পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তি জবানবন্দি নেয়াকে একটি মহলের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এছাড়াও তার দাবি, ‘নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে ৫ দিনের রিমান্ড পূর্ণ না করেই । গত শুক্রবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় মিন্নিকে।
গতকাল নিজ বাসায় মিন্নি বাবা আরো বলেন, তার মেয়ের কিছু হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। অন্যদিকে মিন্নির পক্ষে আইনি লড়াই করবেন দেড়শ আইনজীবী। এছাড়া গতকাল শনিবার দুপুরে বরগুনা সদর থানার সামনে দাঁড়িয়ে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে রিফাতকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হচ্ছে তাই আমি খুশি। তবে যেদিন আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে সেদিনই আমি শান্ত হবো। ছেলে হারানোর ব্যথা সেই বোঝে যার ছেলে অকালে মারা যায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালত প্রাঙ্গণে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মেয়ের কাছ থেকে সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সঙ্গে মিন্নি কোনোভাবেই জড়িত নয়। মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই কি তার অপরাধ? এর পর তিনি অভিযোগের তীর ছোড়েন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দিকে।
তিনি বলেন, এসব কিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে বাঁচানোর জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে। জবানবন্দির পর আদালত থেকে বের করে ছোট পিকআপে তোলার সময় মিন্নি কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্য এ সময় তার মুখ চেপে ধরেন। ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবে শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। হত্যাকান্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হলো। এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমি আইনি লড়াই করে সত্যটা বের করব ইনশাল্লাহ।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার ছেলের ওপর মিন্নির বাবার এমন গুরুতর অভিযোগ বিষয়ে শম্ভু দেবনাথের ছেলে সুনার গণমাধ্যমকে বলেন, মিন্নির বাবা কী বলছে, আমি সেটা জানি না। তবে এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ও অমূলক। এ বিষয়ে আমি কিংবা আমার পরিবারকে পেঁচিয়ে মন্তব্য করা মূর্খ লোকের কাজ। তবে আমার যেটা মনে হচ্ছে, আমাদের বিরোধী চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
শনিবার সকালে বরগুনা শহরের নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মিন্নির বাবা বলেন, দেশবাসী শুনে রাখেন, আমার মেয়ের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করমু। আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। মিন্নি নির্দোষ। প্রশাসনের লোকেরা শোনেন, আপনারা সঠিক তদন্ত করেন তাহলে রিফাত হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
মিন্নির পক্ষে লড়বেন দেড়শ আইনজীবী
মিন্নির পক্ষে আইনি লড়াই করবেন েেদড়শ আইনজীবী। গতকাল একাধিক আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে প্রথমেই ঘোষণা দিয়েছেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনিসহ ঢাকা আইনজীবী সমিতির ৪০ জন আইনজীবী ঢাকা থেকে বরগুনা আদালতে শুনানির জন্য যাবেন। এছাড়া অন্যান্য সংস্থার আইনজীবীরাও যাবেন বলে জানা গেছে। মিন্নিকে আইনি সহায়তা দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বøাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), নিজেরা করি, এএলআরডিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও প্রায় একশ আইনজীবী বরগুনায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেডআই খান পান্না জানান, মিন্নিকে আইনি সহায়তার জন্য তার সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রায় শতাধিক আইনজীবী বরগুনায় যাবেন।
আরেক আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ঢাকা থেকে আমরা ৪০ জন আইনজীবী বরগুনায় যাব। এখন যেহেতু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি হয়ে গেছে। এ মামলার পরবর্তী ৩১ তারিখ জুলাই। ওইদিন আমরা যাব
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ বলেন, আমরা মূলত মিন্নিকে আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য ঢাকা থেকে এখানে এসেছি। আমরা মিন্নির বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। একজন আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলেছি আমরা। আমরা মিন্নিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের টিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। রোববার আদালতে মিন্নির জামিনের জন্য আমি দাঁড়াব। একই সঙ্গে মামলার শুনানিতে অংশ নেব আমরা। আমাকে সহযোগিতা করবেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র থেকে আসা টিমের সদস্যরা।
যেদিন ছেলের আত্মা শান্তি পাবে সেদিনই শান্ত হবো
শনিবার দুপুরে বরগুনা সদর থানার সামনে দাঁড়িয়ে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, আমার ছেলে রিফাতকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হচ্ছে তাই আমি খুশি। তবে যেদিন আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে সেদিনই আমি শান্ত হবো। ছেলে হারানোর ব্যথা সেই বোঝে যার ছেলে অকালে মারা যায়।
রাজনৈতিকভাবে আপনি প্রভাবিত হচ্ছেন কি না’ এমন প্রশ্নের জবাবে দুলাল শরীফ বলেন, ছেলে হারানোর শোকে আমি কাতর, রাজনৈতিক প্রভাব এখানে আসলো কোথা থেকে। ছেলে হত্যার বিচার পেলেই আমি খুশি।
অন্যদিকে বরগুনর এসপি মো. মারুফ হোসেন জানান, এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ১৩ জন অভিযুক্ত রিফাত হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ মামলার দুজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছে। আর এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যার সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি সারাদেশে আলোচনায় উঠে আসে। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় মিন্নিকেই।
দায় স্বীকার করে আরও একজনের জবানবন্দি
চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রিফাত ফরাজীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ৭ জনসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।