পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শাখাওয়াত হোসেন বাবুল (৫০) শখের বশে খুলনার একটি সরকারি উদ্যান থেকে ২০টি মালটা চারা কিনেছিলেন। সেই চারা বদলে দিয়েছে তার নিজের জীবন। পরিবারে এনেছে সুখের বারতা। তিনি কলম তৈরি করে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গায় ৪০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন চার হাজার গাছের বিশাল মালটা বাগান।
কৈশোর থেকেই গাছ লাগানোর নেশা শাখাওয়াতের। অপ্রচলিত বা নতুন কোনো ফল, ফুল বা ঔষধি গাছের সন্ধান পেলেই সংগ্রহ করে লাগাতেন। পরিত্যক্ত জমিতে এবং সরকারি রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগিয়েছেন বছরের পর বছর। গাছ লাগানোর নেশা পিছু ছাড়েনি তার। বৈচিত্রপূর্ণ গাছের সন্ধান পেলেই এখনও ছুটে যান এবং চারা সংগ্রহ করে লাগিয়ে থাকেন।
পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যু কেন্দ্রের কর্মচারী শাখাওয়াত হোসেন ২০১৩ সালে খুলনায় পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত অবস্থায় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বেড়াতে যান। টসটসে রসালো মালটার স্বাদে তিনি মুগ্ধ হন। এরপর সেখান থেকে বারী-১ জাতের ২০টি মালটা চারা সংগ্রহ করে গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার ভগিরথপুরে নিয়ে লাগান।
২০১৫ সালে সবকটি গাছে ফল ধরলে তা দেখতে আশপাশের লোকজন ভিড় করেন। এরপর এসব গাছ থেকে ডাল কলম তৈরির পর পরিকল্পিতভাবে মালটা চাষে নামেন শাখাওয়াত। প্রথমেই ২০ বিঘা জমি বন্দোবস্ত নিয়ে মালটার বাগান তৈরি করেন। পরের বছর তা ৪০ বিঘায় উন্নীত করেন। বাগানের পরিচর্যা ও মালটা বিপণনের জন্য পাঁচজন কর্মী কাজ করছেন।
শাখাওয়াত জানান, বাগান তৈরি ও পরিচর্যার জনবল খরচ হিসেবে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে মালটা ফল ও চারা বিক্রি করে অর্ধেকের বেশি টাকা উঠে গেছে। চলতি বছর পুরো খরচের টাকা উঠে অন্তত ১০ লাখ টাকা লাভ থাকতে পারে। আশা করছেন পরবর্তী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য খরচ না থাকলেও প্রতি বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা উপার্জন হবে।
শাখাওয়াতের বিশাল মালটা বাগানে স¤প্রতি সরেজমিনে দেখা যায় গাছে গাছে থোকায় সবুজ রঙের মালটা ঝুলছে। বাতাসে তালে তালে দোল খাচ্ছে মালটাগুলো। শাখাওয়াত জানান, গাছে ঝুলন্ত থোকায় থোকায় মালটাগুলো তার কাছে স্বপ্ন। গত বছর বড় বড় গাছে পরিপূর্ণ ফল ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০। চলতি বছর কোনো কোনো গাছে ফলের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
২০১৭ সালে প্রথমবার বাগানের ফল ধরে এবং ১০০ মণ মালটা বিক্রি করা হয়। গত বছর বিক্রি করা হয় আরো ১৫০ মণ। চলতি বছর যে পরিমাণ ফুল এবং ফল এসেছে তাতে ভরা মৌসুমে ৫০০ মণ এবং অমৌসুমে (অফসিজনে) আরো ১০০ মণ মালটা উৎপাদন হবে।
গত বছর পাইকারি প্রতি মণ তিন হাজার ২০০ টাকা (৮০ টাকা কেজি) ও অমৌসুমে প্রতিমণ সাত হাজার ২০০ টাকা (১৮০ টাকা কেজি) দরে বিক্রি করা হয়েছিল। দেড় থেকে দুই মাস পর মালটা বিক্রির উপযোগী হবে। একই দাম থাকলেও এবার মৌসুমে ১৬ লাখ এবং অমৌসুমে আরো সাত লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ফল বিক্রি করা সম্ভব হবে।
মালটা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে লাগানো গৌঢ়মতি আম, উন্নতজাতের কুল ও পেঁপে গাছ রয়েছে। সাথী ফসল হিসেবে মুগ-কলাই, মরিচ ও শাকের চাষ করেছেন। এছাড়া বাগানের নার্সারীতে মালটা ছাড়াও উন্নতজাতের পেঁপে ও পেয়ারার চারা উৎপাদন করা ও বিক্রি করা হয়। এসব থেকেও বাড়তি আয় হয়ে থাকে।
দেশের সবচেয়ে বড় এই মালটা বাগান দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটনপ্রেমী লোকজন ছুটে আসেন। অনেকেই পরিবারসহ এসে বাগান ঘুরে দেখে ছবি তোলেন। গাছ থেকে সবুজ অথচ টসটসে রসে ভরা মালটা পেড়ে খান এবং যাওয়ার সময় কিছু কিনে নিয়ে যান। অনেকেই মালটার পাশাপাশি কয়েকটি চারাও কিনেন। শাখাওয়াত জানান, সারাদেশে এই চাষ ছড়িয়ে যাক। তাহলে বিদেশ থেকে আর ফল আমদানি করা লাগবে না। মালটা চাষের মাধ্যমে দেশের কৃষি অর্থনীতি চাঙা হবে।
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের কথায়, দেশের সবচেয়ে বড় মালটা বাগানের গর্বিত মালিক শাখাওয়াত। তার উদ্যোগ ও সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষিত যুবকরা মালটা উৎপাদনে এগিয়ে আসছেন। সাধারণ কৃষকরা সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামিউর রহমান জানান, দেশে বর্তমানে ফলের বিশাল বাজার রয়েছে। ফলমূল তুলনামূলকভাবে শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি নারী এবং রোগীরা খেয়ে থাকেন। কিন্ত, যেসব ফল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় তা উৎপাদন ও সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। অপরদিকে শাখাওয়াত জৈব সার ও বালাইনাশক এবং ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে নিরাপদ উপায়ে মালটা উৎপাদন করছেন। কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, মালটা একটি উচ্চমূল্যের ফল। যার বাণিজ্যিকিকরণ ও স¤প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।