পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে প্রথম বর্ষের কমপক্ষে ২৫জন শিক্ষার্থীকে এলাপাতাড়ি মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে লোহার রড, বাঁশ, স্টাম্পের আঘাতে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুলতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নবীন শিক্ষার্থীদের।
এ মারধরের তত্ত্বাবধানে ছিল হল ছাত্র সংসদের এজিএস ও ছাত্রলীগের পদপ্রার্থী আবির হোসেন। মারধরে অংশ নেয় হলে আবিরের অনুসারি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত দ্বিতীয় বর্ষের কর্মীরা। মারধরের ঘটনায় রাত সাড়ে ১১টায় সাংবাদিকরা হলটিতে উপস্থিত হলে মারধরকারীরা সরে যায়। এসময় গুরুতর আহত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরকে অন্য হলে নিয়ে যায় নেতারা।
এই সময় হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষক প্রফেসর ড. এটি এম সামসুজ্জোহাসহ হলের কর্মচারীরা বিভিন্ন রুমে মনিরকে খোঁজ করে। কিন্তু তাকে পাওয়া না গেলে হলের বিভিন্ন বøকে মনিরকে খোজ করা হয়। সেখানে ও তাকে পাওয়া যায়না। এই সময় হলের জিএস হাসিবুল হক শান্ত এর সাথে হলের আবাসিক শিক্ষক কথা বলেন। এসময় হলের এজিএসকে বারবার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ করেনি। এভাবে খোঁজার পর রাত পোনে ২টার দিকে হল প্রভোস্ট প্রফেসর জিয়া রহমান তার অফিসে আসেন। রাত ২টায় মনিরকে অন্য আরেকটি হল থেকে হল অফিসে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, গত বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নিয়োমিত কর্মসূচিতে প্রথম বর্ষের কিছু ছাত্র ক্লাস ও পরীক্ষা থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেন নি। এ কারণে সেদিন রাতে প্রথম বর্ষের সব ছাত্রকে 'গেস্টরুমে' (ছাত্রলীগের জিঙ্গাসাবাদ করার জায়গা) ডাকে দ্বিতীয় বর্ষের 'পলিটিক্যাল ভাইরা'। যারা যারা প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিল না, তাদেরকে যেন রাতে গণরুমে ঘুমাতে দেয়া না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। বড় ভাইদের নিষেধ অমান্য করে বন্ধুদের রুমে ঘুমাতে দেয় শিক্ষার্থীরা।
নেতাদের নির্দেশ অমান্য করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে হলের ২১২ নম্বর রুমে গেস্টরুমে প্রায় ২৫ জন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীকে লোহার রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিঠিয়ে আহত করে দ্বিতীয় বর্ষের সাইকোলজি বিভাগের রনি, স্বাস্থ্য অর্থনীতির বিভাগের রুবেল, পপুলেশন সায়েন্সের মাহমুদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান ও এরাবিকের মাহমুদ প্রমুখ। এরা সবাই হল সংসদের এজিএস আবির হোসেনের সাথে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের রাজনীতির অনুসারী।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, প্রচন্ড নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মনিরুল ইসলাম নামের ১ম বর্ষের সমাজবিজ্ঞানের এক শিক্ষার্থীর মুখ দিয়ে 'কুত্তার বাচ্চা' বের হয়ে যায়। এ অপরাধে তাকে আলাদা করে ১১২ নাম্বার রুমে রাখা হয়। এসময় তাকে মারধর করে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত তা বলতে টর্চার করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থী এটা বলতে অস্বীকার করায় কয়েক দফায় তাকে লাথি, কিল, ঘুষি মারা হয়।
অন্যদিকে, ঠিক এ সময় সাংবাদিকরা খবর পেয়ে চলে আসায় দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল ছাত্ররা রুম থেকে রড, স্ট্যাম্প সরিয়ে দ্রæত পালিয়ে যায় এবং মনির ও জার্নালিজম বিভাগের সাবেরকে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে নিয়ে গিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা আটকিয়ে রেখে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। এবং এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে কিছু না বলতে রাজি করানো হয়। রাত আড়াইটায় হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ও শিক্ষার্থীকে হল অফিসে কি ঘটেছে জিঙ্গেস করলে সে বড় ভাইদের মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে।
এসময় হল অফিসে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলের ভিপি, জিএস, অভিযুক্ত এজিএস আবির হোসেনসহ চতুর্থ বর্ষের ছাত্রলীগের কর্মীরা। ভয়ের পরিবেশের কারনে নাম বলছেনা উল্লেখ করে হল অফিসে উপস্থিত ডাকসুর সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, আমরা সবাই দেখছি এই ছেলে নেতাদের সামনে ভয়ে কথা বলছেনা। তাকে আলাদাভাবে ডেকে কথা বলার জন্য হল প্রভোস্টকে অনুরোধ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, গেস্টরুমে গালি দেয়ার ঘটনায় অন্য সবাইকে মারধর করে ছেড়ে দিয়ে মনিরকে আলাদা রাখা হয়। কয়েক দফা মারধর করার পর সে ছাত্র শিবির করে এধরণের স্বীকারোক্তি দিতে বলে। এরমধ্যে কয়েকজন তার মোবাইল নিয়ে এসে মেসেঞ্জার, ফেসবুক চেক করে কোন প্রমাণ না পেয়ে তার ফেসবুক ওয়াল থেকে শিবিরের পেইজ ‘বাঁশের কেল্লায়’ লাইক দিয়ে তাকে নিয়ে ছবি তুলে এবং বলে তুই ত শিবির করিস। এরপর তাকে এটা স্বীকার করতে বলে। না করলে তার জীবন এবং পরিবার শেষ হয়ে যাবে এবং তাকে থানায় নিয়ে যাবে আর স্বীকার করলে তাকে তাঁরা ছেড়ে দিবে বলে জানায়।
এর পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হলের ২০৬ নাম্বার রুমে তৃতীয় বর্ষের পলিটিকাল নেতাদের কাছে। তারা মনিরকে শিবির করে স্বীকার করে নিতে চাপ দেয়। এরমধ্যে সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে তাকে হল থেকে বের করে পাশের বঙ্গবন্ধু হলে নিয়ে যায় এবং সাংবাদিকদের কিছু না বলতে হুমকি দেয়।
প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইরা আমাদের গেস্টরুমে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এর মধ্যে রনি, রুবেল, মাহমুদ ও সাফওয়ান নিয়মিত আমাদের গায়ে হাত তোলে। গতকাল গেস্টরুমে তারা আমাদের সবাইকে রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে পিঠিয়েছে। মনির বড় ভাইদের ভুলে 'কুত্তার বাচ্চা' বলে ফেলায় তাকে মেরে গুরুতরভাবে আহত করেছে। আরেকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনার পর বড় ভাইরা আমাদের রুমে এসে সাংবাদিকদের সামনে কিছু বলতে নিষেধ করে দিয়েছে। আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।
ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের মেবাইল নাম্বার বন্ধ রাখায় তাদের মন্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে তিনি নিজে এরসাথে জড়িতদের বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করবেন বলে জানান আবির।
এই বিষয়ে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ছাত্রলীগ সবসময় ছাত্রদের নির্যাতন করেছে। ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচনের সময় বলেছিলো গেস্টরুমে ছাত্র নির্যাতন করা হবেনা। কিন্তু তারা তাদের চরিত্র বদলায়নি।
জানতে চাইলে জিয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর জিয়া রহমান বলেন, একটা ঘটনা যেহুতু হয়েছে। আমরা সবার সাথে কথা বলব। তদন্ত কমিটি গঠন করব। কেউ অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।