Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ডুবছে ঢাকা বিপর্যস্ত জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে নগরীর জনজীবন। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। তা চলে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়। বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। রাজধানীতে বৃষ্টি মানেই পানিজট-যানজট। স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই রাজপথ ও অলিগলিতে পানি জমে যায়। এ পানিতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকা বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। এতে নাগরিকদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনায়। পানি জমতে যে সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় লাগে পানি সরতে। এ জন্য নগরবাসী দুষছেন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাকে। তাদের অভিযোগ, বহু বছর ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছে না।

যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে সরে যেতে পারছে না বৃষ্টির পানি। রাজধানীর রাজারবাগ, পল্টন, নয়াপল্টন, মতিঝিল, বঙ্গভবন এলাকা, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, তেজতুরী বাজার, কাওরান বাজার, মনিপুরী পাড়া, কাজীপাড়া, বেগম রোকেয়া সরণিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তাঘাটসহ গোটা শহরের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। রাস্তায় তীব্র যানজট ও গণপরিবহনের সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। অনেককে কাকভেজা হয়ে রাস্তার মোড়ে তীব্র বিরক্তি নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়াও, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং খুলনাসহ দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে এই বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে।

দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খানাখন্দক ও খোঁড়াখুঁড়ির গর্তে বৃষ্টির পানি জমে একাকার হয়ে গেছে। কোথায় সমতল আবার কোথায় খানাখন্দক বোঝার উপায় নেই। এসব সড়কে প্রতিদিন অহরহ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গতকালের বৃষ্টিতে এ সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারীদরে পড়তে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের প্রধান দায়িত্ব ওয়াসার। কারণ, ঢাকা শহর থেকে বড় অংকে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম স্যুয়ারেজের দায়িত্ব তাদের কাছে। আমাদের কাছে শুধু কিছু ছোটখাটো ড্রেনের দায়িত্ব।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর, শ্যামলী, পল্লবী, তালতলা, মোহাম্মদপুর, কাজীপাড়া, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও এলাকায় সড়কজুড়ে বৃষ্টির পানির ঢেউ দেখা গেছে। গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে পড়ায় বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে সড়কে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। সড়কের কোথাও কোথাও ছিল যানজট। পানির মধ্য দিয়ে পথচারীদের হেঁটে চলাচল করতে হয়েছে।

অপরদিকে দারুস সালাম, ক্যান্টনমেন্ট, কালশি, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানমন্ডি-২৭, হাজারীবাগ, শংকর, জিগাতলা, রায়েরবাজার ও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডসসহ বেশ কিছু স্থানে পানিবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় যারা ঘর ছেড়ে কাজে বাইরে বের হয়েছেন, তাদের সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরো সড়কটিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গেছে। পানিতে ডুবে থাকা সড়কের মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হচ্ছিল ঢেউ। কাজী পাড়ার বাসিন্দা আবু সালেহ সাহাদাত বলেন, জুমার পর একটা কাজে মিরপুর ১০ নম্বরে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দেখি পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে আছে। যানবাহনও অনেক কম। কয়েকটি গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। পরে বাধ্য হয়ে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে কাজে গিয়েছি। পানি জমলে বেগম রোকেয়া সরণিতে কাজীপাড়া নৌকা নেমে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় কাজ করার জন্য আমাদের অঞ্চলভিত্তিক কাউন্সিলর ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। তারা সড়কের বিভিন্ন ম্যানহোল ও ড্রেন উন্মুক্ত করে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ডিএসসিসি এলাকায় পানিবদ্ধতা তেমন একটা নেই।

সরেজমিন দেখা গেছে রাজধানীর গুলিস্তান, সিদ্দিকবাজার, বাবুবাজারসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সড়কে পানি থৈ থৈ করছে। পুরাতন ও অপ্রতুল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পেরে মূল সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগে পড়ে। এ ছাড়াও মুগদাপাড়া, মানিকনগর, মতিঝিল, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর টাউন হল, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কাওরান বাজার, গুলশান, বনানী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে বহুদিন ধরে। যে কারণে বেশ কিছু সড়ক এখন চলাচলে একেবারই অযোগ্য। তাই রাজধানীর রাস্তাগুলোতে যানজট সকাল-দুপুর, রাত-দিন সব সময় লেগেই থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ