Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রিধারীরা বঞ্চিত

কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসকদের পদোন্নতি : ২১ জনের ৯ জনই অন্য বিষয়ের

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সহকারী অধ্যাপক পদে চিকিৎসকদের ডিপিসির (ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি) পদোন্নতি দেয়া হলেও বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রিধারীদের বঞ্চিত করে এক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। প্রমোশনবঞ্চিতরা বলছেন, এধরনের অনিয়ম অনভিপ্রেত। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে এমনটি হওয়ার কথা নয়। তারপরেও খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রায় অভিন্ন মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত চিকিৎসকদের ডিপিসির (ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি) মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। সেই পদোন্নতীতে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে ২১ জনের পদোন্নতি হয়। এক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রিধারীদের বঞ্চিত করে অন্য বিষয়ের ৯ জন চিকিৎসককে অন্তর্ভুক্ত করে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এমনকি তালিকায় রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১ জন সহকারী পরিচালক ও ৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের।

পদোন্নতি বঞ্চিতরা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মেডিক্যাল কলেজের জন্য ৩ মাস আগে প্রকাশিত কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষকদের তালিকা পদোন্নতিতে অন্তর্ভুক্ত না করে ক্লিনিক্যাল বিষয়ে কর্মরত শিক্ষকদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। পদোন্নতির তালিকায় দেখা গেছে, যে ২১ জনের পদোন্নতি হয়েছে তারমধ্যে ৭ জনের এমপিএইচ এর বিষয় ছিল এপিডেমিওলজি, দুইজন হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট এবং ৪ জনের এমপিএইচ-এর বিষয় উল্লে­খ নেই। অর্থাৎ ২১ জনের মধ্যে ১৩ জনই অন্য বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে বেসিক সায়েন্সভুক্ত এ বিষয়টিতে প্রকৃত শিক্ষকের পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। এছাড়া পদোন্নতির তালিকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১ জন সহকারী পরিচালক ও ৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা ইতিপূর্বে মেডিক্যাল শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত না থাকলেও মাঝপথে এসে শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেলেন। যা রীতিমতো বিস্ময়কর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্তৃপক্ষের এই ধরনের পদোন্নতির প্রদানের কারণে কমপক্ষে ১৩ কমিউনিটি মেডিসিনে এমপিএইচ করা শিক্ষকবঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের মধ্যে ২০ এবং ২২তম ব্যাচের বিসিএস’র কেউ পদোন্নতি না পেলেও ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলোর ২৭-২৮তম বিসিএস প্রার্থীরাও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অন্য বেসিক সায়েন্স বিষয়গুলোতে ৩০তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। অথচ কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে ২০তম বিসিএস’র পরের কারো পদোন্নতি হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ৩৬টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে রাজধানীর কলেজগুলো ছাড়া বাকি ২৫-২৬ টিতে কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। এমবিবিএস দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষায় এ বিষয়ের কমপক্ষে দুইজন ইন্টারনাল সহকারী অধ্যাপক থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ দু’একটি কলেজে ১জন শিক্ষক থাকলেও অনেক কলেজে কোন শিক্ষকই নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজে এই বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। তাই সেখানে নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক শিক্ষার্থীদের কমিউনিটি মেডিসিন পড়ান। এ সমস্যা অনেক মেডিক্যালে, কলেজে রয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষার গুণগতমান ন্যূনতম বজায় রাখতে হলে দেশের সরকারী ৩৬টি মেডিক্যাল কলেজে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ জন সহকারী অধ্যাপক জরুরিভাবে প্রয়োজন। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে পদোন্নতির ফাইলে ক্লিনিক্যাল বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকায় হয়তো মেডিসিনের একটি বিষয় মনে করেই কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে মাত্র ২১ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। ৩ মাস পূর্বে বেসিক সায়েন্সে ৭টি বিষয়ে পদোন্নতির সময় অধিকাংশ বিষয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন কে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। ফলে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষকের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মেডিক্যাল উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নিপসমে ৮টি বিষয়ে এমপিএইচ কোর্স চালু রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক স্বল্পতা দূর করতে আরো ৪টি পুরনো মেডিক্যাল কলেজে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে এমপিএইচ কোর্স রয়েছে। যে কারণে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমপিএইচ (কমিউনিটি মেডিসিন) এবং এমফিল (পিএসএম) ডিগ্রিধারীরা অগ্রাধিকার পাওয়া কথা। কিন্তু পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

এ ধরনের আচরণে পদোন্নতি বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয় জানিয়ে অবিলম্বে এর সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছেন। তাদের দাবি কমিউনিটি মেডিসিনবহির্ভূত এমপিএইচ-এর অন্য বিষয়গুলো থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত ১০ জনকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে অথবা অতিরিক্ত ১০-১২ জনকে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজে মানিকগঞ্জের পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষক ডা. মুহাম্মদ আসাদ বলেন, আমি ১০ বছর ধরে শিক্ষকতার পেশায় আছি। কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের সূচনা থেকে চলতি দায়িত্বে থেকে ছাত্রছাত্রীদের কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে পড়িয়ে আসছি। আমার উচ্চতর ডিগ্রি এমপিএইচ (কমিউনিটি মেডিসিন)। আমি ২২তম বিসিএস’র কর্মকর্তা। এমপিএইচ’র অন্য বিষয়ধারীদের পদোন্নতি প্রদান করায় আমি বার বার পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছি। এমনকি ২২তম বিসিএস হওয়া সত্তে¡ও ১৬ বছর চাকরি করেও কোনো পদোন্নতি পেলাম না। অথচ ক্লিনিক্যাল বিষয়ে আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রী সহকারী-সহযোগী অধ্যাপকও হয়ে গেছেন। মেডিসিন-সার্জারীর ১ বিষয়ের প্রার্থীর অন্য কোনো বিষয়ে পদোন্নতি পান না। অথচ কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে এই নীতিমানা হচ্ছে না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সু-বিচার প্রার্থনা করেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমনটি হওয়ার কথা নয়। তারপরেও তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। তবে একই ধরনের বিষয় হলে হতে পারে। যেমন- এপিডেমিওলজি এবং কমিউনিটি মেডিসেন বিষয়গুলো কাছাকাছি। তাই এক্ষেত্রে এপিডেমিওলজি বিভাগের কেউ কেউ কমিউনিটি মেডিসেন বিভাগের পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে প্রশাসনে কর্মরত বা বিষয় উল্লে­খ না করে পদোন্নতির পাওয়ার কথা তার জানা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ