পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রংপুরের ছাওয়াল সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের চতুর্থ নামাজে জানাজা আজ রংপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রিয় নেতার জানাজায় শরীক হতে লাখ লাখ লোক মুখিয়ে রয়েছেন। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম থেকে মানুষ এরশাদকে এক নজর দেখতে রংপুর শহরমুখী হয়েছেন। জানাজার পড়ার প্রস্তুতি হিসেবে বিশাল মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণ, মাইক সংযোগ স্থাপন, মাঠ পরিষ্কারসহ সবকিছুই প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু প্রিয় মানুষটির জন্য প্রতীক্ষা।
এইচ এম এরশাদ প্রতিবছর ঈদুল আজহায় রংপুরে নামাজ আদায় করতেন। কোরবানীও করতেন রংপুরেই। গত কয়েক বছর ধরেই ঈদুল আযহার নামাজের পূর্বে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে কথা বলতেন এরশাদ। সবার কাছে দোয়া চাইতেন। গত ঈদুল আজহায় নামাজের সময় এরশাদ দোয়া চেয়ে বলেছিলেন, এটাই হয়তো আমার শেষ, আসা। আর হয়তো কোনদিন এভাবে আপনাদের মাঝে এসে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবো না’। অবশেষে তার কথাই সত্যি হলো। ওভাবে আর এবার ঈদের নামাজে মাঠে আসতে পারছেন না রংপুরের মানুষের নয়নের মনি এরশাদ। ঈদের এক মাস আগেই একই মাঠে আসছেন, কিন্তু একেবারেই অন্যভাবে। নিরব, নিস্তব্ধ হয়ে। কারও সাথে কথাও বলতে পারবেন না, দোয়া চাওয়া কিংবা কোলাকুলিও করতে পারবেন না। শেষ বিদায় নিতে আসছেন তিনি। জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, এরশাদকে বিদায় জানাতে জানাজায় শরীক হবো; তবে রংপুরের তার দাফন করা হবে।
হেলিকপ্টারে করে আজ সাবেক এই প্রেসিডেন্টের লাশ রংপুরে আনা হবে। বাদ জোহর রংপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তার চতুর্থ জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রংপুরের সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। প্রিয় নেতা এরশাদকে দেখতে এবং শেষ বিদায় জানাতে অধীর আগ্রহে আছেন রংপুরের এরশাদ ভক্তরা। দলীয় নেতা-কমী ও সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষ শেষবারের মত প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখে শেষ বিদায় আর শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত। ইতিমধ্যে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে জানাজার নামাজ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। প্যান্ডেল নির্মাণ, মাইক সংযোগ স্থাপন, মাঠ পরিষ্কারসহ সবকিছুই প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন শুধু প্রিয় মানুষটির জন্য প্রতীক্ষা। এর আগে গত রোববার সকালে তার মৃত্যুর পর দুপুর থেকেই রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলার প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে বিরামহীনভাবে চলছে তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার। শোক প্রকাশ করে চলছে জানাজায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে চলছে মাইকিং। পাড়া-মহল্লার মসজিদ মাদরাসাগুলোতে এরশাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে চলছে দোয়া মাহফিল ও কোরআন খতম। জাতীয় পার্টির দলীয় কাযালয়সহ নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মাইকে কোরআন তেলায়াত প্রচারের পাশাপাশি শোক প্রকাশ করে ব্যানার ফেস্টুন সাটানো হয়েছে রাস্তায় রাস্তায়।
এদিকে ঢাকার সেনা কবরস্থানে এরশাদের দাফন করার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীসহ রংপুরবাসী চাইছেন রংপুরেই হোক এরশাদের শেষ ঠিকানা। রংপুরের ‘ছাওয়াল’ রংপুরেই থাকবে এটাই এরশাদ প্রিয় রংপুরবাসীর চাওয়া। জীবন দিয়ে হলেও এরশাদকে রংপুরে দাফন করার ঘোষণা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এজন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ এরশাদ ভক্ত উত্তরাঞ্চলের জনগনকে প্রয়োজনে আন্দোলনে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার নেতৃবৃন্দের এক জরুরী সভা থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর জাপার সভাপতি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় দুই বিভাগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থেকে এ ব্যাপারে তাদের ঐক্যমত পোষণ করেন।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় পার্টিকে দাবিয়ে রাখতে ও সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে কেন্দ্রের গুটি কয়েক নেতা এরশাদের দাফন নিয়ে রাজনীতি করছেন। তাদের এই অপ-রাজনীতি মেনে নেয়া হবে না। আমরা এরশাদ স্যারের সমাধি জাতীয় তিন নেতার সমাধির পাশে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ওনারা জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব বিলীন করতে সামরিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করতে চান। যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। এটা ষড়যন্ত্র। এরশাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা আদর্শকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। সামরিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত দলের কেউই মানে না। আমাদের প্রিয় নেতাকে আমরা যে কোন মূল্যে রংপুরের মাটিতেই দাফন করব।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, এরশাদ স্যারকে জাতীয় নেতার মর্যাদা দিয়ে সমাহিত করা হলে আমরা মানতাম। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। স্যারের লাশ ও দাফন নিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করব, আপনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আপনি জনগণের আকুতি বুঝেন। জনগণের চাওয়া-পাওয়া দাবি কি তা বুঝেন। প্রধানমন্ত্রী আপনি বলে দিন আমাদের সন্তানকে রংপুরের মাটিতে সমাহিত করার জন্য। তিনি আরো বলেন, যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হয়, তাহলে রংপুর থেকে এরশাদের লাশ কোনভাবেই নিয়ে যেতে দেয়া হবে না। কেউ যদি অপচেষ্টা চালায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে তা প্রতিহত করবে। আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত। তবুও রংপুরের মাটিতে ‘পল্লী নিবাস’-এ স্যারের দাফন করা হবে। রংপুরের মানুষের আবেগ ভালোবাসা নিয়ে রাজনীতি করলে কি হয়, তা লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে স্যারের জানাজায় তা প্রমাণ করা হবে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস.এম ইয়াসিরের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক সংসদ সদস্য সাহানারা বেগম, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রশিদ, রাজশাহী জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল ফারুক, পঞ্চগড় জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু সালেক, দিনাজপুর জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুবেল, রংপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, জয়পুরহাট জেলা সভাপতি তিতাস মোস্তফা, ঠাকুরগাঁও জেলা সদস্য সচিব আলী রাজী স্বপন, নীলফামারীর সদস্য সচিব শাজাহান প্রমুখ।
এরশাদের কবর খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন
রংপুরের দর্শনা মোড়ে অবস্থিত সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নিজ বাসভবন পলী নিবাস। সেখানেই এরশাদের কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কবর খোঁড়ার কাজ চলছিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার নেতৃবৃন্দের জরুরী সভা শেষে এই কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। রংপুর মহানগরের সভাপতি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা নিজে উপস্থিত থেকে কবর খোড়ার কাজ তদারকি করেন। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।