পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নেপালের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নিত্য ও ভোগ্যপণ্য সুলভে ক্রয়, উচ্চ শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিকটতর প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছে। ইতিপূর্বে দেশটির অতিমাত্রায় ভারত-নির্ভরতা কমে এসেছে। নেপালের মানসম্পন্ন কৃষিজ পণ্য ভাল দর পাচ্ছে। রফতানিও বাড়ছে।
নেপালের বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির ধারাবাহিক গতি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। একইভাবে অপর প্রতিবেশী দেশ ভুটানে বাংলাদেশের পণ্যের রয়েছে ব্যাপক কদর। তবে উভয় দেশ বন্দরবিহীন ভূমিবেষ্টিত। তাদের দৃষ্টি সুলভে বাংলাদেশের পণ্যের দিকেই।
অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে নেপাল ও ভুটানের স্থলপথে দূরত্ব খুবই কম। বাংলাদেশ ও নেপাল-ভুটানের মাঝে ভারতের ভূখন্ডের ভেতরে ভৌগোলিক আকৃতি অনুযায়ী রয়েছে একটি ‘চিকেন নেক’ বা মুরগির ঘাড়। সেই ফুলবাড়ী-শিলিগুড়ি করিডোরের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। প্রস্থ ২১ থেকে স্থানভেদে ৪০ কি.মি.। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সঙ্কীর্ণ ভারতীয় ভূখন্ড, যা চিকেন নেক নামেই পরিচিত। এর একপাশে বাংলাদেশ এবং অন্য পাশে ভ‚টান ও নেপাল। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত ফুলবাড়ী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরফলে ভারতের ক্ষুদ্র এই করিডোর রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশ-নেপাল পণ্যসামগ্রী পরিবহন তথা বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার লাভ করে।
অথচ ২১ বছর অতিবাহিত হলেও সেই চুক্তির কথাগুলো কাজীর গরু কেতাবে আছে বাস্তবে নেই। আর সেই সামান্য একটি মুরগীর ঘাড়ের জায়গা দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের আমদানি ও রফতানি পণ্য আসা-যাওয়ায় শতরকম বাধা-বিপত্তি দেয়া হচ্ছে। ভারতের অশুল্ক বাধা, হয়রানি, জটিলতা ও কথিত নিয়মের মারপ্যাঁচে পণ্য চালান উভয় দেশে অনায়াসে চলাচল করতে পারে না। পদে পদে বেগ পেতে হয়।
অনেক সময়েই বাংলাদেশ ও নেপালমুখী সারি সারি ট্রাক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে করে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পচনশীল বিশেষত কৃষি-খামারজাত পণ্য ও খাদ্যপণ্য বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিরুৎসাহিত হচ্ছেন দু’দেশের ব্যবসায়ী মহল।
নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্য সচল রাখতে হলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত মুরগির ঘাড়ের মতো কড়িডোরটি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা দুই ভাগ হলে শিলিগুড়ি চিকেন নেক করিডোর সৃষ্টি হয়। ২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এ অঞ্চলে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এ অঞ্চলে অবাধে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর কথা বলা হয়। তবে কার্যত ভারতের অসহযোগিতার মুখে বিশাল এই বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে ভারতের অসহযোগিতা ও নানামুখী বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও গত কয়েক বছরে দ্বিপক্ষিক বাণিজ্যের হিসাবে নেপালে বাংলাদেশের রফতানি বেড়েই চলেছে। গত ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নেপালে রফতানি করে প্রায় সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার, ২০১৭ সালে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার, ২০১৬ সালে ৩৮৭ কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী। নেপাল থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় গতবছর ১০৮ কোটি মালামাল। ২০১৪ সালে নেপালে রফতানি হয় ১৫৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পণ্য এবং আমদানি হয় ১৬১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার পণ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের গুণগত ভালো মানের খাদ্যপণ্য, সিরামিকস সামগ্রী, ওষুধ, আসবাবপত্র, সাবান, মেলামাইন, হোম টেক্সটাইল, তৈরিপোশাক, গৃহস্থালী পণ্য নেপালে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া নির্মাণ সামগ্রী, প্লাস্টিকজাত পণ্য, তথ্য-প্রযুক্তি ও সেবাখাতের পণ্যসামগ্রীর দেশটিতে রফতানির বড় ধরনের সুযোগ আছে। একই ধরনের পণ্যসামগ্রীর চাহিদা রয়েছে ভুটানেও। আবার নেপাল থেকে সুলভে আমদানি করা হয় ডাল, মসলাসহ হরেক খাদ্যপণ্য। নেপাল, ভুটানের অগণিত শিক্ষার্থী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। এমনকি তাদের কেউ কেউ নেপাল, ভুটানে রাষ্ট্র ক্ষমতায়ও আসীন হয়েছেন।
ভূ-প্রাকৃতিকভাবে বন্দর সুবিধা বঞ্চিত ভ‚মিবেষ্টিত (ল্যান্ড লক্ড) দেশ ভুটান ও নেপাল। উভয় দেশ চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারিত করতে আগ্রহী। তাছাড়া বাংলাদেশ নিজের বন্দর ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে অনেক ধরনের পণ্যসামগ্রী পুনঃরফতানি করতে পারে। নেপালের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কয়েক দফায় মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। নেপাল ও ভুটানের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে উৎপাদিত গুণগত ভালোমানের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, পানীয়, রাসায়নিক দ্রব্য, সিরামিকস সামগ্রী, ওষুধ, আসবাবপত্র, স্টিল ও আয়রন সামগ্রী, সাবান, প্রসাধন সামগ্রী, মেলামাইন ও প্লাস্টিকজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, টেরিটাওয়েল ও পোশাক সামগ্রী, খেলনা, পাটজাত দ্রব্য, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিকস ও আইটি সামগ্রী আমদানির জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করে আসছেন।
অথচ বন্দর সুবিধা না থাকার ফলে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করে দীর্ঘ ঘুরপথে আমদানি পণ্য নিয়ে যেতো নেপাল। এতে করে ব্যয় ও সময়ের অপচয় হয় বহুগুণ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে সড়কপথে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই নেপাল ও ভুটানে পণ্যসামগ্রী পৌঁছানো অনায়াসেই সম্ভব। এরজন্যই ভারতের প্রতিবেশীসুলভ দায়িত্ব বর্তায় ছোট একটি চিকেন নেক বাধাহীন ও উন্মুক্ত রাখা। এহেন সহযোগিতার বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান, কনভেনশনেও গুরুত্ব পেয়েছে।
গ্যাট, ১৯৯৪ (ধারা ৫, অনুচ্ছেদ ১) অনুযায়ী কোনো ফ্রেইট ট্রাফিক পণ্যসামগ্রী যদি কোনো দেশে প্রবেশের পূর্বে যাত্রা শুরু করে এবং উক্ত পণ্য দেশের বাইরে যাত্রা শেষ করে তবে তাকে ট্রানজিট, করিডোর কিংবা ট্রান্সশিপমেন্ট ট্রাফিক (পণ্যসামগ্রী) হিসেবে গণ্য করা হবে। যেগুলো বাধাহীনভাবে আসা-যাওয়া বা পরিবাহিত করা যাবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুযোগ-সম্ভাবনা ব্যাপক। নেপাল মংলা বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের এ বিষয়ে অনীহা নেই। কেননা উভয় দেশের অর্থনীতিতে তা সুফল দেবে। কিন্তু ভারতের অসহযোগিতা ও গড়িমসির কারণে সামান্য দূরত্বের একটি চিকেন নেক ব্যবহার করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটানের বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতকে নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। পরে তা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নেপাল, ভুটানসহ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশসমূহের মধ্যকার বাণিজ্যকে প্রসার করতে হলে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।