পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আট মাসের বাঁধন ছিন্ন করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে গেলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে জোট গঠিত হয়েছিল, নির্বাচরের পর গত সাত মাসে তার কোনো অস্তিত্ব এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে জনগনের সকল সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জাতির আশা- প্রতাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় কোনো সমস্যা তুলে ধরতে পারছে না। এরকম একটি জোট যে আছে তা দেশের মানুষ জানেই না। তাতে মনে হয়, কোনকালে কখনো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে দেশে কোনো রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্ট বা ঐক্য গঠনই হয়নি।
আপনাদের দলের যে লিখিত বক্তব্য তাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা স্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাইলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আপনার প্রশ্নটা যখাযর্থ। লিখিত বক্তব্যেও আছে দেখুন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব বা ঠিকানা খোঁজার চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে জনগনের সকল সমস্যায় তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করছে। আমার মনে হয় না যে, এখানে কোনো অস্পষ্টতা আছে। সত্য কথা বলতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। তার কোনো কর্মকান্ড নেই। সেজন্যে সেখান থেকে আমরা চলে আসছি, যেখানে থেকে যাচ্ছি, আমাদের প্রত্যাহার করছি-এই শব্দটা ব্যবহার করা আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় নাই। সেজন্য তাদের খোঁজার কথাটা আমাদের মাথা থেকে ঝেরে ফেলেছি বলেছি। এতে প্রকৃত অর্থে আপনি যেটা বলেছেন সেটাকেই বুঝায়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এরকম অকার্যকর অবস্থা বা তাদের এই ব্যর্থতার জন্য কে দায়ী প্রশ্ন করা হলে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমিসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ যারা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলেন যারা কমবেশি সকলেই এ জন্য দায়ী।
আপনি আপনার নতুন চলার পথে কাদেরকে চাচ্ছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজনীতি একটা প্রবাহমান নদীর মতো, এটা স্রোতধারার মতো। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষের সাথে আমাদের কাজ করা উচিত। সেক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্টে যারা ছিলেন তাদের সাথে ভবিষ্যতে কোনো কাজ করবো না- এমন কোনো শর্ত নেই। আমরা নিভের্জাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করবো।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচনে পরেপরে আমি বলেছিলাম, আর কিছু হোক বা না হোক, বর্তমান সরকারি দল ভবিষ্যতে কোনো দিন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে না সেই রাস্তাটা তারা নিজেরাই নিশ্চিত করেছে। আমরা সমমনা গণতন্ত্রপ্রেমী এই দেশের প্রতিটি দলের সাথে কাজ করার চেষ্টা করবো।
ঐক্যফ্রন্টের ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরপরই সঠিকভাবে চলতে পারেনি। যেমন ফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে, সেই নির্বাচন হয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ফ্রন্টের ব্যানারে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে দেয়া হয়নি এবং ফ্রন্টের যে অফিস ছিলো পুরানা পল্টনে সেখান থেকেও দেয়া হয়নি। এটা দেয়া হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয় থেকে। ম‚লত নেতৃত্ব করেছে বিএনপি। এই জিনিসটা খুবই গুরুতর অন্যায় হয়েছে এবং ঐক্য গঠনের নীতিমালার পরিপন্থি হয়েছে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, এতো কিছুর পরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হাজার বছরের সাফল্য ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সরকার কর্তৃক একটা প্রহসনে পরিণত করতে পেরেছে। পৃথিবীতে এমন প্রহসন আগে-পরে কেউ দেখেনি। এই নির্বাচন না হলে সরকার যে এমন উলঙ্গভাবে দুষ্কর্ম করতে পারে-এটা কেউ জানতো না, বিশ্বাসও করতো না। ছোট্ট বাচ্চারাও এভাবে চুরি করতে পারে না। ঐক্যফ্রন্টের এই একটা সাফল্যের মাত্রা বা চিহ্ন ইতিহাসে থেকে যাবে।
নির্বাচনের পর গণফোরামের বিজয়ী প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। এটা জাতির পেছনে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, মানুষের আশা-আকাংখাকে পদদলিত করা হয়েছে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ভাবীকালে কখনো এতোটা নিবৃত্ত হবে, শুধু মনুসর নয় যারাই শপথ নিয়েছেন তাদেরকে মীরজাফরের চাইতেও খারাপভাবে দেখা যেতে পারে।
গণফোরামের পর বিএনপির একজন শপথ নিলে তাকে বহিস্কার ও অপর ৪জনকে শপথ গ্রহণ করতে বলার বিষয়টি দলের ‘দ্বৈতনীতি’ উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, একই কাজের জন্য একজনকে বহিস্কার ও চারজনকে দলীয় অভিনন্দন-এটা কী ব্যাপার আমরাও বুঝতে পারিনি। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-বগুড়া-৬ থেকে নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণ না করায় তার আসন শ‚ন্য হওয়ায় তার আসনে আবার বিএনপি নির্বাচন করে সংসদে গেলেন। যদি বিএনপিকে সংসদে যেতে হবে তাহলে ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেনো গেলেন না। জাতির কাছে স্পষ্ট হয়নি। নৈতিকভাবে এর কোনো জবাবও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সিদ্ধান্তের লিখিত বক্তব্য দলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে ফ্রন্ট থেকে ছেড়ে দেয়ার কয়েকটি কারণও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়, সংসদে যোগদান, বিএনপি মহাসচিবের সংসদে যোগদান না দেয়া, অন্যদের সংসদে য্গোদান, নির্বাচনের পর ফ্রন্টের পক্ষ থেকে সোনাগাজীর নুসরাত জাহান হত্যাকান্ড, বরগুনার রিফাত শরীফের হত্যাকান্ড, কৃষকের ধানের ন্যায্যম‚ল্য না পাওয়া, বাজেটের মধ্য দিয়ে গ্যাসের ম‚ল্য বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর করারোপসহ জাতীয় সমস্যার বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের ‘নিশ্চুপ’ ভুমিকাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বনামে- বেনামে যেভাবেই হোক চিহ্নিত ২০/২৫ জন জামায়াত নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো। এটা হবার কথা ছিলো না।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর গত বছরের ৫ নভেম্বর কাদের সিদ্দিকী যোগ দেন। একাদশ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখানের পর ফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত গণফোরাম ও বিএনপির সদস্য সংসদে যোগদান প্রশ্নে টানাপোড়নে গত ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এক মাস সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। এরপর ১০ জুন ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ঐক্যমতে পৌঁছায় যে, কাদের সিদ্দিকী আরো অপেক্ষা করবেন। এরও একমাস পর তিনি ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী, মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী, দলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার (বীর প্রতীক), সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।