Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বুুলেট সাংবাদিক চিনে না’

মেহেদী হাসান মুরাদ, কুবি থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মরত সাংবাদিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি ও লাঞ্চিত করেছেন শাখা ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল এবং মো. রাইহান ওরফে জিসান। গত শুক্রবার রাত দশটায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার পৌনে দশটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়েব হাসান হিমেল সাংবাদিকদের উদ্যেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে কেন এসেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।

সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল পুনরায় করে বলেন, ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চিনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।’ এ সময় তার সঙ্গে থাকা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাইহান ওরফে জিসান বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য দলবলে তেড়ে আসেন। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ শাখার সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করা চেষ্টা করেন।

সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, ‘আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কোন অস্ত্র ছিল না।’ আরেক নেতা জিসানকে ফোন দেয়া হলেও পাওয়া যায়নি।

এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন হিমেল। এছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হিমেল ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০২ নং কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবনে মেতে থাকেন। হলে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হিমেল তার অনুসারীদের নিয়ে নিয়মিত আসর বসান। তার কক্ষের সামনে দিয়ে হাটলেও নেশাজাতীয় দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়।’ এদিকে এ ছাত্রলীগ নেতা গত ১০ এপ্রিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সিনিয়র এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন এবং তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ নিয়ে ১৪ এপ্রিল ছাত্রলীগ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তার বিরুদ্ধে ‘অজানা’ এক কারণে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসানের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নাম্বার কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে আসর বসান। হলের সিনিয়র নেতা কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদকসেবী এ নেতা গেল সপ্তাহে বণিক বার্তার বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে ‘মইরা গেলে কবরে গিয়া হইলেও দুইডা কোপ দিয়া আসমু’ বলে হুমকি দেন।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি বা লাঞ্ছিত করলে তাদের দায় ছাত্রলীগ নিবে না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া ছাত্রলীগের আদর্শবিরোধী।’

প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর পরও সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী এবং বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সাথে যারা অছাত্রসূলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নিব। শুধু প্রক্টর হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ