Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পিনপিনে বৃষ্টিপাত খরতাপের আষাঢ়!

মেঘ-বৃষ্টিরোধক ‘এল-নিনো’ অবস্থা অব্যাহত

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

‘কিছু কিছু জায়গায়’ এবং ‘দুয়েক জায়গায়’ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া বিভাগ। এভাবে ভরা বর্ষার মেঘ-বাদলের আষাঢ় মাসের একে একে তিনটি সপ্তাহ পার হওয়ার পথে। অথচ টানা মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ নেই। আজ বৃহস্পতিবারসহ আরো অন্তত দুই দিন আষাঢ়ের ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টির আশা নেই। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টি ঝরেছে।

তবে তা খুব সাময়িক এবং প্রায়ই এলাকায় পিনপিনে বৃষ্টি। এতে করে নানামুখী দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। কক্সবাজারের টেকনাফে বিক্ষিপ্ত বর্ষণ হয় ১০৩ মিলিমিটার। ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর বিভাগে তেমন বৃষ্টি হয়নি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ৩৫.৭ ডিগ্রি সে.। হিমেল দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ছোঁয়ায়, মেঘের ছায়ায় আষাঢ়ের তাপমাত্রা থাকবে সুশীতল। অথচ গরমের তীব্রতা কিছুটা কমলেও তা স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে। আষাঢ় মাসে খরতাপে জনজীবনে পড়ছে নানামুখী বিরূপ প্রভাব প্রতিক্রিয়া।

ভারতের উড়িষ্যা থেকে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মধ্য প্রদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।
আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার অবস্থার তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। বাংলাদেশের ওপর বর্ষার মৌসুমী বায়ু ছড়িয়ে পড়েছে দশ-বারো দিন আগে। কিন্তু তা সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। বরং স্থির হয়ে আছে। অনেকটাই নিষ্ক্রীয়।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) মাসে দেশে সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন এবং গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে ছিল। যা যথাক্রমে ১.৮ ডিগ্রি, ০.৬ ডিগ্রি এবং ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৭.৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিগত মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি ঝরেছে গড়ে ২৫.২ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান তথা এই উপমহাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওপর গত মে মাস থেকে আবহাওয়া রাজ্যে ‘এল-নিনো’ অবস্থা বিরাজ করছে। এর ফলে এই অঞ্চলের সাগর-মহাসাগরের উপরতলের উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন। স্বাভাবিক মেঘমালা ও বৃষ্টিপাতের আবহ তৈরির প্রাকৃতিক ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। খরা-অনাবৃষ্টি, হঠাৎ ভারী বৃষ্টির কবলে পড়েছে বিশাল এ অঞ্চল। ‘এল-লিনো’র প্রভাব এখনও কাটেনি। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধকল এসে পড়েছে বাংলাদেশেও।
বাংলাদেশে এবার ছিল স্মরণকালের দীর্ঘতম গ্রীষ্মকাল। যদিও তাপমাত্রা অতীতের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়ায়নি। তবে ভারতের দিল্লী, উত্তর প্রদেশ, তেলেঙ্গনাসহ বিভিন্ন রাজ্যে তাপমাত্রার পারদ ৫০ ডিগ্রি সে. ছুঁয়ে গেছে। তাপপ্রবাহে কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু ঘটে।

বিশেষজ্ঞ সূত্র মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অকস্মাৎ ভারী বর্ষণের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গে অতিবৃষ্টি হলে উজানের ঢলের তোড়ে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলে সাময়িক বন্যার শঙ্কা আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ