পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশকে ভালবাসার পাশাপাশি দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে সবসময় ভালবাসবে। দেশের মানুষকে ভালবাসবে এবং দেশকে গড়ে তোলার জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের জীবনকে যেমন সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে, পাশাপাশি এই দেশকেও গড়ে তুলবে। এই চিন্তা-চেতনা যেন সবসময় তোমাদের মাঝে থাকে। গতকাল গণভবনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দেশব্যাপী সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০১৯’র জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচিত ১২ জন সেরা মেধাবীকে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
এর আগে এ বছর ২০১৯’র এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মণি। ভাষা ও সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ-এই ৪টি ক্যাটাগরিতে এবং তিনটি গ্রুপে ১২ জন মেধাবীকে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৯ সালের সেরা মেধাবী ১২ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে পুরস্কার স্বরূপ সনদপত্র, মেডেল এবং এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। দেশের সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে মোট ১২ জনকে বছরের সেরা মেধাবী নির্বাচন করা হয়। পুরস্কার বিজয়ী মেধাবী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী পারশিয়া নাওয়ার অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা হচ্ছে এক ধরনের আলো। যা মানুষকে বিকশিত হবার সুযোগ দেয়। সে আলো থেকে যেন এদেশের কোন ছেলে-মেয়ে বঞ্চিত না হয়। সেটাই আমাদের লক্ষ্য এবং এই লক্ষপূরণে নানা নীতিমালাও আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
বর্তমান যুগকে বিজ্ঞানের যুগ এবং বিজ্ঞার চর্চা এবং গবেষণা ছাড়া আজকের দিনে কোনকিছুই অর্জন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে সেটা আমাদের গবেষণার ফসল। যে কারণে গণিত ও কম্পিউটার শিক্ষার ওপর আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি।
পুরস্কার বিজয়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা আজকে যারা পুরস্কার পেয়েছ তোমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তোমরাই এদেশকে একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন একটা স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের মর্যাদা নিয়ে চলার মানসিক শক্তি পায় এবং তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ হয়। সৃজনশীলতা যেন তাদের মাঝে আরো গড়ে ওঠে, সেইদিকে দৃষ্টি রেখেই আমাদের সকল কার্যক্রম।
‘আমরা বিজয়ী জাতি’ এই বিষয়টি মাথায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই সেই বিজয়ী জাতি হিসেকে বিশ্ব দরবারে আমরা সবসময় মাথা উঁচু করেই চলবো। এক সময় বিশ্বে বাংলাদেশকে নানা বিষয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা হলেও আজকে আর সেই দিন নেই উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এখন বাংলাদেশকে সবাই বলে, বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের বিস্ময়কর মডেল। বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি আরো বলেন, কিন্তু এই ধারাবাহিকতা অবাহত রাখতে হবে। আর সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে সোনার ছেলে-মেয়ে দরকার তোমরাই হবে আগামীর দিনের সোনার ছেলে-মেয়ে।
ফলাফল যথেষ্ট ভালো
এর আগে ২০১৯’র এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফলাফলের প্রশংসা করে বলেন, ৭৩ দশমিক ৯৩ ভাগ পাস করেছে। এটা যথেষ্ট ভাল এবং গ্রহণযোগ্য ফল। আমি মনে করি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীরা আরো মনোযোগী হলে তারা আরো ভাল ফল করতে পারবে, সেটা আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মাত্র ৫৫ দিনে ফল প্রকাশ করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। ছাত্রীদের পাসের হার বেশি হওয়ায় জেন্ডার সমতার কথাটি স্মরণ করিয়ে ছাত্রদেরও পাসের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী । তিনি বলেন, ছাত্রদের পাসের হারটা বাড়াতে হবে, যাতে জেন্ডার সমতাটা এসে যায়।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, একটি শিক্ষিত জাতি পারবে একটি দেশকে ক্ষুধা ও দরিদ্র্যমুক্ত করে উন্নত-সমৃদ্ধভাবে গড়ে তুলতে। বাংলাদেশ আজ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের একটি রোল মডেল এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং উন্নয়নের এই গতিধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
বেনাপোল এক্সপ্রেসের উদ্ধোধন
আগামীতে আমাদের দেশে রেল যোগাযোগ খাতে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে বেনাপোল এক্সপ্রেসের উদ্বোধন ও বনলতা এক্সপ্রেসের রুট বাড়ানোর ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আশা প্রকাশ করেন। এদিন ভিডিও কনফারেন্সে ট্রেন দুটোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। এখন আমাদের বিদ্যুৎ ১৬০০০ হাজার মেগাওয়াট। আগামীতে আমাদের দেশে বিদ্যুৎচালিত দ্রæতগতির ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এর মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়বে, পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি হবে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি হবে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তো এই খাতটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর আমরা আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিয়েছি যেন মানুষ রেলের সেবা পেতে পারে। এখানে আলাদা বাজেট করে রেল যোগাযোগ খাতটিকে মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
বেনাপোল এক্সপ্রেসের উদ্বোধন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-বেনাপোল রুট অনেক লম্বা। ট্রেনে যেতে হয় ৩৭০ কিলোমিটার। আমরা পদ্মা ব্রিজ করছি। পদ্মা ব্রিজে রেলসেতু দিচ্ছি। পদ্মাসেতুর মাধ্যমে ফরিদপুরের ভাঙ্গাকে ফরিদপুর হয়ে যশোরের সঙ্গে লিঙ্ক করে দেব। এতে যাত্রাপথের দূরত্ব কমে যাবে, সময়ও কমে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজশাহীবাসীর অনেকদিন দাবি ছিল, ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে দেওয়া। আমরা সেটি করে দিচ্ছি। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক আমাদের রেল লাইনকে নতুন জীবন দানে সহায়তা করেছে। পুরনো ব্রিজগুলো নতুন করা দরকার। পাশাপাশি উপযুক্ত লোকবল আমাদের তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক মান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন দেশ। আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর ওপর ন্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই একটি স্বাধীন দেশের উপযুক্ত সশস্ত্র বাহিনী যেটা জাতির পিতা গড়ে তুলেছিলেন, তাকে আরও উন্নতমানের এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা সবসময় আমাদের রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট গার্ডস রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকালে ঢাকা সেনানিবাসে রেজিমেন্ট সদরদপ্তরে শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে ইতোমধ্যে সেনানিবাসে একটি ইনডোর পিন্তল ফায়ারিং রেঞ্জের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, পিজিআর’এ আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) সংযুক্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে পিজিআর সদরদপ্তরে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পিজিআর কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম তাকে স্বাগত জানান। এ সময় দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী পিজিআরের বীর সদস্যদের পরিবারবর্গের মাঝে অনুদান এবং উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।