পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গবেষণা অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে কর্মক্ষেত্রে। তীব্র তাপদাহে কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে কৃষি, শিল্প, নির্মাণ, সেবাসহ অন্যান্য খাতে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তাপদাহের ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের শিল্প খাতে নষ্ট হবে চার দশমিক ৯৬ শতাংশ কর্মঘণ্টা। যদিও কৃষি ও নির্মাণ খাতে এ হার নয় দশমিক ৫৮ শতাংশ হতে পারে।
‘ওয়ার্কিং অন আ ওয়ার্মার প্লানেট : দি ইম্প্যাক্ট অব হিট স্ট্রেস অন লেবার প্রডাক্টিভিটি অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশ করে আইএলও। আফ্রিকা, আমেরিকা, আরব দেশগুলো, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া-এ ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে কর্মক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ প্রতিবেদনের দক্ষিণ এশিয়া অংশে বাংলাদেশের পাশাপাশি আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় ১৯৯৫ সালে কর্মঘণ্টা নষ্টের হার ও ২০৩০ সাল নাগাদ কর্মঘণ্টা নষ্টের সম্ভাব্য হার উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএলও বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ কৃষি, উৎপাদনসহ সব খাতেই বাংলাদেশে তাপদাহের প্রভাব আরো বিরূপ হবে। এ সময় তাপদাহে বাংলাদেশের কৃষি খাতে কর্মঘণ্টার নয় দশমিক ৫৮ শতাংশ নষ্ট হবে। শিল্প বা উৎপাদন খাতে নষ্ট হবে কর্মঘণ্টার চার দশমিক ৯৬ শতাংশ। একইভাবে নির্মাণ ও সেবা খাতে নষ্ট হবে যথাক্রমে নয় দশমিক ৫৮ ও শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট কর্মঘণ্টার চার দশমিক ৮৪ শতাংশ নষ্ট হবে বাংলাদেশে।
তাপদাহের প্রভাবে ১৯৯৫ সালে নষ্ট হওয়া কর্মঘণ্টার চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময় বাংলাদেশের কৃষি খাতে ছয় দশমিক ২৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা নষ্ট হতো। শিল্পে নষ্ট হতো কর্মঘণ্টার দুই দশমিক ৫৯ শতাংশ। একইভাবে নির্মাণ ও সেবা খাতে নষ্ট হতো যথাক্রমে ছয় দশমিক ২৮ ও শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট কর্মঘণ্টার চার দশমিক ২৪ শতাংশ নষ্ট হতো বাংলাদেশে।
তবে তাপদাহের ফলে বাংলাদেশের শিল্প খাতে কর্মঘণ্টা নষ্টের হার বাড়বে, এমনটা মনে করেন না দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, শুধু পোশাক খাত নয়, সার্বিক শিল্প খাত বিবেচনায় নিলেও কর্মক্ষেত্রে দাবদাহ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। এর পক্ষে তাদের যুক্তি, আগের মতো ক্ষুদ্র পরিসরে কোনো কারখানা এখন বাংলাদেশে গড়ে ওঠার সুযোগ নেই। আর যে কারখানাগুলো হচ্ছে, সেগুলোর যন্ত্র থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্র ও পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক তাপ বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে তাপদাহের মতো কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ এখন নেই।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. মশিউল আজম বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে যদি বলা হয়, তবে আমরা বলব, আমরা এখন পরিবেশ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। এ কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে। ১৯৯৫ সালে একটি কারখানায় যে পরিমাণ উষ্ণ পরিবেশ ছিল, এখন তা অনেক কম। বিশ্বের সবচেয়ে সৃজনশীল যন্ত্রের ক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশ। এ চিত্র শুধু পোশাক খাত নয়, সব শিল্পের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কাজেই ২০৩০ সাল নাগাদ শিল্পে হিট স্ট্রেসের চিত্রটি খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করছি না।
এদিকে কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক বিশ্লেষণ দেখালেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অংশ হিসেবে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের পরিস্থিতি ইতিবাচক হবে বলে মত প্রকাশ করেছে আইএলও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপদাহের প্রভাবে ১৯৯৫ সালে জিডিপির পাঁচ শতাংশের বেশি ক্ষতি হতো থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশে। এ হার ২০৩০ সাল নাগাদ চার দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে।
বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রগুলোয় পেশাগত ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি ও তদারকির কাজ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। সংস্থাটিও আইএলওর এমন পূর্বাভাসের সঙ্গে একমত নয়। ডিআইএফই মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, অতিরিক্ত তাপে বাংলাদেশের শিল্প খাতে কর্মঘণ্টা নষ্টের ঝুঁকির বিষয়টির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। যদি দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প পোশাক খাতকে বিবেচনায় নিই, তাহলে সেখানে গত কয়েক বছরে পেশাগত ও স্বাস্থ্যনিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই সচেতন হয়েছে। সার্বিকভাবে কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটেছে। অন্য শিল্প যেগুলোয় তাপের ব্যবহার বেশি, সেই শিল্পগুলোও এখন কর্মপরিবেশের বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে। সব দিক বিবেচনায় ২০৩০ সাল নাগাদ শিল্পে কর্মঘণ্টা বেশি নষ্ট হবে, এমন পূর্বাভাস বাস্তবে রূপ নেয়ার আশঙ্কা নেই বলে আমি মনে করি।
আইএলওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর মোট কর্মসংস্থানের ২৩ শতাংশ নির্মাণ খাতে। এ অঞ্চলে বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে ৮০ শতাংশের বেশি আর্দ্রতাসহ তাপমাত্রা ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। ফলে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের বড় অংশই তাপদাহের ঝুঁকির মধ্যে আছে, যাদের বেশির ভাগই আবার অভিবাসী শ্রমিক। জিসিসি দেশগুলোর নির্মাণ খাতের শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশই পাকিস্তান, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে যাওয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।