Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফেরি চলাচলে বিপর্যয়

ভারত থেকে ধেয়ে আসছে বালুমিশ্রিত স্রোত

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ভারত থেকে ধেয়ে আসা বালু মিশ্রিত প্রবল স্রোতে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফেরি চলাচলে ভয়াবহ বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে। ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ পদ্মা মেঘনার পূর্বাংশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা ক্রমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে যানবাহন পারাপার মাত্র ৬ হাজারে নেমে এসেছে। আর অপেক্ষায় ছিল আরো ৩ হাজারের মত। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে দিনে প্রায় ১০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে।

ফেরি রুটের এ বিপর্যয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী, চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-ল²ীপুর এবং লাহারহাট ভেদুরিয়ার ফেরি ঘাটগুলোতে বিপুল সংখ্যক যানবাহনের হাজার হাজার যাত্রী এবং পরিবহন কর্মীরা পড়েছে সীমাহীন দূর্ভোগে। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত পাটুরিয়ায় প্রায় ৬শ’, মাওয়ায় সাড়ে ৯শ’, চাঁদপুরে প্রায় ৯শ’, ভোলা-ল²ীপুরে ৩শ’ এবং লাহারহাট-ভেদুরিয়ায় শতাধিক যানবাহন আটকে ছিল।

জানা গেছে, অধিক মাত্রার বালুর কারণে প্রপেলারের স্যাফট-এর স্ট্যান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফেরিগুলোর মূল ইঞ্জিন এবং গিয়ারও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে ঘন ঘন ফেরি বিকল হচ্ছে। ফলে যানবাহন পারাপারও প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। মাওয়া সেক্টরের পদ্মার তীব্র স্রোত অতিক্রম করতে পারছে না ‘ডাম্ব ফেরি’গুলো। এ সেক্টরের ৭টি ডাম্ব ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার সংক্ষিপ্ত সড়ক পথে যানবাহন পারপার মারাত্মক বিপর্যয়ের কবলে। এ সেক্টরে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় যানবাহন পারাপার হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩২৫টির মতো। যা স্বাভাবিক সময়ের অর্ধেকেরও কম। আর অপেক্ষমান ছিল প্রায় ৮শ’।
এদিকে প্রবল স্রোতের কারণেও আরিচার সেক্টরে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া, মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী ও মঙ্গলমাঝির ঘাট, চাঁদপুরের সেক্টরের শরিয়তপুর, ভোলা-ল²ীপুর এবং বরিশাল-ভোলার মধ্যবর্তী ভেদুরিয়া-লাহারহাট রুটে যানবাহন পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
বিআইডব্লিউটিে এবং টিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, সীমান্তের ওপার থেকে অত্যাধিত বালু মিশ্রিত প্রবল স্রোতের ঢল দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি গত সপ্তাহখানেক ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে হ্রাস পাওয়ায় উজানের ঢলের সাথে মিশ্রিত বালুর বেশিরভাগই সাগরে পতিত হচ্ছে। ফলে এসব বালু সাগর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে।
সূত্র আরো জানান, বালুর কারণেই চলতি মাসে বিআইডব্লিউটিসি’র ফেরি সেক্টরগুলোতে অন্তত ২৫টি ফেরি বিকল হয়েছে। সংস্থার কারিগরি বিভাগের কর্মীরা দিনরাত কাজ করে একটি ফেরি সচল করার আগে আরেকটি বিকল হচ্ছে। গতকাল দুপর পর্যন্ত আরিচা সেক্টরের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটের ২টি করে রো রো ফেরি বিকল ছিল। এছাড়া প্রবল স্রোত অতিক্রম করে চলতে না পারায় মাওয়া সেক্টরে ৭টি ডাম্ব ফেরির সবগুলোই বসিয়ে রাখতে হয়েছে।

ভোলা-ল²ীপুর রুটের ৪টির মধ্যে ১টি কে-টাইপ ফেরি বিকল হয়ে পড়ায় ঐ সেক্টরে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১শ’ যানবাহন পারাপার সম্ভব হয়েছে। অপেক্ষমান ছিল আরো প্রায় ৩শ’। সাগর মোহনার নিকট দূরের উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উপমহাদেশের সর্বাধিক দূরত্বের এ ফেরি সেক্টরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়ছে। চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের বরিশাল ও ভোলার মধ্যবর্তী ভেদুরিয়া-লাহারহাট রুটে ৪টি ইউটিলিটি ফেরি গত বৃহস্পতিবার সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩শ’ যানবাহন পারাপার করলেও অপেক্ষমান ছিল আরো শতাধিক। এসব বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার বিআইডবিøউটিসি’র চেয়ারম্যান ও পরিচালক-কারিগরি ও বাণিজ্যের সাথে আলাপ করার চেষ্টা করেও তাদের টেলিফোন ও সেল ফোনে পাওয়া যায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ