Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিমিষেই তছনছ পুলিশ দম্পতির সংসার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

দেশের সেবার করার ইচ্ছে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া মিকেল (৩১)। সার্জেন্ট হিসেবে বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ সার্জেন্ট হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন এই কর্মকর্তা। যে মানুষটি নিজের ঘাম ঝড়িয়ে তপ্ত রোদে শৃঙ্খল নগর উপহার দিয়েছেন বরিশালবাসীকে অথচ সেই মানুষটিকেই মরতে হয়েছে কাভার্ডভ্যানের চাপায়।

গত সোমবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালনকালে যমুনা গ্রুপের একটি কাভার্ডভ্যানের চাপায় গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হলে ঢাকা মেডিক্যাল কালেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার মারা যান তিনি। নিহত মিকেলের বাড়ি পটুয়াখালিজলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবা স্থানীয় সুবিদখালী কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলেন তিনি। মিকিলেরর মৃত্যুতে নিমিষেই তছনছ হয়ে গেল এক পুলিশ দম্পতির সাজানো সংসার।

এদিকে, কাজ পাগল এই মানুষটির অকাল মৃত্যুতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বন্ধু ও সহকর্মীসহ পুলিশ বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গতকাল বিকেলে এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তন মাঠে জানাজা শেষে বরিশালের পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। বরিশাল পুলিশ লাইন মাঠে জানাজা শেষে লাশ মির্জাগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই দাফন করা হবে দেশপ্রেমিক কাজ পাগল এই মানুষটিকে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা ১টার দিকে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাভার্ডভ্যান চাপায় গুরুতর আহত হন গোলাম কিবরিয়া। প্রথমে তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সেই লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গতকাল ১১টা ৫৮ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বরিশাল পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকা থেকে বাকেরগঞ্জগামী যমুনা গ্রুপের একটি কাভার্ডভ্যান কিবরিয়াকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে নলছিটি থানা পুলিশ চালক জলিল সিকদারসহ ভ্যানটিকে আটক করে। ঘাতক এই চালকের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায়।

গতকাল ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে এক হৃদয়বিদারক অবস্থা চোখে পড়ে। পরিচিত ও স্বজনদের কান্নায় হাসপাতালে আসা অন্যান্য রোগীদের স্বজনরাও চোখে পানি ধরে রাখতে পারেননি। বন্ধু ও সহকর্মীরা তার স্মৃতিচারণ করে অঝোরে কাঁদতে ছিলেন।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে মিকেলের সহপাঠী কৌশিক আল মামুন বলেন, সব সময় ভীষণ হাসিখুশি প্রাণখোলা ছেলে ছিলো মিকেল। কখনো কারো সাথে দ্ব›েদ্ব জড়ায়নি। এছাড়া খুব অতিথিপরায়ণও ছিলো।
কিবরিয়ার ব্যাচমেট সার্জেন্ট টুটুল বলেন, মাত্র এক মাস আগে ‘জুনিয়র কিবরিয়া’র বয়স দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। জন্মদিন পালনের সময় বাবার সঙ্গে অনেক আনন্দ করেছে। কিন্তু, এখন কী হবে! আমরা সে জন্মদিনে গিয়ে কিবরিয়া ও তার পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করেছি, খাওয়া-দাওয়া করেছি। এর কয়েকদিন পরেই ছেলেসহ সবাইকে একা করে না ফেরার দেশে চলে গেল কিবরিয়া।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সুবিধখালী রহমান ইসহাক পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সুবিধখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ১৯ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ২০১৫ সালে সার্জেন্ট হিসেবে বিএমপিতে যোগদান করেন তিনি। তিন বছর আগে মৌসুমি নামে এক নারী সার্জেন্টকে বিয়ে করেন। ওহী নামে দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে এ দম্পতির।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ