বিদ্বেষী চেতনা প্রচার।
প্রিয়া সাহা রাশেদা কে চৌধুরী, খুশি কবির, রোকেয়া কবির, মালেকা বেগম, অ্যারোমা দত্ত, শাহরিয়ার কবির, পান্না কায়সার, পিজুষ বন্দোপাধ্যায়, ডা. আবুল বারাকাত, নাসির উদ্দিন ই্উসূফসহ ওই শ্রেণির লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করেন।
প্রিয়া সাহা পক্ষ্যে গতকালও সংবাদ সম্মেলন করে সাফাই গেয়েছেন পীযূষ বন্দোপাধ্যায়। তিনি এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মন্তব্য করেছেন। ‘স¤প্রীতি বাংলাদেশ’ আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে বলেন, প্রিয়া সাহার নালিশ বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এ ঘটনার দায় কেউ এড়িয়ে যেতে পারে না। সুষ্ঠু তদন্ত হলে তিনি কাদের প্ররোচনায় কোন উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার করেছেন তা বেরিয়ে আসবে। প্রিয়া সাহাকে শিখন্ডী বানিয়ে কোনো স্বার্থন্বেষী মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডাক্তার মামুন আল মাহতাব বলেন, ’৭৫ পরবর্তী ষড়যন্ত্রকারীরা প্রিয়া সাহাকে ব্যবহার করে কোনো চক্রান্ত করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।
প্রিয়া সাহার বক্তব্য প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পিয়া সাহা যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেগুলো মিথ্যা; তবে এতো ছোট ঘটনা রাষ্ট্রদ্রোহ বলে মনে করি না’। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘প্রিয়া সাহা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেয়া বক্তব্যের জন্য তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিত। প্রিয়া সাহা আসলে কি বলেছেন, কি বলতে চেয়েছেন, তার একটা পাবলিক স্টেটমেন্ট করা উচিৎ। তার আগে কোনো লিগ্যাল পসিডিউর করতে, মামলা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর একটা মামলা করতে চেয়েছিলেন, আমি তাকে এ ধরনের মামলা করতে না করেছি। কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো প্রিয়া সাহাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন। কেউ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সাধারণ কেউ ঠুনকো কথা বললে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় ডজন ডজন; অথচ প্রিয়া সরকারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্যদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে অধিযোগ করেছেন সেটা ছোট্ট ঘটনা?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী এবং দেশের সুনাম সঙ্কটে ফেলার একটি উদ্দেশ্য। তার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কোন বিষয় থাকতে পারে। অন্য একটি দেশের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের জন্য সরাসরি আমন্ত্রণ করা অত্যান্ত ঘৃন্য কাজ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অজ্ঞাতে হোয়াইট হাউজে প্রিয়া সাহা কিভাবে গেলেন তার নেপথ্যে কারা তানিযে প্রশ্ন তুলেছেন ওই সংগঠনের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ। তিনি প্রশ্ন করেন প্রিয়া সাহা কিভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে গেছেন সেটাই রহস্য। কাজল আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনটি নাম চাইলে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নির্মল রোজারিও, নির্মল চ্যাটার্জি এবং সুজিত বড়ুয়ার নাম দেন। সেখানে ১৩৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন। ৪০ জন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন। আমাদের ফরেন মিনিস্টারও ছিলেন। তিনি দলনেতা। তাদের সঙ্গে না থেকে প্রিয়া সাহা কিভাবে ট্রাম্প যে ২৭ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সেখানে ঢুকলেন এটা বড় প্রশ্ন।’
নারী নেত্রী প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালে তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া বাংলাদেশের দলিত স¤প্রদায় নিয়ে ‘শারি’ নামে একটি এনজিও'র পরিচালনা করেন। এই এনজিওর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বিদেশি অনুদান সংগ্রহ করেছেন। সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে ওই তহবিল ব্যয়ের কথা থাকলেও সেটা তিনি নিজের পরিবারের উন্নয়নেই খরচ করেছেন।
তিনি ‘দলিত কণ্ঠ’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক। ‘দলিত কণ্ঠ’ পত্রিকার ঘোষণাপত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের ১২ জুন ঢাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী নাহিদ রসুল পত্রিকাটি প্রকাশের ঘোষণাপত্র প্রদান করেন। ঘোষণাপত্রে শনাক্তকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন অ্যাডভোকেট আল আমিন রিজভী। ‘দলিত কণ্ঠ’ সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে প্রিয়া সাহা অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বার্থ বিরোধী কোনো সংবাদ তিনি পরিবেশন করবেন না। কিন্তু পত্রিকাটির ডিক্লারেশন পাওয়ার মাত্র ১ মাসের মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী বক্তব্য দিয়ে এসেছেন।
প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাসের পৈত্রিক নিবাস পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চরবানিয়ারী গ্রামে এবং শ্বশুরবাড়ি যশোরে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেন রোকেয়া হলে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সিপিবির সহযোগী সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাদের দুই মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষèী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করছেন। বড় মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডের লাভের চেষ্টা করছেন কিছুদিন থেকে। মলয় সাহা এবং প্রিয়া দু’জনই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। মলয় সাহা দুদকের সুবিধাভোগী এবং ভাগ্যবান কর্মকর্তাদের একজন। তাকে নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। তিনি দীর্ঘ দিন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ডেস্ক অফিসার ছিলেন। এ সময় অর্থের বিনিময়ে বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে দায়মুক্তি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মলয় সাহা সরকারি চাকরি করলেও চাকরির শৃংখল অমান্য করে তিনি গোপনে ‘শারী’ নামে একটি এনজিও পরিচালনা করেন। সংস্থাটি কাগজ-কলমে প্রিয়া সাহার নাম থাকলেও নেপথ্যে মলয় সাহা এটির থিংক ট্যাংক। সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক সংগঠনের সংগেও যুক্ত মলয় সাহা। তিনি কয়েক মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সাবেক ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তোলা একটি সংগঠনের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি সাংগঠনিক প্রচার কার্য চালালেও গতকাল শনিবার থেকে মলয় সাহা তার টাইমলাইন থেকে সকল তথ্য মুছে ফেলেন। তার ফেসবুক আইডিও বøক করে রাখা হয়েছে। মোবাইল ফোন কলও রিসিভ করছেন না। তিনি অফিসও করছেন না।
এদিকে ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রিয়া সাহা।এই ব্যাখ্যাও তিনি ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন। গতকাল রোববার ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় তিনি এ ব্যাখ্যা দেন। তিনি বেসরকারি সংস্থা ‘শারি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ওই বার্তায় গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. আবুল বারকাতের গবেষণার উদাহারণ দিয়ে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি এক সময় তার (আবুল বারকাত) সঙ্গে কাজ করেছি। আবুল বারকাত বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই গবেষণায় দেখিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৬৩২ জন সংখ্যালঘু বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। আমি সেই গবেষণা থেকেই রেফারেন্স দিয়েছি। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর যে নির্যাতন হয়েছে। আর আমার নিজ গ্রামে ২০০৪ সালে ৪০টি হিন্দু পরিবার থাকলেও এখন সেই সংখ্যা মাত্র ১৩টি।’##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।