পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেনবহরে হামলার মামলায় ৯ জনের ফাঁসি ও ২৫ জনকে যাবজ্জীবনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে আরো ১৩ জন আসামীকে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২ টায় পাবনার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর দন্ডপ্রাপ্তদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলায় ৫২ জন আসামির মধ্যে একজন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তসহ ১৪ জন এখনও পলাতক রয়েছেন এবং পাঁচজন বিভিন্ন সময় মৃত্যুবরণ করেছেন। আসামিরা সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে সাজা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি একেএম আক্তারুজ্জামান (৬০), ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও তৎকালীন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু (৫০), ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমান বাবলু (৫৭), রেজাউল করিম শাহিন (৪৫), অটল (৪৫), আজিজুর রহমান ওরফে ফরিং শাহিন (৪৬), শ্যামল (৪০), মাহবুবুর রহমান ওরফে পলাশ (৪০) ও শামসুল আলম (৫৫)। এদের মধ্যে জাকারিয়া পিন্টু পলাতক রয়েছেন। মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে তিন বছর করে সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম (পলাতক), আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান (পলাতক), আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো. মামুন (পলাতক), মামুন-২ (পলাতক), সেলিম হোসেন, মো. কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাইজু (পলাতক), আব্দুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম।
১০ বছর করে কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, নেফাউর রহমান ওরফে রাজু, আজমল হোসেন ডাবলু, আনোয়ার হোসেন জনি, রনো (পলাতক), বরকত, চাঁদ আলী (পলাতক), এনামুল কবির, মুক্তা, হাফিজুর রহমান ওরফে মুকুল, হুমায়ন কবির ওরফে দুলাল (পলাতক), জামরুল (পলাতক), তুহিন বিন সিদ্দিক ও ফজলুর রহমান। এদেরকে একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী আকতারুজ্জামান মুক্তা বলেন, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মস‚চিতে অংশ নিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই ট্রেনে ও তার কামরায় গুলিবর্ষণ করেন। এ ঘটনায় তৎকালীন জিআরপি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নামে মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ মামলাটি পুনঃতদন্ত করে। তদন্ত শেষে নতুন করে ঈশ্বরদী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এ বছরের ৩০ জুন বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের ৩০ জন নেতাকর্মী আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। গত রোববার আদালতে আসামিদের সাফাই সাক্ষী উপস্থাপনের নির্ধারিত দিন ছিল। ৩০ জন আসামি কোনো সাক্ষী উপস্থাপন না করে আদালতে জামিন আবেদন ও সময় প্রার্থনা করেন। আদালত তাদের প্রার্থনা নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর গত সোমবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। গত মঙ্গলবার মামলার আরও দুই আসামি ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোখলেছুর রহমান ওরফে বাবলু এবং বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম টেনু আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ এ দিন রাতেই মামলার আরেক আসামিকে গ্রেফতার করে। জানা যায়, এই মামলায় এ পর্যন্ত ৩৩ জন আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন ১৪ জন এবং মারা গেছেন পাঁচ আসামি।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরসহ পাবনা শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কড়া নিরাপত্তায় আসামিদের বেলা ১১টার মধ্যেই আদালতের হাজতখানায় নেয়া হয়। দুপুর পৌনে ১২ টায় স্পেশাল ট্রাইবুনাল-৩ এর বিচারক মো. রুস্তম আলী এজলাসে বসেন এবং রায় ঘোষণা শুরু করেন। দুপুর ১২টায় রায় ঘোষণা শেষ হয়। এ সময় আদালতে সরকারপক্ষ এবং আসামিপক্ষের শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে থেকেই আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এবং আসামিদের স্বজনরা এসে ভিড় করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সর্দার আদালত চত্বরে আসেন। রায় ঘোষণার পর দন্ডপ্রাপ্তদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আসামিদের আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজনকে উচ্চস্বরে বলতে শোনা যায়, আমাদের অন্যায়ভাবে দন্ড দেয়া হয়েছে। আমরা এ রায় মানি না। অন্যদিকে রায়ের পর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকমীরা আদালত চত্বরে অনন্দ মিছিল করেন এবং রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেন। তারা অবিলম্বে রায় কার্যকরের দাবি জানান। আদালত চত্বরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মিছিল করেন।
সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট গোলাম হাসনায়েন ও পিপি আক্তারুজ্জামান মুক্তা। অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট ওবায়দুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম পটল, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ কবির লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সনৎ কুমার সরকার, অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার, মইনুল ইসলাম প্রমুখ।
সরকারপক্ষের আইনজীবী ও পিপি আক্তারুজ্জামান মুক্তা বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। ২৫ বছর ধরে পাবনাবাসী এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা ন্যায় বিচার থেবে বঞ্চিত হয়েছি। গত ১ জুলাই যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এত তড়িঘড়ি করে এত বড় একটি মামলার রায় দেয়া হলো যা অস্বাভাবিক। আমরা শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।