পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি ব্যাংক খাত। গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতের সঙ্কট বা ক্রান্তিকাল সব কিছুর শুরু ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাৎ ঘটনা। যার অধিকাংশের সঙ্গেই জড়িয়ে আছেন সাবেক নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)। তার অনিয়মের কারণে ধুঁকছে সমগ্র ব্যাংকিং খাত। আস্থা হারিয়েছেন গ্রাহকরা, দেখা দিয়েছে তারল্য সঙ্কট।
এদিকে ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বাবুল চিশতী এখন জেলে থাকলেও ওখান থেকে বিচার কার্যক্রমে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিম্ন আদালত থেকে জামিন পাওয়ার চেষ্টা করছে।
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন জরুরি বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ বা ঋণখেলাপিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো নজির নেই। তাই এ ধরনের কাজ করতে অনুপ্রাণিত হচ্ছে ব্যাংকাররা। বাড়ছে অর্থ আত্মসাতের মতো ভয়াবহ ঘটনা। সে ক্ষেত্রে বাবুল চিশতীদের মতো ভয়ঙ্কর অর্থ আত্মসাৎকারীদের দ্রæত বিচারের আওতায় এনে সরকারের উচিত একটি উদাহরণ সৃষ্টি করা, যাতে কেউ অন্যায় করে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে না পারে। অর্থ আত্মসাৎকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা দৃঢ় হবে। নির্বিঘেœ ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে আসবেন সাধারণ গ্রাহকরা।
তাদের মতে, ব্যাংকিং খাতে আস্থার সঙ্কট তৈরি করেছে বাবুল চিশতী, রাশেদুল হক চিশতীদের মতো গুটিকয়েক মানুষ। যাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কিছুটা হলেও এই ক্ষতে প্রলেপ দিতে পারে। অন্যথায় এই চক্রের কারণে দেশের অর্থনীতি প্রবল হুমকির মুখে পড়বে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ব্যাংক খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে পরিচালনা পরিষদে (বোর্ডে) যাতে অযোগ্যরা আর আসতে না পারে সে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে নতুন পদ্ধতি চালু করেছেন।
সূত্র মতে, প্রায় ১৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে কারাগারে আছেন ফারমার্স ব্যাংকটির সাবেক নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান বাবুল চিশতী। তার হাত দিয়েই শুরু ফারমার্স ব্যাংকের ঋণখেলাপি সঙ্কট। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকটির শুরু থেকেই অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
২০১৮ সালের ১০ এপ্রিলে মানিলন্ডারিংয়ের মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকিং নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাহবুবুল হক চিশতী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্ত্রী, সন্তান এবং নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ২৫টি হিসাব খোলেন। পরে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের সহায়তায় গ্রাহকদের হিসাব থেকে পাঠানো ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা ২৫টি হিসাবে স্থানান্তর করেছেন। এসব টাকা নিজেদের হিসাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর এবং লেয়ারিংয়ের পাশাপাশি নিজেদের নামে কেনা শেয়ারের দাম পরিশোধ করেছেন। লেনদেনের একটি বড় অংশই হয়েছে গুলশান শাখা থেকে।
মাহবুবুল হক চিশতী এবং তার পুত্র রাশেদুল হক চিশতীর জামিন আবেদন বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বারবার ব্যর্থ হয়। আর তাই বর্তমানে নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রমে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছে, যা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিম্ন আদালত থেকে জামিনের আদেশ প্রাপ্তির বিষয়টি থেকে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান।
ইতোমধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত সমাপ্ত করে মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), রাশেদুল হক চিশতী, রুজি চিশতী, জিয়া উদ্দিন আহমেদ, মো. মাসুদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এতে ১৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৪২ টাকা নগদে ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে মাহবুবুল হক চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাৎ করাসহ নিজেদের নামে ক্রয়কৃত ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন করার অভিযোগ পেয়েছেন। আর অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ ধারা মোতাবেক আসামিদের বিচারে সোপর্দ করে শাস্তি প্রদানের প্রার্থনা করে চার্জশিট প্রদান করেন। বর্তমানে মামলাটি বিজ্ঞ মহানগর দায়রা জজ আদালত ঢাকাতে বিচারের জন্য বদলি হয়ে বিশেষ দায়রা-৪৩/২০১৯নং মামলায় রূপান্তরিত হয়ে আজ রোববার এ আমলে গ্রহণ শুনানির অপেক্ষায় আছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের অর্থ লুটপাটকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করে আর্থিক খাতের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। অন্যথায় আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।