Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুধের দশ নমুনাতে অ্যান্টিবায়োটিক

দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও ফেল

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের ১০টি নমুনার সবগুলোতেই মানবদেহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য-সাবেক পরিচালক প্রফেসর আ ব ম ফারুক।

ঢাবির এ প্রবীণ প্রফেসর জানান, আগের পরীক্ষায় ১০টি নমুনার ৩টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়, যা গত ২৫ জুন ঢাবির ফার্মেসি অনুষদে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়। তবে এবার চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে আগেরবার ছিল না এমন নতুন ২টি অ্যান্টিবায়োটিক। সেগুলো হলো, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন। ১০টি নমুনার মধ্যে ৩টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৪টি, ৬টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ৩টি এবং ১টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি।

প্রফেসর আ ব ম ফারুক জানান, পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি আছে কি না তা মাঝে মধ্যেই পরীক্ষা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে এ পরীক্ষাটি আবারো করা হয়। প্রথমবারের মতো এবারো পাঁচটি কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের নমুনা এবং খোলা দুধের তিনটি নমুনা একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়। সবগুলো নমুনা উন্নত ল্যাবে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হলে তাতে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

প্রফেসর আ ব ম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, দুধ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পেশকালে পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে মানবদেহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি শনাক্তের প্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য রক্ষার জরুরি প্রয়োজনে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচ) ইত্যাদি ল্যাবরেটরিগুলোতে নিয়মিতভাবেই দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে কি না তা পরীক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।

বিএসটিআইয়ের দেড় যুগের পুরনো দুধের স্ট্যান্ডার্ডে নয়টি পরীক্ষার সঙ্গে কমপক্ষে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পরীক্ষার মতো দু’টি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত করে দুধের এই স্ট্যান্ডার্ডকে যুগোপযোগী করার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।

আ ব ম ফারুক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি করে, গবেষণা করে ফলাফল প্রকাশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা অনুভব করেছে। আমরা যেটা প্রকাশ করেছি সেটা সম্পূর্ণ দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রকাশ করেছি। এটা কোনো কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে করা নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট টাকা নিয়েই এটা করেছি এবং সরকারের যে ভেজালবিরোধী কর্মকান্ড, সেটাকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই এ পরীক্ষা করা হয়েছে।

ঢাবির এ প্রফেসর বলেন, এ গবেষণা প্রকাশের পর একটি মহল বলল আমি নাকি বিদেশি এজেন্ট, তাদের হয়ে কাজ করছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য এ পরীক্ষা করেছি, কারো কথায় করিনি। স্বদেশি পণ্য সবাই ব্যবহার করুক এটা আমিও চাই, তবে তা যেন ঝুঁকিপূর্ণ না হয়।

গবেষণা জার্নালে প্রকাশ না করে সংবাদ সম্মেলনে বলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ভালোভাবেই জানি কোনটা পিআর রিভিউতে দেয়া দরকার আর কোনটা দরকার না। আমি দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তার ফল বিএসটিআই কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের পরীক্ষার ফল কেন আমাকে দেখানো হচ্ছে না। আমাদের নিজস্ব গবেষণাগুলো জার্নালে ছাপা হতে গেলে কমপক্ষে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। এই সময়কালে জনস্বাস্থ্যেরও ব্যাপক আকারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ততদিনে এ দেশের মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কি এসব খেয়ে মারা যাবে? আমরা কি ততদিন বসে থাকব?

প্রফেসর ফারুক বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সতর্ক করা, যাতে তারা দুধ সিদ্ধ করে খায়। দুধ সিদ্ধ করে খেতে হবে। কেননা সেখানে জীবাণু পাওয়া গেছে। এটা জনগণকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেছি।
ঢাবির বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য-সাবেক এ পরিচালক বলেন, আমাদের প্রকাশিত এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে নিজেদের ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাগুলো দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেবে এবং এভাবে দেশের দুধের মানের উন্নতি ঘটবে।



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১৪ জুলাই, ২০১৯, ১০:২৩ এএম says : 0
    ঐ সকল প্রতিষ্টানের গরু গুলো একেকটি এন্টিবাইটিক ফ্যাক্টরী। যদি পরিক্ষা করেন তাই মিলবে। প্রতিষ্ঠানের গো খাদ্য মোটা তাজা করণ পদ্ধতিতে সহ আপনাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক দিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ