Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষিদ্ধ তবু চলছেই রিকশা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

নিষিদ্ধ তবুও অবাধে চলছে রিকশা। আইন না মানার এ সংস্কৃতির চাক্ষুস প্রমান কুড়িল-রামপুরা-মালিবাগ-সায়েদাবাদ সড়ক। কদিন আগেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, এ সড়কে রিকশা চলাচল করবে না। করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। অথচ বাস্তবতা একেবারে উল্টো। মোবাইল কোর্ট তো দুরের কথা, রিকশাওয়ালাদেরকে এই নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দেয়ার মতো যেন কেউ নেই। আগে ট্রাফিক পুলিশ বাধা দিতো, এখন রিকশা দেখেও না দেখার ভান করে। তাতে সেই পুরনো চিত্রই ফুটে উঠেছে ব্যস্ত এ সড়কে। এতে ক্ষুদ্ধ ভুক্তভোগি, যাত্রী, পথচারি সবাই। রামপুরা এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, আমরা এমন দেশে বাস করছি। মেয়র বলছেন নিষেধ-অথচ রিকশা চলছে পুলিশের চোখের সামনেই। তাহলে আমরা কি বুঝবো। রিকশা যদি চলবেই তবে মুখে বড় বড় কথা কেন? সবকিছু রাজনীতি দিয়ে বিচার করলে দেশ চলবে কেমনে?

মালিবাগে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, শুরুতে আমরা কঠোর ছিলাম। রিকশা চলতে দেইনি। কিন্তু একেক সময় একেক রকম কথা শুনছি। নীতিগত সিদ্ধান্তে গড়বড় হলে পুলিশ দিয়ে কি তা বাস্তবায়ন সম্ভব? তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ২২’শ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে মাত্র ২৫ কিলোমিটার সড়কে রিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা গেল না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। রিকশাওয়ালারা এখন পুলিশ দেখলে মুখ টিপে হাসে।

বাস চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, হাতেগোনা কয়েকদিন রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তখন এই রাস্তার চিত্র পাল্টে গিয়েছিল। যানজট ছিল না বললেই চলে। আমাদের ট্রিপও বেড়েছিল। এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। ছুটির দিনেও যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা রিকশার ভিড়ে বাসের গতি বাড়ানোই যায় না। তাতে সময় অনেক বেশি লাগে। তেলও বেশি খরচ হয়।

যানজট নিরসনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজধানীর প্রধান তিন সড়কে রিকশা ও ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কথা ছিল গত ৭ জুলাই থেকে। কিন্তু রিকশাচালক ও মালিকদের প্রতিবাদের মুখে তা আর কার্যকর হয়নি। বিশেষ করে কুড়িল-রামপুরা-মালিবাগ-সায়েদাবাদ সড়কে আগের মতোই রিকশা চলাচল করছে।

গতকাল শনিবার ওই সড়কের কয়েকটি স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে রিকশা-ভ্যান বন্ধে পুলিশ কিংবা সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ফলে নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত সড়কে অনেকটা দাপিয়েই বেড়াচ্ছে তিন চাকার এ বাহন।

এ নিয়ে পথচারি ও যাত্রীরা দারুন ক্ষুদ্ধ। তারা বলছেন, শুধু নিষেধাজ্ঞা দিলেই হবে না, তা বাস্তবায়ন করতে হবে সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে। কিন্তু তাদের কোনো টিমই মাঠে নেই। তাহলে কীভাবে বন্ধ হবে রিকশা ও ভ্যান?

তবে গাবতলী-নিউমার্কেট সড়ক অনেকটা ব্যতিক্রম। সেখানে আগের মতো রিকশা চলাচল করতে পারে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রতিদিনই গাবতলী-নিউমার্কেট সড়কে চলাচলকারী রিকশা আটক করা হয়। কোনো কোনো রিকশা উল্টে রেখে চালককে প্রতিজ্ঞা করানো হয়, আর সে প্রধান সড়কে রিকশা চালাবে না। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রশ্ন হলো, গাবতলী-নিউমার্কেট সড়কে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা গেলে রামপুরা সড়কে বহাল থাকবে না কেন?

রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে ও সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরিকল্পনা অনুসারে আগামী দুই বছরে রাজধানীর সব প্রধান সড়ক থেকে পুরোপুরি রিকশা উঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে গত ৩ জুলাই ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সভা শেষে রাজধানীর কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-নিউ মার্কেট ও শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাবরেটরি সড়কে রিকশা ও ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা ৭ জুলাই থেকে কার্যকর হবে জানিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে সড়কে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি। দিন যতো যাচ্ছে গণবিজ্ঞপ্তি ততোই চাপা পড়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগিরা জানান, দুই বছর আগেও একবার রামপুরা সড়কে রিকশা-ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। সে সময়ও রিকশাচালকদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটে সরকার। ভুক্তভোগিদের প্রশ্ন-তাহলে এবারও কি তাই হতে চলেছে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ