Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজস্ব আদায়ে তৃণমূলে কমিটি চান ডিসিরা

শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয় সজাগ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

স্থানীয়ভাবে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডিসি-ইউএনওদের নেতৃত্বে কমিটি চেয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। ডিসিদের এই প্রস্তাবকে সরকার ভালো প্রস্তাব হিসেবই দেখছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয় সজাগ দৃষ্টি রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

গতকাল সোমবার সকালে সচিবালয়ে ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, অর্থ বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগের কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা।

মসিউর রহমান বলেন, ডিসি সাহেবদের প্রস্তাব ছিল জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা ডিসি এবং ইউএনওদেরকে নিয়ে। তাহলে তারা আয়কর বাড়াতে সহায়তা করতে পারেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, এটা ভালো প্রস্তাব বলে তারা মনে করেন। তবে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের আগে এর ভেতরে ডিটেইল কী আছে তা তাদের স্পষ্ট করে জানা দরকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার যে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ধরে এগোচ্ছে, সেখানে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে সরকার আশা করছে। যার ফলে এনবিআরের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে তিনি এবার নতুন কোনো কর আরোপ করছেন না; বরং করের আওতা বাড়িয়ে তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান। কিন্তু গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যেখানে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা থেকে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনতে হয়েছিল, সেখানে এবার আরো বড় লক্ষ্য কিভাবে পূরণ করা সম্ভব- সেই প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে এনবিআরের। জেলা প্রশাসকদের প্রস্তাবের সঙ্গে এনবিআরের প্রস্তাবের সমন্বয় প্রয়োজন হবে। তখন হয়তো বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা যাবে।

কার্য-অধিবেশনের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে ড. মসিউর বলেন, ডিসিরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন বা যেসব বিষয় উত্থাপন করেছেন বেশির ভাগ হলো ঋণ ও সরকারের অন্যান্য ব্যয় বরাদ্দ, এটা কিভাবে মানুষের উপকারে আরো কাজে লাগানো যায়, যেটি বরাদ্দ করা আছে এবং যে অর্থটা আছে সেটা কিভাবে দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে বিতরণ করা যায়, এটাই ছিল তাদের মূল বিষয়। এসব প্রস্তাবের কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব, আবার বাজেট সীমাবদ্ধতা বা জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। তবে সার্বিকভাবে তিনি জেলা প্রশাসকদের মনোভাবের প্রশংসাই করেছেন। আমার ধারণা, সরকারি কর্মকর্তারা মানুষের প্রতি যে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়, এটা আমার মনে হয় একটা নতুন দিক। এদের ব্যবহারের নতুন দিক যে মানুষের কল্যাণের জন্য নিয়মকানুন যেটা আছে সেটা যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় এ নিয়মকানুনগুলোকে পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন মতো যতদূর সম্ভব সেগুলোর পরিবর্তন সাধন করা।

ঋণ বিতরণ নিয়ে ডিসিরা কী ধরনের সমস্যা মোকাবেলার কথা জানিয়েছেন- এ প্রশ্নে ড. মসিউর বলেন, সমস্যা হয় মূলত কৃষিঋণ এবং নারী উদ্যোক্তা ঋণে। ব্যাংকে যে পরিমাণ বরাদ্দ থাকে ওই ব্রাঞ্চ হয়তো সে পরিমাণে ঋণ দিতে পারে না। যেসব তথ্য ও শর্ত পূরণ করতে হয় মহিলারা সেসব সব সময় দিতে পারেন না। সেই শর্ত হলো তার একটি সার্টিফিকেট লাগবে, তার একজন গ্যারান্টার লাগবে। তারপরে সবাই জানেন আমাদের গ্রামের গরিব মহিলাদের প্রায় কারো জমি নেই বা জমি থাকলেও তার বাবা, ভাই, স্বামী না থাকলে স্বামীর ভাইদের অনুমতি বা সমর্থন ছাড়া সে এগুলোর কোনো কিছু করতে পারে না। ফলে মহিলাদের জন্য যে ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার মতো থাকে সেগুলো দেয়াতে অসুবিধা হয়ে যায়। তাদের পরিচয় নিশ্চিত নয়, আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, ঠিকানাসহ অনেক তথ্য দিতে হয়। ডিসিদের প্রস্তাব হলো একটু সহজ করা।
ডিসিদের অনুকূলে এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ এবং ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আলোচনা প্রসঙ্গে ড. মসিউর বলেন, এটা আজকে আসেনি, কারণ এটা তো গতকালই চেয়েছে। প্রস্তাব হিসেবে সরকারের নথিতে আসবে তারপরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, তারপরে বোঝা যাবে কী করবে, এটা আজকের আলোচনায় আসেনি।

সেরা শিক্ষকদের ক্লাস টিভিতে আনার ভাবনা
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশনে ডিসিরা ভালো শিক্ষকদের অতিথি করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানোর প্রস্তাব তুললে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভালো শিক্ষকদের পাঠদানের উপকারিতা যাতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পেতে পারে, সেজন্য একটি টেলিভিশন চ্যানেল খুলে তাদের ক্লাস স¤প্রচারের ভাবনা রয়েছে সরকারের।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় বা বেশ কিছু জায়গায় অত্যন্ত ভালো কিছু বিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর অনেক সুনাম রয়েছে, সেখানকার শিক্ষকদের বিষয়ে অনেক সুনাম রয়েছে। (ডিসিদের) একটা প্রস্তাব আছে তাদেরকে অতিথি শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে।

আমরা যেটি (ডিসিদের) বলেছি- খুব কম খরচে টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের খুব ভালো ভালো শিক্ষকদের ভালো ভালো ক্লাসগুলোকে কিন্তু আমরা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একই সঙ্গে সব স্কুলে দেখাতে পারি। সেজন্য একটা শিক্ষা টিভি জাতীয় কোনো কিছু চিন্তা করা যায় এবং সেটি করা গেলে হয়তো যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষক আছেন, তারা অন্যদের শেখানোর পদ্ধতি থেকে উপকৃত হবেন এবং একই সঙ্গে শিক্ষার্থীও যে যেখানেই থাকুক, একই মানের শিক্ষকদের শিক্ষাদান, পাঠদানে তারা উপকৃত হবে।

শিক্ষা টিভি করবেন কি না- ডিসিদের প্রস্তাবে বিষয় জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, এ বিষয়ে এখানে কথা বললাম, এরকম একটা কিছু হতে পারে। সেটি নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব এবং আগামী দিনে কী পরিকল্পনা করা যায় সেটি দেখব। একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ডিসিদের প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাব আসলে কী করা যায়, কিভাবে করা যায় সেটা ভেবে দেখব।

শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয় সজাগ দৃষ্টি রাখতে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বোত্র জনসচেতনতা সৃষ্টি করা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›দ্ব দ‚র করে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাসহ যত বিষয় শিক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, যেখানে ডিসিদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে, সেসব বিষয়ে আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।

সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে যে কোটার কথা বলেছেন সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, একটি নিয়ম আছে- সরকারি কর্মকর্তারা যদি কোথাও বদলি হয়ে যান তাদের সন্তানরা সেখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে, ফলে কোটা সংরক্ষণের কোনো বিষয় নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোটা রয়েছে, যেটি খুব একটা ব্যবহার হয় না বলে জানান তিনি। তাহলে ওই কোটা উঠিয়ে দেবেন কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিচার-বিবেচনা করে দেখতে পারি আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। ডিসিরা বেশ কিছু লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন, সময়ের অভাবে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। সেগুলো দেখে তার মধ্যে যেগুলোতে কাজ করা দরকার বলে মনে করব সেগুলো আমরা করব।

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ নয় : প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে কেউ কারখানা করলে তাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। ডিসি সম্মেলনের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কার্য অধিবেশনে সরকারের এই বার্তা পৌঁছে দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলের বাইরে যারা কারখানা স্থাপন করে ফেলেছেন তারা সেগুলো পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে স্থানান্তর করতে পারবেন। নসরুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী গতকাল অনুশাসন দিয়েছেন- যত্রতত্র শিল্প এলাকা করা যাবে না। আজকে আমরা জেলা প্রশাসকদের বলে দিয়েছি কেবল পরিকল্পিত শিল্প এলাকা ছাড়া কোথাও আমরা গ্যাসের লাইন, বিদ্যুতের সংযোগ দেবো না, এটা একদম স্পষ্ট। এখন থেকে যারা এখানে শিল্প এলাকা করতে চাচ্ছেন বা শিল্প এলাকা করতে যাবেন বা করে ফেলেছেন কিছু, তাদেরকে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে।’

পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল বলতে সরকারের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ছাড়াও বিসিককে বোঝানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা হলো, সরকারের অনুমোদিত পরিকল্পিত শিল্প এলাকা ছাড়া কোথাও গ্যাসের সংযোগ, বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া যাবে না। কেউ যদি যত্রতত্র অনুমোদন ছাড়া করে তাদের লাইন কেটে দেয়া হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা স্যাটিসফাইড জানিয়ে করে বিপু বলেন, প্রি-পেইড মিটার নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কিছু সমস্যার কথা তারা জানিয়েছেন, সেগুলো আমরা দেখব। বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে শিগগিরই একটি নীতিমালা করা হচ্ছে বলেও ডিসিদের জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ