পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতিবর্ষণ ও জোয়ারে ফের ডুবল দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। ডুবেছে সড়ক, আড়ত, গুদাম, দোকানপাট, বাণিজ্যিক এলাকা, সওদাগরী পাড়া। ভাঙা-চোড়া সড়ক, মহাসড়কে পানি উঠে যাওয়ায় আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য।
বৈরী আবহাওয়া ও টানা যানজটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমও শ্লথ হয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাস্তায় গণপবিহন সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা ডুবে যায়।
টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে শহরতলী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ, ক্ষেত-খামার। ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো। এই অঞ্চলের নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্ষণের ফলে পাহাড় ও ভূমি ধসের সর্তকতা জারি রয়েছে। গতকাল নগরীর লালখান বাজার ও বায়েজিদে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন শিশুসহ বেশ কয়েকজন।
শুক্রবার রাত থেকে বর্ষণ শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রের্কড হয়েছে ১২২ মিলিমিটার। গতকালও দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রের্কড হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ১৮৫ মিলিমিটার। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে আজ রোববারও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের কথা বলা হয়েছে।
টানা বর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গেল সোমবারও ডুবেছে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের বেশিরভাগ এলাকা। সেই দিন থেকে বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নগরীর অনেক এলাকা পানিতে ডুবে যায়। তবে শুক্রবার দিনভর তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও গভীর রাত থেকে অতিবর্ষণ শুরু হয়। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে।
দুপুরের আগেই নগরীর মুরাদপুর, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, ষোলশহর, বায়েজিদ, অক্সিজেন, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, হালিশহর, ঈদগাঁ, নয়াবাজার, গোসাইলডাঙ্গা, মধ্যম ও দক্ষিণ হালিশহর, পতেঙ্গা এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ছাড়াও রেয়াজউদ্দিন বাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট বিপণী কেন্দ্রে পানি উঠে যায়।
উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরীর প্রধান সড়কের কাটগড় থেকে সিমেন্টক্রসিং, সিমেন্টক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেইট, পোর্ট কানেকটিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সসেস রোড, মুরাদপুর, ষোলশহর, বহদ্দারহাট থেকে সিঅ্যান্ডবি হয়ে কালুরঘাট সড়ক, অক্সিজেন এলাকার সড়কের বেশিরভাগ এলাকায় পানি উঠে যায়। কোন কোন সড়ক কোমর সমান পাতিতে তলিয়ে যায়। পানিতে ডুবে অনেক যানবাহন রাস্তায় বিকল হয়ে গেছে। এতে করে নগরীর বেশিরভাগ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে গণপরিবহন সঙ্কট আরও তীব্র হয়। লোকজনকে বৃষ্টিতে ভিজে প্লাবিত সড়কে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা যায়। নগরীর চকবাজার-ফুলতলাসহ কয়েকটি এলাকায় সড়কে নৌকা চলতে দেখা যায়। প্রবল বর্ষণ আর জোয়ারে নগরীর বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতেও পানিবদ্ধতা তৈরী হয়। বাসা-বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় লোকজন চরম বিপাকে পড়ে। পানির সাথে আসা কাদা মাটির জঞ্জাল সরাতে গলদগর্ম হতে হয়। দোকাপাট আড়তে পানি উঠে বিনষ্ট হয়েছে মালামাল।
বন্দরে অচল দশা অব্যাহত
ভারী বর্ষণ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে অচল দশা অব্যাহত আছে। বহির্নোঙ্গরে খালাসের অপেক্ষায় জাহাজের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। বন্দর ইয়ার্ড ও জেটিতে বাড়ছে কন্টেইনারের পাহাড়। টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১৬টি লাইটারেজ জাহাজ মালামাল খালাসের জন্য বুকিং দেয়া হলেও পরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
কর্ণফুলীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৩শ’ লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। নৌপথে পণ্য পরিবহনও বন্ধ। বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ডে কন্টেইনার ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও বন্দরের আশপাশে তীব্র জটের কারণে কন্টেইনার পরিবহন কমে গেছে। বন্দরের ইয়ার্ডে খোলা পণ্য ওঠানামার ক্ষেত্রেও ধীরগতি চলছে। সব মিলিয়ে জটের মুখে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। শুক্রবার বিকেল থেকে বন্দর এলাকার যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গতকাল সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে যানজট আবার বেড়ে যায়।
পানি সরাতে মাঠে সেনাবাহিনী
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পানিবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামে। ৪০ জন সদস্য ৪টি টিমে ভাগ হয়ে পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু করেন। প্রবর্তক মোড়-কাপাসগোলাতে ১টি, জিইসি মোড় থেকে দু’নম্বর গেট এলাকায় ১টি এবং মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে ১টি করে টিম কাজ করে। বৃষ্টি শুরুর পর থেকে এসব টিম মাঠে নামে বলে সাংবাদিকদের জানান প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী।
তিনি বলেন, তারা দ্রæত পানি সরানোর পাশাপাশি পরবর্তীতে কীভাবে কাজ করতে হবে এসব বিষয় দেখছে। ইতোমধ্যে এসব পয়েন্টে পানি জমার কারণ চিহ্নিত হয়েছে। পানি নেমে গেলে সে অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। সরেজমিন দেখা যায়, সেনা সদস্যরা পানি সরাতে নালা পরিষ্কার করছেন। যেসব প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি আটকে আছে সেগুলো অপসারণ করছেন তারা।
এতে করে কোন কোন এলাকায় দ্রæত পানি নেমে যেতে থাকে। সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও মেগাপ্রকল্পের পরিচালক আহমেদ মাঈনুদ্দীন বলেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কিছু স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যবস্থার ফলে পানিবদ্ধতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। নগরীকে পানিবদ্ধতা মুক্ত করতে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প নিয়েছে সরকার। সিডিএর উদ্যোগে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।