Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রিকশায় নিষেধাজ্ঞা বহাল

পুলিশ-সিটি কর্পোরেশন সমন্বয়হীনতা ভোগান্তি নগরবাসীর

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর প্রধান তিন সড়কে রিকশা-ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। নিষেধাজ্ঞা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তই নেয়নি সংস্থা দু’টি। এতে নিষেধাজ্ঞাভুক্ত সড়কে অবাধে চলাচল করছে রিকশা ও ভ্যান। আর রিকশা বন্ধের বিষয়ে দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব এড়াতেই ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশ। তারা বলছে, এটা দেখভালের দায়িত্ব তাদের একার না, সিটি করপোরেশনেরও। কিন্তু সিটি করেপোরেশন বলছে, তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে। সরকারের এই দুই সংস্থার সমন্বয়হীনতায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের রিকশা-ভ্যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্তের সুফল পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। বরং ইতোমধ্যে টানা দুদিন রিকশাচালকদের নৈরাজ্যে চরম ভোগান্তি হয়েছে। এদিকে, বাইলেন ছাড়া রিকশা চলাচলে নিষিদ্ধ সড়কগুলোতে কোন রিকশা চলতে পারবেনা বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তাতে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকলো। গতকাল বুধবার দুপুরে গুলশান নগরভবনে রিকশা মালিক চালক প্রতিনিধি এবং ওয়ার্ড প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
গতকাল সরজমিনে রাজধানীর কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-নিউমার্কেট ও শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাবরেটরি সড়ক পরিদর্শন করে অবাধেই রিকশা ও ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে।

রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে ও সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরিকল্পনা অনুসারে আগামী দুই বছরে রাজধানীর সব প্রধান সড়ক থেকে পুরোপুরি রিকশা উঠিয়ে দেওয়া হবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে গত ৩ জুলাই ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সভা শেষে রাজধানীর কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-সায়েদাবাদ, গাবতলী-নিউ মার্কেট ও শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাবরেটরি সড়কে রিকশা ও ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা ৭ জুলাই থেকে কার্যকর হবে জানিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়েই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে সড়কে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি।

এ নিষেধাজ্ঞাকে সাধারণ মানুষ স্বাগত জানালেও রিকশা মালিক ও চালকরা তোয়াক্কা না করেই গত দু’দিন সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিকশার জন্য আলাদা লেন তৈরির আশ্বাস দিলে আন্দোলন সাময়িক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

কিন্তু এর একদিন পরই গতকাল রাজধানীর তিন প্রধান সড়কেই অবাধে রিকশা ও ভ্যান চলতে দেখা গেছে। পুলিশের চোখের সামনেই প্রধান সড়কে রিকশা-ভ্যান চলাচল করলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি সিটি করপোরশেনেরও কোনো ভ্রাম্যমাণ টিমের অভিযানও চোখে পড়েনি।

সকালে সরেজমিনে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড-নতুনবাজার-বাড্ডা-রামপুরা সড়কের শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, নতুনবাজার ও নদ্দা এলাকায় একটু পর পরই অনেক রিকশা ও ভ্যান চলাচল করতে দেখা যায়। এতে যান চলাচল আগের মতোই বিঘ্ন ঘটেছে।

সাধারণ মানুষ বলছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রিকশা ও ভ্যান চালিয়ে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে দু’পক্ষের সমন্বয়হীনতায় ডিটিসিএ-এর একটি ভালো সিদ্ধান্ত ভেস্তে যাচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রধান সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার অনুরোধ জানান সাধারণ মানুষ। শহীদুল ইসলাম নামে একজন পথচারি বলেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই চায় না প্রধান সড়কে রিকশা চলুক।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের দায়িত্ব শুধু পুলিশের একার নয়। পুলিশ ও সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন যদি সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ না করে তাহলে তো সেটা বাস্তবায়ন কঠিন।

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কেের্পারেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, রাজধানীর প্রধান তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। পাশাপাশি অবৈধ রিকশা ও গ্যারেজ শনাক্ত করতে আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করে দেব। সিটি করপোরেশন এলাকায় বৈধ রিকশাগুলোকে কিউআর কোড করে দেওয়া হবে। এটার যেন নকল না হতে পারে সে জন্য সর্বোচ্চ উন্নত প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবিদদের কাজে লাগানো হবে। চালাকদের ডাটাবেস তৈরি করা হবে। এতে বুঝা যাবে কোন রিকশা কে চালাচ্ছেন। রিকশা চালকদের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিভিন্ন রঙের ড্রেসও দেওয়া হবে।

উত্তর সিটির মেয়র আরও বলেন, সিটি করপোরেশনে ২৩০০ কিলোমিটার রাস্তা আছে। এরমধ্যে মাত্র ১৫ কিলোমিটার সড়কে রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য মূল সড়কেও রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হবে। কুড়িল থেকে রামপুরা পর্যন্ত বাইলেন আছে। যেখানে বাইলেন আছে সেখানে মূল সড়কে রিকশা চলতে পারবে না। আর যেখানে বাইলেন নেই, সেখানে ভেতরের সড়ক দিয়ে রিকশা চলাচল করবে।



 

Show all comments
  • Kamrul Hassan ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    Good Decision.Appreciate Mr.Mayor
    Total Reply(0) Reply
  • Sa Rubel ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মেয়র আপনাকে রিক্সা সারাজীবন কার জীবিকা নির্বাহের এক মাএ অবলম্বন হতে পারেনা ধাপে ধাপে পুরো শহর থেকে রিক্সা তুলে দিন !
    Total Reply(0) Reply
  • S.r. Sagor ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    সবার আগে প্রাইভেট কার বন্ধ করতে হবে কারন ঢাকার অতিরিক্ত জ্যামের জন্য ৯৫% দায়ী প্রাইভেট কার এবং পাঠাওয়ের বাইক।
    Total Reply(0) Reply
  • Mitu Kazi Choudhury ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
    This is not Right, Dhaka City cop Has more than 3 Millions Rikssa, that means 3 millions Rikssa Driver, Every Driver has 4-7 families member, they're Depending in This Income, so who gone take cake them,
    Total Reply(1) Reply
    • kamrul hossain ১১ জুলাই, ২০১৯, ৭:৫৫ এএম says : 4
      Very lame excuse. 90% Rickshaw Puller uses Battery. And none of the rickshaw garage pay correct amount of electric bill. Wake up Ms Mitu. This is 21st century. People dream about living in mars and you talked about 200 years old vehicle. Rickshaw should be complete band from Dhaka capital. একবিংশ শতাব্দীতে এসে ও আমরা চরম দাসত্ব কে সাপোর্ট করছি। রিকশা আছে বলেই গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ লোক ঢাকা এসে এই দাসত্ব কে বেঁচে নিচ্ছে।
  • Habib Kalam ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    অতিরিক্ত কোন জিনিস ভালো না, ঢাকা শহরের জন্য রিকশা এখন অভিশাপ হয়েছে, গরীব মানুষ শুধু রিকশা চালানোর উপর নির্ভর না হয়ে, কৃষি কাজের উপর নির্ভর হওয়া টা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Braiden Moses Tokwe Makae ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    খুব ভালো সিদ্ধান্ত গ্রামে আধা বেলা কাজ করে 700 টাকা পাওয়া যায় কিন্তু কাজের লোকই অনেক সময় পাওয়া যায় না । আমি মনে করি সমগ্র ঢাকা শহরে রিক্সা বন্ধ করা উচিত ।
    Total Reply(0) Reply
  • Bhuiyan Shiful ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    আমি মনে করি খুবই ভালো সিদ্ধান্ত, রিক্সার কারনে বড় রাস্তাগুলোতে জ্যামে পড়ে থাকতে হয়, ওরা গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ করাই ভাল, গ্রামে কাজের লোকের বড়ই অভাব।
    Total Reply(0) Reply
  • Reaz Morshed ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও রিক্সাচালকদের উপরে চালানো পর্যবেক্ষণ বলে এই দেশের কৃষকই রিক্সাচালক। উচ্চবিত্তের স্বার্থ রক্ষাকারী সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে গ্রামীণ কৃষিব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে যায় ফলে শহরে রিক্সা চালানো ছাড়া এই শ্রমজীবী মানুষগুলোর আর কিছুই করার নেই। জ্যামের উছিলায় রিক্সা বন্ধ করা খুবই অসাড় যুক্তি। জ্যামের জন্য দায়ী প্রাইভেট কার। কিন্তু সরকার এই প্রাইভেট গাড়ী বন্ধ করার স্পর্ধা রাখেনা। মন্তব্যকারীরা অধিকাংশই আবাল বলে মনে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Zahid Hossain ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    ঢাকা শহরের মাত্র দুটি প্রধান সরকে রিক্সা চলাচল বন্ধ করা হইছে, যে সরকে প্রায় সময় রিক্সার সাথে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষ হয়ে থাকে এটা চালক এবং যাত্রী উভয়ের জন্যই ভালো আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shamim Uzzaman ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    গ্রাম অঞ্চলে কাজের মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, এরা সবাই পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসে ঢাকার আস পাশে কম ভাড়ায় বসবাস শুরু করে। রিকশা, ঠেলা গাড়ি, লেগুনা সহ ইত্যাদি যান বাহন একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছত্র ছায়ায় দলীয় কর্মী হিসাবে থাকে, তাই বন্ধ করা সম্ভব হয় না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mezbaur Rahman ১১ জুলাই, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
    A decision like this should be followed by a public consultancy or hearing. Also, a decision like this one should not applied immediately, at least six months time should be given so the affected people can make adjustments to their lives.
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Zahir Rayhan ১১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম says : 0
    সরকার খুভই ভালো একটা উদ্যোগ নিছে সাধুবাদ যানাই ঢাকা এতা রিক্সা এক সাথে একদিনে হয় নাই এগুলো শুরু বাধাদেয়া উচিত ছিলো এখনো পারবে আস্তে আস্তে উঠানো ঠিক হবে কারন এতো রিক্সা যখন একসাথে উঠাবে তখন হঠাৎ করে এতো রিক্সা চালক কি করবে বেকারত্ব বেড়ে যাবে কোন কাজ পাবে না তখন আরেক কাজ শুরু হবে চুরি, ডাকাতি, মলন পার্টি, ইত্যাদি এ জন্য আমার পরমর্শ থাকবে সরকারের কাছে অধিক পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার প্রয়োজন। সরকারীভাবে যদি টেকনিক্যাল বা চীনের মত কারিগরী শিক্ষার দিকে গুরুত্বসহকারে বাংলাদেশ সরকার নজর দিতেন তা হলে এই সোনার বাংলা প্রযুক্তি দিকথেকে উন্নত থাকতো। স্বাধীনের আগে থেকে দেখছি রিক্সা কোন পরিবর্তন নাই আমরা বাংঙ্গালী রা পারিনা কারিগরী শিক্ষা অর্জন করে উন্নত মানের রিক্সার পরিবর্তে অন্য মটর যান।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ