পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরগুনায় প্রকাশ্যে হত্যার শিকার রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী শুনানি শেষে মিন্নির জামিনের আবেদন নাকচ করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। দুই পক্ষের শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আদালত আদেশ দেন। আদালতে আয়শা সিদ্দিকার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। তিনি বলেন, আদালতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ৪জন প্রতিনিধি, ব্লস্টের পটুয়াখালী ও বরিশাল প্রতিনিধিসহ বরগুনা আদালতের ৩০জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আয়শা সিদ্দিকার জামিনের আবেদন নাকচ হলে তার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতের কাছে জানতে চান, জামিনের আবেদন কেন নাকচ করা হলো?
তখন আদালত বলেন, আয়শা সিদ্দিকা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া আরও দুই আসামি রাব্বি আখন্দ ও রিফাত ফরাজি বলেছেন, নয়নের সঙ্গে পরিকল্পনা করে আয়শা সিদ্দিকা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, শনিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে আমি বরগুনার এমপির চেম্বারে যাই। তিনি কিন্তু একজন আইনজীবীও বটে। আমার সঙ্গে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন, সেখানে বাদী পক্ষের কেউ ছিল না। তবে অতিরিক্ত পিপি আকতারুজ্জামান বাহাদুর ছিলেন। সেখানে আমাদের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কথা হয়েছে।
এ মামলার বিষয়ে কোনো হুমকি রয়েছি কি না এমন প্রশ্নে মিন্নির আইনজীবী বলেন, আসলে আজকে আপনার কোর্টে উপস্থিত থেকে থাকলে বুঝতে পারছেন, আমার মধ্যে এরকম কোনো জড়তা ছিল কি না, আর এরকম কোনো চাপ থাকলে আমি আসতাম না। এ বিষয়ে দ্রুত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি মামলা করা হবে বলে জানান এ আইনজীবী।
রাতে এমপি শম্ভুর অফিসে মিন্নির আইনজীবী!
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন আলোচিত রিফাত হত্যাকান্ডের সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সংসদ সদস্য শম্ভুর বিরুদ্ধে মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করছেন শুরু থেকেই। তার সঙ্গেই আইনজীবীর এমন বৈঠকের সমালোচনা করেছেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। শনিবার রাতে বরগুনার সদর রোডের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যক্তিগত ল’ চেম্বারের পেছনের একটি কক্ষে আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামকে দেখা যায়। এ সময় তার সঙ্গে বরগুনা বারের সভাপতি আবদুর রহমান নান্টুও ছিলেন।
নিরাপত্তাহীনতায় মিন্নির পরিবার, ভয়ে স্কুলে যায় না ভাই-বোন
মিন্নিকে গ্রেফতারের পর মিন্নির বাবার বাড়ি থেকে পুলিশের ডিউটি পোস্ট উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার পরিবারের সদস্যরা। প্রভাবশালী মহলের ভয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে মিন্নির ছোট ভাই-বোন।
জানা যায়, মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের চার ছেলে মেয়ে। বড় মেয়ে ফাতিমা আক্তার মুনাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে বরগুনা পৌর শহরের কাঠপট্টি এলাকায়। এরপরই মিন্নি। ছোট মেয়ে সামিরা মেঘলা বরগুনার সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ও ছোট ছেলে আবদুল মুহিত কাফি বরগুনার কলেজ রোড এলাকার ক্যালিক্স একাডেমির কেজি-টু শ্রেণির ছাত্র। বোন মিন্নিকে গ্রেফতারের পর আতঙ্কিত ছোট ভাই-বোন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মিন্নির ছোট বোন সামিরা মেঘলা বলেন, আমরা ভয়ে আছি। আমার দুলাভাইকে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন বোনকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্কুলে যেতে ভয় লাগে। মনে হয় কেউ আমার ওপর হামলা করতে পারে।
মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন রিফাত শরীফের বাবা
বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও মিন্নির মা-বাবাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। গতকাল রোববার দুপুর দেড়টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি। এসময় রিফাতের মা, বোন, চাচা-চাচি ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের বাবা বলেন, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিনে-দুপুরে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে ‘০০৭’ গ্রুপের সদস্যরা। এ ঘটনায় আমি একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। প্রাথমিকভাবে যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সেখানে মিন্নির ভূমিকায় সবাই প্রশংসা করে। তাই আমি প্রাথমিকভাবে মিন্নিকে মামলার ১ নম্বর সাক্ষী করি। পরবর্তিতে এ ঘটনার আরও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ায় মিন্নির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এছাড়াও নয়ন বন্ডের মায়ের কথায় আরও প্রকাশ্যে আসে মিন্নির আসল চেহারা। এরপর আমি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে এই হত্যাকান্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাই। পুলিশও তাদের তদন্তে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতেই প্রতিয়মান হয় যে, মিন্নিই এই খুনের প্রধান পরিকল্পনাকারী।
এ সময় রিফাতের বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিন্নির মা-বাবা আমার কাছে তাদের মেয়ের বিয়ের বিষয়টি গোপন করে রিফাতের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। এই বিয়েই আমার ছেলের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মিন্নির মা-বাবাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এ সময় তিনি পুত্রবধূ আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান।
পুলিশ যেভাবে বলতে বলেছে সেভাবেই বলেছি, বাবাকে মিন্নি
রিফাত শরীফ হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশ যেভাবে বলতে বলেছে আদালতে সেভাবেই বলেছে মিন্নি। না বললে আরও ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হবে বলে হুমকি দেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শনিবার মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বরগুনা জেলা কারাগারের ফটকে মেয়ের সঙ্গে দেখা করে এসে সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন।
মোজাম্মেল আরও বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কী বলেছে, তা মেয়ের কাছে জানতে চেয়েছি। জবাবে সে বলেছে, পুলিশ যেভাবে বলতে বলেছে, জবানবন্দিতে সেভাবেই বলেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।