পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নয়নের অর্জন যেন দুর্নীতির কারণে নষ্ট না হয়ে যায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেখেবেন দুর্নীতির কারণে আমাদের অর্জনগুলো যেন নষ্ট হয়ে না যায়। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তেজগাওয়ের কার্যালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন, যাতে করে আমাদের এত কষ্টের অর্জনগুলো দুর্নীতির কারণে নষ্ট না হয়ে যায়। তিনি বলেন, এখন চলছে ডিজিটাল যুগ। আমরা চীনের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। এটা আরো এগিয়ে নিতে হবে। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, বিভিন্ন সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগ এবং দপ্তরের প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের সিনিয়র সচিব এবং সচিববৃন্দ একযোগে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে একে একে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তা তুলে দেন। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সম্পাদনের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সম্মাননাপত্র এবং ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এত খেটে, সারা দিন এত কাজের পরে যদি দুর্নীতির কারণে সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়, সেটা হবে খুব দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। ‘যে ঘুষ নেবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে ঘুষ দেবে সেও অপরাধী’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, কাজেই দুর্নীতির কারণে আমাদের উন্নয়নটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের যে মানুষগুলো তাদেরকে সকল নাগরিক সুবিধা আমরা দিতে চাই, যাতে করে তাদেরকে কাজ খোঁজার জন্য আর গ্রাম থেকে শহরে আসতে না হয়। নিজের গ্রামেই সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা তারা পেতে পারেন। তিনি বলেন, মানুষের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ার ফলে এবং যেহেতু আমরা ঘোষণা দিয়েছি ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ তাই যত্রতত্র দালানকোঠা ও স্থাপনা তৈরি হওয়ায় কৃষিজমি কমে যাওয়ার একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে মাস্টারপ্লান থাকা এবং তা যথাযথভাবে কার্যকরের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এটা বোধহয় আমাদের একটু দেখা উচিত যে, কিভাবে আমাদের কৃষি জমিগুলোকে আমরা রক্ষা করব। পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন যেন পরিকল্পিতভাবে করা যায়।
শিল্পায়নের জন্য সারা দেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যত্রতত্র ঘরবাড়ি এবং কলকারখানা এভাবে যদি হতে থাকে তাহলে যেমন আমাদের আবাদি জমিও নষ্ট হবে তেমনি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য নাগরিক সুবিধা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য তিনি মানুষকে বোঝানোর এবং নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপনা নির্মাণ করলে তারা যে সুবিধাগুলো পাবেন, সেগুলো সম্পর্কে তাদের অবহিতকরণের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে তিনি এই ব্যাধি নির্মূলে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই সঙ্গে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে আমরা ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এর মধ্যে বাংলাদেশে একটা ভিক্ষুকও থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একটা মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না। তিনি বলেন, অন্তত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো আমরা পূরণ করব। তাদের জীবনের ন্যূনতম চাহিদা, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সে লক্ষ্যে সব পরিকল্পনা, সমস্ত কাজ করতে হবে। গ্রামের জনগণকে যেন শহরে ভিড় করতে না হয়। নিজের গ্রামেই তারা যেন সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
চীনের প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, চীনের থেকেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বেশি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৮ দশমিক ১ ভাগে পৌঁছেছে। এ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। আর এটা আমরা করতে পারব বলেই বিশ্বাস করি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা প্রসঙ্গে সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে বন্যা চলছে। এ বন্যা পাহাড়ি, হাওর বা একটু উঁচু অঞ্চলে আছে। এ পানিটা ধীরগতিতে নেমে এলে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হবে। এ জন্য আপনারা সাবধান থাকবেন। বন্যায় মানুষের যেন প্রাণহানি না ঘটে এবং খাদ্যের জন্য মানুষ যেন কষ্ট না পায়। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূলত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা দলিল।
একইভাবে মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবগণ সংযুক্ত দপ্তর/সংস্থাসমূহের সঙ্গে এবং দপ্তর/সংস্থাসমূহের প্রধানগণ মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের কৌশলগত উদ্দেশ্যসমূহ, এসব উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গৃহীত কার্যক্রমসমূহ এবং এ কার্যক্রমের ফলাফল পরিমাপের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পর ঐ বছরের চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রথম বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বা এপিএ প্রবর্তন করা হয়। এবার ষষ্ঠ বছরের মতো এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।