পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আমদানির মতো রফতানিতেও জাল-জালিয়াতি চলছে। অসাধু চক্রের যোগসাজশে আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভারইনভয়েসিংসহ নানা উপায়ে চলছে অর্থপাচার করছে। আবার কারসাজি আর ফাঁকফোকরে পণ্য রফতানির নামে সরকারি ক্যাশ ইনসেনটিভ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে অপ্রচলিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এই ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে বেশি।
তবে আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক কর ফাঁকি রোধে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও রফতানিতে এই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এখনও অপ্রতুল। এই সুযোগে জালিয়াত চক্র সক্রিয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রফতানি প্রবৃদ্ধি দ্রæত বাড়ছে। এ অবস্থায় জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ করা না গেলে বিদেশে দেশের সুনাম নষ্ট হবে। বাংলাদেশি পণ্যের বাজার হারানোর আশঙ্কাও দেখা দেবে।
বছর কয়েক আগে চট্টগ্রামের সীতাকুÐের একটি বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনাল থেকে বিদেশে সুগন্ধি চাল রফতানির নামে কন্টেইনার ভর্তি ভ‚সি পাঠানো হয়। এই নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় হয়। আবার রফতানিকৃত হিমায়িত চিংড়িতে লোহার পেরেক আর ক্ষতিকর জেলি মিশ্রণের ঘটনাও ঘটেছে। হিমায়িত মৎস্য রফতানিতে নানা অনিয়মের কারণে বেশ কয়েক দফা বিদেশে বাজার হারানোর উপক্রমও হয়। সাস্প্রতিককালে এমন কোন বড় জালিয়াতির ঘটনা ধরা না পড়লেও রফতানিতে জালিয়াতি থেমে নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে কিছু অসাধু রফতানিকারক ও শিপিং প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে রফতানিতে জালিয়াতি করা হচ্ছে। পণ্য রফতানি না করে কিংবা কম পণ্য রফাতনি করে অধিক রফতানি দেখিয়ে সরকারের নগদ প্রনোদনার অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আন্ডার ইনভয়েসিং আর ওভার ইনভয়েসিংসহ নানা জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশ অর্থপাচারের ঘটনাও ঘটছে। সরকার অপ্রচলিত পণ্য রফতানিকে উৎসাহিত করছে। আর এই সুযোগে ওই চক্রটি অপ্রচলিত পণ্যের আড়ালে মূল্যবান পণ্য রফতানি করছে।
আমদানি-রফতানিতে জাল-জালিয়াতি আর মিথ্যা ঘোষণা প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন পণ্য আমদানির মতো বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানির ক্ষেত্রেও জাল-জালিয়াতি বা মিথ্যা ঘোষণার মতো ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, আমরা আমদানিতে যেসব অনিয়ম হচ্ছে তা প্রতিরোধেই মূলত বেশি সময় দিচ্ছি। আমাদের বেশি মনোযোগ আমদানিকে ঘিরে। লোকবলের প্রায় পুরোটাই এই বিষয়টি নিয়েই ব্যস্ত। তবে রফতানিতেও যাতে বড় ধরনের কোন জালিয়াতি না হয় সেদিকেও আমাদের নজর রয়েছে। লোকবল সঙ্কটের কারণেও সবদিক অনেক সময় তদারক করা সম্ভব হয় না বলেও জানান তিনি।
একই অভিমত জানালেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মারুফুর রহমান। তিনি বলেন, রফতানির ক্ষেত্রেও এ ধরনের অনিয়ম থাকতে পারে। সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ থেকে রফতানি দ্রæত বাড়ছে। বিশেষ করে অপ্রচলিত পণ্য রফতানিও বাড়ছে প্রতিবছর। এসব খাতে রফতানি বাড়াতে উৎসাহিত করছে সরকার। দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্পের হাত ধরে। হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা এবং প্রকৌশল শিল্প মিলে রফতানি আয় আসে প্রায় ৯৫ শতাংশ। এর বাইরে ৫ শতাংশ রফতানি আয় আসে অপ্রচলিত পণ্য থেকে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি’র হিসাবে অপ্রচলিত পণ্যের রফতানি প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। বাঁশ, মানুষের চুল, খয়ের, হাতে তৈরী টুপি, আগড়, আতর, নকশি কাঁথা, শীতল পাটি, গোশত, মধু, পাঁপড়, প্রাণিজ পণ্য, কাঁকড়া ও কুঁচে, জবাই করা প্রাণীর ফেলনা অংশ, শাকসবজি, ফলমূলসহ বেশকিছু পণ্য রফতানিতে বছরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে শতভাগের বেশি।
ইপিবি চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক কংকন চাকমা বলেন, রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার এসব পণ্য রফতানিকে উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু কিছু পণ্য রফতানিতে ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হচ্ছে। রফতানি আয়ের দুর্বল অবস্থানে থাকা ১২টি পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে খাতগুলোর সমস্যা চিহ্নিত এবং তা দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১২টি খাতের মধ্যে রয়েছে জাহাজ, ওষুধ, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স, কাগজ, রাবার, আইসিটি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাদুকা, লাগেজ, প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালস ও খেলনা।
আমদানি-রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি বৃদ্ধি করতে হলে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াত বা কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হলে বিদেশ দেশের মর্যাদা ক্ষুণœ হবে। দিনে দিনে বাংলাদেশি পণ্যের বাজারও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।