Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী দালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ডব্লিউইএফের সামার দাভোস নামে পরিচিত এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দিয়েছেন সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

গতকাল মঙ্গলবার চীনের দালিয়ান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকালে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং। ডব্লিউইএফের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস সোয়াব এবং লিআনিং প্রদেশের গভর্নর ত্যাং ইউজুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান, ব্যবসায়ী, সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিল্পীসহ ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘লিডারশিপ ৪.০-সাকসিডিং ইন আ নিউ এরা অব গ্লোবালাইজেশন। সম্মেলন থেকে বৈশ্বিক পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অসমতা ও প্রযুক্তিগত সঙ্কটের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হবে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন, অটিজম এবং নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফাররুক খাঁন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। এ ছাড়াও আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চীনের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সংস্কারের প্রতি তার দেশের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নতুন যুগের ক্ষেত্র উন্মোচন করব। লী কেকিয়াং সমৃদ্ধি এবং সংস্কার অব্যাহত রাখতে একটি সমন্বিত কৌশল প্রণয়ণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বিধি-বিধান এবং আইনগুলোকে আমরা বাতিল করব।

চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উৎপানমুখী শিল্প-কারখানাগুলোক ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। তার দেশের সেবাখাত অন্যান্য খাতের চাইতে দ্রুত বর্ধনশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তাদের জন্য সেবাখাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়েও অঙ্গীকারাবদ্ধ। লী কেকিয়াং বলেন, অর্থনীতি এবং বাজার দুটোই একসঙ্গে দ্রুত বাড়ছে। কাজেই এজন্য বৈশ্বিক নীতিকে আরো উদারিকরণের এবং ব্যবসাবান্ধব করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ব ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের মন্থর গতির প্রসঙ্গে উল্লেখ করে চীনের প্রধানমন্ত্রী এই অবস্থার উত্তরণে নতুন অংশীদারিত্ব সৃষ্টি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন বাণিজ্য উদারিকরণ এবং সমতাভিত্তিক মুনাফা অর্জন, যোগ করেন তিনি।
ডব্লিউইএফ সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক একটি সংগঠন। ১৯৭১ সালে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সংগঠনের জন্ম। সংগঠনটি ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি পায়। ডব্লিউইএফের লক্ষ্যে বলা হয়েছে, এটি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহকে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সমাজের অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও শিল্প খাতকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ দিনের সফরে গত সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে চীনের দালিয়ানে পৌঁছান। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে এই দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফর হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে। বেইজিং রোহিঙ্গা সঙ্কটটি নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে আটটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় ডালিয়ান সিটির মেয়র তান চেংজু উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে শাংরি-লী হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ডালিয়ান সফরকালে তিনি এখানেই অবস্থান করবেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ডালিয়ানে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় অংশ নেবেন এবং বেইজিংয়ে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২ জুলাই সকালে ডালিয়ান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডব্লিউইএফ সামার দেভোর্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সভাপতি ক্লাউস স্কোয়াবের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিকেলে তিনি ডালিয়ান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ বুধবার বেলা ১১টায় চীন সরকারের দেয়া একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটযোগে বেইজিংয়ের উদ্দেশে ডালিয়ান ত্যাগ করবেন। ফ্লাইটটির ওই দিনই দুপুর সোয়া ১২টায় বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর পর একটি মোটরশোভা যাত্রায় তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ডাইয়াউতাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বেইজিংয়ে বিকেলে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে নৈশভোজ সভায় যোগ দিবেন। শেখ হাসিনা ৪ জুলাই সকালে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপল এ বীরদের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপল’এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।

তিনি একই দিনে বিকেলে সিসিপিআইটি’তে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বাণিজ্য রাউন্ড টেবিল বৈঠকে যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ জুলাই সকালে ‘প্যানগোয়াল ইনস্টিটিউশন’ নামে একটি চীনা থিঙ্ক ট্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার কর্মসূচি রয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলোর সিইওরা তার হোটেল স্যুটে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং তিনি এনপিসি লী ঝাংশু’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ডাইয়াউতাইয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং’র সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্টের দেয়া এক ভোজ সভায় যোগ দিবেন। সম্মেলনে যোগদানকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। এই সম্মেলন থেকে বিশ্ব পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক অসমতা এবং প্রযুক্তিগত সংকটের বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী চীনে তার সফর শেষে আগামী ৬ জুলাই স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে চীনের রাজধানী বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন এবং একই দিনে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে হযরত (রা.) শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছবেন।



 

Show all comments
  • Arun Kumar ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৪২ এএম says : 0
    নেত্রীর চীন যাত্রা সফল হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Ratan Kumar ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৪৪ এএম says : 0
    আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammod Shafiqur Rahman ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
    Please go ahead for an honest digital Bangladesh.Almighty may with you for the success..
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Ahmed ৩ জুলাই, ২০১৯, ৪:০৫ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে বিশেষভাবে চেষ্টা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ৩ জুলাই, ২০১৯, ৪:০৬ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঘিরে দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশ ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে ইতিবাচক কিছু একটা হবে এমন আশায়।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ৩ জুলাই, ২০১৯, ৪:০৭ এএম says : 0
    রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীনের অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মানবতার কারণে থাকতে দেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে দেশ ও জনগণের জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ