Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেউ কেউ নিজেদের জমিদার মনে করেন

ওসি-ডিসি সম্পর্কে হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

‘কিছু কিছু ওসি-ডিসি নিজেদের জমিদার মনে করেন। মনে হয় তারাই অল ইন অল।’ এ মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার ফেনীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন শুনানিকালে বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরি এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরে মোয়াজ্জেমের জামিন আবেদনটি ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ হয়ে যায়।

মোয়াজ্জেমের জামিন শুনানিকালে তার কৌঁসুলি মো. আহসানউল্লাহ আদালতে বলেন, আমার মক্কেলের (মোয়াজ্জেম) মোবাইল থেকে একটি ভিডিও ক্লিপ এক সাংবাদিকের হাতে চলে যায়। তার হাত থেকেই নূসরাতের ভিডিওটি ছড়িয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকের হাতে ভিডিওটি আগে গেলে নূসরাতকে মরতে হতো না।’ অ্যাডভোকেট আহসানউল্লাহ বলেন, ‘দেশে সাংবাদিকদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। ওই সাংবাদিক ওসির মোবাইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে ছড়িয়েছে এবং তা স্বীকারও করেছেন। যে ধারায় মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তার সাজার মাত্রা কম। অপরাধটিও জামিনযোগ্য। অসুস্থ হওয়ার কারণে তার চিকিৎসা দরকার বলেই জামিন চাইছি।’ এসময় আদালত বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি গুরুতর। সে অপরাধে সাজা বেশি না কম তা বড় কথা নয়।’

পরে মোয়াজ্জেমের আইনজীবী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের ব্যক্তিগত বিষয়ে মন্তব্য শুরু করেন। এ প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, ‘সাংবাদিকরা সমাজের দর্পনের মতো, ব্যারিস্টার সুমন ও সমাজের দর্পন।’ তখন মোয়াজ্জেমের আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি চাকরি যারা করেন তারাই জানেন তাদের কি কষ্ট’

পরে সরকারপক্ষে শুনানি করতে গিয়ে এটর্নিজনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, সরকারি অফিসার হয়ে তিনি (মোয়াজ্জেম) ভিডিও করলেন, তা ভাইরাল হলো। তাকে জামিন দিলে জনমনে কী ম্যাসেজ যাবে? তিনি যদি সত্যিই অসুস্থ থাকেন সেই জন্য জেল অথরিটি রয়েছে। তারাই তাকে চিকিৎসা করাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজনারস সেলে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এটর্নিজেনারেল ওসি মোয়াজ্জেমের জামিনের বিরোধিতা করার পর তার আইনজীবী আহসানউল্লাহ আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়ার আগ্রহ দেখান। পরে আবেদনটি ‘নট প্রেস’ (উত্থাপিত হয়নি-মর্মে খারিজ) করেন আদালত। এর ফলে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে দায়ের হওয়া মামলায়ও জামিন পাননি মোয়াজ্জেম। এর আগে গত ১৭ জুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠায় আদালত। পরে ১ জুলাই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম ইসলাম চৌধুরি এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চে জামিন আবেদনের অনুমতি নেন ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী। সাইবার ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর গত ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। তারও আগে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।

প্রসঙ্গত: চলতিবছর ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নূসরাত জাহান রাফীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল নূসরাত মারা যান । এ ঘটনায় পৃথক একটি মামলায় তদন্ত শেষে ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২৯ মে ফেনীর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আগাম জামিন নিতে গত ১৬ জুন হাইকোর্টে হাজির হন মোয়াজ্জেম । আদালত তাকে জামিন না দিয়ে গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। পরে শাহবাগ তানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ১৭ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত মোয়াজ্জেমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ