Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

খানাখন্দে এ কী চট্টগ্রাম!

বিধ্বস্ত ২৪০ কি.মি. সড়ক

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সড়কে বড় বড় গর্ত। তাতে কাদা-পানি। গাড়ির চাকা আটকা পড়ছে। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, হেলে-দুলে। বাড়ছে যানজট, জনভোগান্তি। চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়কের কাটগড় অংশে গতকাল রোববার এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ওই সড়কের মতো নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে নগরীর সড়কের ২০ শতাংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টি, প্রবল জোয়ার আর বেহাল সড়কের কারণে গত ১০ দিন ধরে স্থবির দেশের প্রধান বন্দরনগরী বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। নগর পরিকল্পনাবীদরা বলছেন, বর্ষার শুরুতেই ক্ষত-বিক্ষত এসব সড়ক বৃষ্টির কারণে সংস্কার ও মেরামতও করা যাবে না। ফলে ৬০ লাখ নগরবাসীর দুর্ভোগেরও শেষ হবে না।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লাগাতার বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে নগরীর সড়ক অবকাঠামো নাজুক হয়ে পড়েছে। পানি সরে যাওয়ার পর সড়কের বেহাল দশা স্পষ্ট হয়ে উঠে। বড় বড় গর্ত রাস্তায়, কোথাও ধসে গেছে পুরো সড়ক। কোন কোন এলাকায় সড়কে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের সাথে আসা কাদা, বালির স্তুপ। কোথাও আবার মাটি-বালির সাথে পলিথিন আর আবর্জনার জঞ্জাল। কাদা মাটির প্লাবন, বড় বড় সড়ক, আবাসিক এলাকা, মার্কেট, বিপণিকেন্দ্র, গুদাম ও আড়তে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ কয়েকটি সড়কে চলছে সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন কাজ। পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য নগরীর প্রায় সব এলাকায় রাস্তা কাটছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। বর্ষায় সিটি কর্পোরেশনও কয়েকটি সড়কে উন্নয়ন কাজ করছে। কর্ণফুলী গ্যাসসহ বিভিন্ন সংস্থা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এর ফলে কাটা সড়কে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি জমে নগরীর বেশিরভাগ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মহানগরীর ১২শ’ কিলোমিটার পাকা সড়কের ২৪০ কিলোমিটার অংশ এখন বিধ্বস্ত। বৃষ্টি থামার পর এসব সড়ক জরুরি ভিত্তিতে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে কাজ শুরু হয়েছে।

গতকাল নগরীর কয়েকটি সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, বড় বড় গর্তের কারণে সড়কে যানবাহন আটকা পড়ছে। এর ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নগরীর প্রধান সড়কের পতেঙ্গা সৈকত থেকে শুরু করে কাটগড়, ইপিজেড হয়ে বারিক বিল্ডিং মোড়, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, মুরাদপুর থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট ও হালিশহর থেকে শহরমুখী ঈদগাঁ হয়ে দেওয়ানহাট সড়কে তীব্র জট দেখা গেছে।

একই অবস্থা নগরীর সিটি গেইট থেকে একে খান হয়ে জিইসি মোড়, ষোলশহর, ২নং গেইট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী হয়ে অক্সিজেন সড়কে। শহরতলীর কয়েকটি এলাকার সড়ক এখনও পানির নিচে। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হলেও সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে যানজটে অচল ছিল পুরো নগরী।

নগরীর ব্যস্ততম প্রবর্তক মোড়ে দেখা যায়, ওই মোড় থেকে চমেক হাসপাতালমুখী সড়কের কালভার্ট উপড়ে ফেলা হয়েছে। ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ। নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুরসহ আরও কয়েকটি সড়কে কালভার্ট তুলে ফেলে সিডিএ। সিডিএর কর্মকর্তারা জানান, এসব কালভার্টের সাথে পানির সাথে ভেসে আসা পলিথিন ও আবর্জনা আটকে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। পানিবদ্ধতা নিরসনে এসব কালভার্ট ভেঙে ফেলা হয়। পানিবদ্ধতা নিরসন এসব কালভার্ট নতুন করে নির্মাণ করা হবে বলে জানান সিডিএর কর্মকর্তারা।

এদিকে গতকালও প্রবল জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বাকলিয়া ও চান্দগাঁওয়ের অনেক এলাকা। জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা এসব সড়কে ভারী যানবাহন চলতে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

বন্দরে পণ্য পরিবহন ব্যাহত
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে পণ্য পরিবহন এখনও স্বাভাবিক হয়নি। মূলত ৩০ জুন থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌপথে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহন কমে যায়। গত প্রায় ১০ দিন ধরে অতিবর্ষণ ও বৈরী আবহাওয়ায় বহির্নোঙ্গর থেকে মালামাল খালাস বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১১ লাখ টন আমদানি পণ্যবোঝাই মাদার ভেসেল পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। পণ্য খালাস এবং নৌপথে পরিবহন বন্ধ থাকায় ৩০০ এর বেশি লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। সড়কপথে পণ্য পরিবহনেও ধীরগতি চলছে। বন্দর এলাকায় টানা যানজট এবং সড়ক-মহাসড়কে বেহাল অবস্থার কারণে আমদানি-রফতানি পণ্য কন্টেইনার পরিবহনের গতিও শ্লথ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে শিল্পের কাঁচামাল কারখানায় পৌঁছতে না পারায় কল-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যথাসময়ে পণ্য জাহাজিকরণ না হওয়ায় রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য জাহাজে আটকে থাকায় বাজারে সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ