Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভেজিটেবল জোনে বিষ

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ৭ জুলাই, ২০১৯

সবজিতে বিষ ব্যবহার বন্ধ হয়নি। পোকা-মাকড় দমনে বিষ ব্যবহার হচ্ছেই। মাঠে মারা যাচ্ছে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের আন্দোলন। যশোর শহরে কাঁচাবাজার করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক জলিল উদ্দীন বলেন, সবজির নামে আমরা কী খাচ্ছি তা দেখার কেউ নেই। আগে সবজির যে স্বাদ ছিল এখন তা নেই।

‘ভেজিটেবল জোন’ যশোরে সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই ‘ফেরোমেন ট্রাপ’সহ আইপিএমএর বিভিন্ন পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন শুরু হয়। মাঠে মাঠে বিস্তৃত হওয়ার বদলে একবারেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন প্রকল্প। বিশেষ করে বেগুনে ব্যবহৃত বিষ সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করছে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।

এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা কৃষিবিদ ডক্টর আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মাঠ দিবস ও উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ওপর চাষিদের সচেতন করছি। কীটনাশকের বিকল্প পদ্ধতির জন্য প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। কিন্তু সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে বেগুনে মৌসুমে ২শ’ বারও কীটনাশক স্প্রে করার রেকর্ড রয়েছে। এমনকি সকালে ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করে বিকালে বাজারজাত হচ্ছে। তার মতে, আমসহ ফলমুলে ফরমালিন ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও সবজিতে বিষ ব্যবহারের সুনির্দ্দিষ্ট কোন নিয়ন্ত্রণ আইন নেই। কীটনাশক ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে কোনরূপ বিধি-নিষেধও নেই। যার কারণে আমরাও মাঠে চাষিদের কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে কঠোর হতে পারছি না।

ডক্টর আখতারুজ্জামান বিদেশে কীটনাশকের ব্যবহারে কঠোরতা সম্পর্কে একটি প্রমাণ দিলেন। তিনি ১৯৯৫ সালে কীটতত্ত¡ বিষয়ে তার পিএইচডি কোর্সে যুক্তরাজ্যের রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ প্রোটেকশন বিভাগের প্রথিতযশা প্রফেসর ড. ভ্যান এমডোনের সাথে গবেষণা কাজ করতে যেয়ে তাকে ৫ ফোঁটা হালকামানের ম্যালাথিওন কীটনাশক ব্যবহারে ৫টি বন্ড পেপারে স্বাক্ষর দিতে হয়েছিল। তার মতে, দেশি বিদেশি কোম্পানীগুলোকে কীটনাশক বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। কীটনাশক ব্যবহার মানবদেহের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয়, মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। পরিবেশের জন্য উপকারী পোকা মাকড়ও ধ্বংস হচ্ছে।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং এন্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সবজির পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের বিকল্প ব্যবস্থাপনার উপর বেশি জোর দিতে হবে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ব্যাপারে চাষিদের আরো সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, জাপানে আমাদের দেশের চেয়ে ৭/৮গুণ বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়। তারা সচেতনভাবে স্প্রে করে ফসল উত্তোলন করে যার জন্য মানবদেহের ক্ষতি হয় না। বিশ্বে তাদের সব ফসল ‘সেভ ফুড’ হিসেবে পরিচিত। তার মতে, আমাদের দেশে টোটাল কীটনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে একটা নীতিমালা প্রনয়ণ জরুরি।

‘ফেরোমেন ট্রাপ’ পদ্ধতি চালুর সময়ে যশোর অঞ্চলে সবজির মাঠে গেলে সহজেই চোখে পড়তো ভিন্ন দৃশ্য। সবজির ক্ষেতে ২/৩ হাত অন্তর প্লাস্টিকের কৌটা টাঙিয়ে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় মারা হতো। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়, এটি পোকা-মাকড় মারার গন্ধ ফাঁদ। যা প্র­াস্টিকের কৌটা দিয়ে তৈরি। কৌটার দুইপাশে ছিদ্র করে তাতে এক ধরণের কেমিক্যাল বা নিমপাতা দেয়া হয়। গন্ধ ফাঁদে ট্রাইকোগ্রামা ও ক্রাইসোপাসহ উপকারী পোকা অবমুক্ত হয়। আর ক্ষতিকর পোকা-মাকড় মারা যায়। খরচ কম, লাভ বেশি। কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে হত না। কিন্তু কীটনাশকের কারবারীরা চাষিদের মধ্যে পাল্টা প্রচার চালিয়ে সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলে।
যশোরের খাজুরা সবজি চাষি আসমত আলী ও বারীনগরের মনোয়ার হোসেন বললেন, পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের বিকল্প কার্যক্রম মোটেও সফল হয়নি। তাদের মতে, চাষিদের অসচেতনতা ও অমনোযোগীতা এবং মাঠে কৃষি কর্মকর্তাদের জোরদার ভ‚মিকার অভাবে ওই পদ্ধতি মোটেও কাজে আসেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ