পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে কাজের গতি বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নের গতিটা অব্যাহত রাখা জরুরি। আর এটা মাথায় রেখেই আপনাদের (জেলা প্রশাসক) কাজ করে যেতে হবে।
সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ রাখাসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃত জেলা প্রশাসকদের করণীয় হিসেবে অনুষ্ঠানে ৩১ দফা নির্দেশনাও প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সকালে তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঁচ দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০১৯ এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলন শেষ হবে ১৮ জুলাই। সম্মেলনে শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আপনাদের যে মেধা ও মনন দিয়ে এই দেশটাকে গড়ে তুলবেন। আর সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে যেন কর্মক্ষেত্রে আপনাদের দক্ষতার পরিচয় রাখতে পারেন সেটাই আমি চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। তার সরকার একটি লক্ষ্য নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের চাকরি তো দীর্ঘকালীন, আর আমাদের চাকরি স্বল্পমেয়াদের। পাঁচ বছরের জন্য আমরা নির্বাচিত হয়েছি। কাজেই এই পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের দেশটাকে একটা জায়গায় নিয়ে আসতে চাই এবং সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা যে বাজেট দিয়েছি বা পরিকল্পনা নিয়েছি বা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছি। আর সেই লক্ষ্যটা হলো বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে।
২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের ২১ ভাগ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে এবং আমি মনে করি, আমরা যদি আরেকটু প্রচেষ্টা নেই- আমাদের হাতে এখনো যে সময়টা রয়েছে তাতে ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২-৩ ভাগ কমাতে পারব। তিনি বলেন, আপনারা জানেন যুক্তরাষ্ট্রের দারিদ্র্যের হার ১৮ ভাগ। আমরা তার থেকে অন্তত এক ভাগ বেশি কমাতে চাই। আপনাদের প্রচেষ্টা থাকলে আমরা পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদেরকে একদিন বলেছিল, বাংলাদেশ ‘বটমলেস বাস্কেট’ হবে। তাদের দেখাতে চাই দারিদ্র্যের হার কমিয়ে এনেছি। ২০২৪ সালের মধ্যে এই হারকে আরো কমাব। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ এই দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু এই দেশের মানুষ যেন মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে চলতে পারে- সে ব্যবস্থাই তার সরকার করতে চায়।
এ সময় শেখ হাসিনা উপস্থিত বিভাগীয় কমিশার এবং জেলা প্রশাসকদের কেবল হাতে তালি দিয়ে নয়, তারা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, সে বিষয়ে তাদের ওয়াদা প্রত্যাশা করেন। উপস্থিত জেলা প্রশাসক এবং কমিশনারগণ এ সময় হাত তুলে এতে সম্মতি জানান।
৩১ দফা নির্দেশনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসকদের করণীয় হিসেবে ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখা; জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরো সতর্কতা এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করা।
যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা; গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে হবে। দৈনন্দিন প্রয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে জেলার সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা; শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার হ্রাস এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখা; কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেয়া; ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করা; কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২’ এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনাবলি অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করা; বাজার-ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যেকোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা; নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং এবং বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য কাজ করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা; প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলির সৌন্দর্য সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী কেন্দ্রীয় পর্যায় হতে তৃণমূল পর্যন্ত উদ্যাপনের লক্ষ্যে আপনাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবস্থা নিতে হবে; কোনো ঢালাও পরিকল্পনা নয়, জেলার চাহিদানুযায়ী এবং তার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে; স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, জনগণের চাহিদা এবং উন্নত জীবন নিশ্চিত করার বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে প্রকল্প ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; গৃহহারা, ভূমিহীন এবং ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বক্তব্য রাখেন এবং প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এ বছরের ডিসি সম্মেলনে মোট ২৯টি অধিবেশন হবে এবং সম্মেলনে ৩৩৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা, ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। কর্ম অধিবেশনগুলো সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।