পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপগুলো। তাদের হাতে একের পর এক হত্যাকান্ডসহ নানা ধরনের নৃশংস অপরাধ ঘটছে। কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধীদের কম বয়স ও অতীত অপরাধের তথ্য না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না। রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় কিশোরদের ৫০টি গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এই গ্যাং গ্রæপের সদস্যরা এলাকার আধিপত্য বিস্তার, স্কুল-কলেজে র্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাই, উচ্চ শব্দ করে মোটরসাইকেল বা গাড়ি চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, অশ্লীল ভিডিও শেয়ার করাসহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করা এবং এলাকার নিরীহ ও মেধাবী যুবক-কিশোরদের চাপে রেখে জোরপূর্বক দলে আসতে বাধ্য করে। গ্যাংগুলোর নিজস্ব লোগো রয়েছে যা দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ওই কিশোরদের দখলে রয়েছে দেশীয় অস্ত্র। হাতের নাগালের মধ্যে থাকা এসব অস্ত্র সস্তা ও বহনেও সুবিধাজনক। তাই আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এটি এখনই থামাতে না পারলে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে আশঙ্কা তাদের। ছুরি, কাঁচি, হাঁসুয়া, চাপাতি, কুড়াল, দা, বঁটি, বল্লম, তীর ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে পড়ে। এর বাইরে লাঠি, ঠ্যাঙ্গাও দেশীয় অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়, যদি তা দিয়ে মানুষের জীবননাশের হুমকি থাকে। গ্যাং গ্রুপ কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে মূলত পশ্চিমা চলচ্চিত্র অনুসরণ করে গ্যাং চালানো এবং সেসব সিনেমা বেশি দেখছে।
অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু গ্রেফতারসহ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে এসব কিশোরকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের মা-বাবাকে সচেতন করা জরুরি। পাশাপাশি এসব কিশোরকে কাউন্সেলিং করাতে হবে। সামাজিকভাবেও এদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশে এই গ্যাং কালচার তৈরি হতে দেখা গেছে। যাকে আইনের ভাষায় বলা হয় জুভেনাইল সাব-কালচার। অনেক সময় বঞ্চনা থেকে কিশোরদের মধ্যে এমন দল গড়ে ওঠে। আবার কোথাও কোথাও বীরত্ব দেখাতেও ছেলেরা ‘মাস্তানি’তে যুক্ত হয়। পাড়ায়-মহল্লায় আগেও এমনটা হতো। এখন সেটার সহিংস রূপ দেখতে পাচ্ছি।
অপরাধ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদার করা। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন মহল্লায় উঠান বৈঠক করা। কোনো কিশোর গ্যাং বা ছোট অপরাধে জড়িত হওয়ার তথ্য পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত তার মা-বাবা ও অভিভাবকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের বোঝানো। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে কিশোরদের অপরাধের জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনা।
রাজধানী এবং এর আশপাশে কিশোর-তরুণদের ৫০টি গ্যাং শনাক্ত করা গেছে। তারা ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় পাঁচটি, উত্তরখানে তিনটি, দক্ষিণখানে পাঁচটি, আশুলিয়া ও তুরাগ এলাকায় পাঁচটি, ধানমন্ডিতে তিনটি, পুরান ঢাকার বংশাল-চকবাজার এলাকায় পাঁচটি, ডেমরা এলাকায় কমপক্ষে তিনটি, তেজগাঁওয়ে দু’টি এবং কাফরুল, মোহাম্মদপুর, নিউ মার্কেট, কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও এলাকায় একটি করে গ্রুপ সক্রিয় আছে। প্রতিটি গ্রুপে ১০ থেকে ১৫ জন কিশোর অপরাধী রয়েছে। দক্ষিণখানে গ্যাং লিডার শাহীন ও রিপনের নেতৃত্বে একটি, উত্তরখান থানার বড়বাগের নাজিমউদ্দিন গ্রুপ, আটিপাড়ার শান্ত গ্রুপ, খ্রিষ্টানপাড়ার সোলেমান গ্রুপ, আটিপাড়ার মেহেদী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। মিরপুর ১২ নম্বরে সক্রিয় কিশোর গ্যাং ‘বিচ্ছু বাহিনী’। মিরপুর ১১ নম্বর বি-বøকে সক্রিয় বিহারি রাসেলের গ্যাং, ১২ নম্বরের সি-বøকে সাব্বির, ডি-বøকে গ্যাং বাবু ও রাজন, চ-বøকে রিপন, ধ-বøকে মোবারক গ্রুপ সক্রিয়। এদের অধিকাংশই পল্লবী থানার তালিকাভুক্ত কিশোর অপরাধী।
মিরপুর থানায় তালিকাভুক্ত কিশোর অপরাধীদের মধ্যে রয়েছে মুক্তার, মিন্টু, মন্টু, রেজু, শাহিন, বাহেন, পাইলট, বাচ্চু, এলিন, জাফর, লেংড়া তাজ, উঁচা বাবু, জনি, মতিন, মাইনুদ্দিন ও আলমাস। এসব কিশোর অপরাধীর মধ্যে স্কুলছাত্র ও পথশিশুও রয়েছে। কাফরুলের ইব্রাহিমপুর এলাকার কিশোর সন্ত্রাসীদের অন্যতম হচ্ছে নয়ন গ্রুপ। তার গ্রুপে পুলিশ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী চামাইরা বাবু, রাসেল ওরফে বোটকা রাসেলসহ ১০ থেকে ১২ সন্ত্রাসী। এদের মধ্যে প্রায় আটজন মিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২০-এর মধ্যে।
ওই সূত্রে আরো জানায়, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কাজ করে কিশোর গ্যাং ‘মিশন গ্রুপ’। এই গ্রুপে কলেজের ছাত্র হারুনুর রশিদ খান, মইনুল ইসলাম ও জাহিদ রয়েছে। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় রয়েছে গ্রুপ টুয়েন্টিফাইভ। এই গ্রুপের সদস্য প্রায় ১০। এই গ্রুপে আরিফ হোসেন, তাজুল ইসলাম, রুবেল, এনামুল হক, শামছুল হক। এরা একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সাথেও জড়িত। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ‘নাইন এম এম’, ‘একে ৪৭’ ও ‘ফাইভ স্টার’ নামে তিনটি কিশোর গ্রুপ সক্রিয়। তেজগাঁও রেলওয়ে কলোনি ও কুনিপাড়া এলাকায় ১০-১২ জনের একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে মাইনউদ্দিন। তুরাগ থানার পাকুরিয়া, আহালিয়া, বাউনিয়া ও দলিপাড়া এলাকায় ১৫ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয়। এই গ্রুপে রাজু, গিট্টু, ইমন, ককটেল গাজী, হানিফ, চায়নিজ সোহান, পলিথিন বাবু। পুলিশের খাতায় তাদের নাম ‘তালাচাবি গ্রুপ’ বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তরায় ‘পাওয়ার বয়েজ’, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার, নিউ নাইন স্টার ও ‘নাইন এম এম বয়েজ’সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।