পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব মীর্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলার ২৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। পলাশির যুদ্ধে পরাজয় অতঃপর গ্রেফতারের পর ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই মীর জাফরের পুত্র মীর সাদিক আলী খান মীরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগ কারাগারেই সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। অস্তমিত হয় বাংলার সূর্য। হত্যার পর নবাবের রক্তাক্ত লাশ হাতির পিঠে করে মুর্শিদাবাদ শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। ১৭৩৩ সালে বিহারে জন্ম নেয়া সিরাজউদ্দৌলার খুনি মুহাম্মদী বেগকে লালনপালন করেন আলীবর্দী খানের স্ত্রী শরফুন্নেসা। তিনিই নবাবকে খুন করেন।
এর আগে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় ২৩ জুন সিরাজউদ্দৌলা লুটেরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধে পরাজিত হন। পশ্চিমবঙ্গের পলাশী প্রান্তরে আম্রকাননে নবাবের সেনাপতি মীর জাফর আলী খান, রাজবল্লভ, শওকত জঙদের মুনাফিকির কারণে নবাবের বাহিনীর পরাজয় ঘটে। এই পরাজয়ে মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। বাংলাসহ ভারত উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নামে বর্বর লুটেরা ইংরেজ শক্তির অভ্যূদয় ঘটে।
পলাশির পরাজয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা নৌকায় করে পরিবার (স্ত্রী-কন্যা) নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৩০ জুন ধরা পড়েন। তাকে মুর্শিদাবাদে এনে কারাগারে রাখা হয়। তাকে হত্যা করে দেহ খন্ড-বিখন্ড করে মুর্শিদাবাদের রাজপথে প্রদর্শন করা হয়। নবাব পরিবারের মহিলাদের বন্দি করে ঢাকার জিঞ্জিরায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নবাব পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সিরাজের পিতা জঈন উদ্দীন ছিলেন বিহারের শাসনকর্তা। মা আমেনা বেগম। ১৭৫৭ সালের এপ্রিল মাসে তিনি নানা (মাতামহ) আলবর্দী খানের স্থলাভিষিক্ত হন। ১৭৫২ সালের মে মাসে আলীবর্দী খান সিরাজউদ্দৌলাকে তার উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেন। আলীবর্দী খান ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। নানার ইন্তিকালের পরই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শাসনভার গ্রহণ করেন তরুণ নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
খালা ঘষেটি বেগমের কূটচালে তরুণ নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্তের জাল বিছানো ছিল চারদিকে। ১৪ মাস ১৪ দিনের নবাবীকালে সিরাজউদ্দৌলা নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেয়ার সময় পর্যন্ত পাননি। চক্রান্তে হাবুডুবু খেলেও তরুণ নবাব সিরাজ পুর্নিয়া জেলা থেকে কলিকাতা হয়ে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটার পথ ঘোড়া ছুটিয়েছেন। মসনদ ঠিক রাখতে ৫টি যুদ্ধে অংশ নিয়ে হয়েছে।
পলাশীর প্রান্তরে বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৭৫৭ সালে। অতঃপর ১৯০ বছর ইংরেজদের দখলে ছিল ভারতবর্ষ। পলাশির যুদ্ধে এক পর্যায়ে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের ইন্ধনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্তা রবার্ট ক্লাইভ য্দ্ধুরত তিন হাজার ইংরেজ ও দেশীয়, মাদ্রাজি সৈন্য নিয়ে আম্রকাননে শিবির স্থাপন করেন। এ সময় তাদের কাছে ছিল মাত্র ৯টি কামান। অন্যদিকে বিশ্বাসঘাতক প্রধান সেনাপতি মীর জাফরের পরামর্শে সিরাজ নিজের দেহরক্ষী সেনা নিয়ে পলাশী থেকে প্রাসাদে আসেন। এই সুযোগে মীর জাফর নবাবের পক্ষে যুদ্ধরত সেনাদের যুদ্ধ স্থগিত রেখে শিবিরে প্রত্যাবর্তন করার আদেশ দেন। শিবিরে ফেরার পথে ইংরেজদের কামানের গোলায় অনেক নবাব সেনা হতাহত হয়। মূলত সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের কলকাতাস্থ ‘কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্র’ ব্যাপারে মনোযোগী হন। ষড়যন্ত্র হাতেনাতে ধরতে ১৭৫৬ সালের ২৯ মে কাশিমবাজার কুঠি অবরোধ করেন। ফলে ইংরেজরা নবাবের হাতে যুদ্ধাস্ত্র তুলে দিয়ে মুচলেকার মাধ্যমে এ যাত্রায় মুক্তি পায়। এ ঘটনার পর ইংরেজরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মীরজাফরকে মসনদে বসানোর চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় আরো যোগ দেন ঘষেটি বেগম, মীরজাফরের পুত্র মীরন, জামাতা মীর কাশিম, রাজা রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজা রাজবল্লভ, মীর খোদা ইয়ার খান লতিফ প্রমুখ। এ নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ১৭৫৭ সালের ৫ জুন মীর জাফরের একটি গোপন চুক্তি সম্পাদিত হয়। ওই চুক্তির ফসল ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধ। চুক্তি সম্পাদনের পরই রবার্ট ক্লাইভ পলাশীর প্রান্তরে সৈন্য সমাবেশ ঘটান। সিরাজউদ্দৌলাও তার সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন। কিন্তু এ সময় মীর মদনের পরামর্শ উপেক্ষা করে কোরআন শরিফে হাত রেখে শপথের বিনিময়ে মীরজাফরকে পূর্বপদে বহাল করেন। ইংরেজদের সঙ্গে গোপন চুক্তির বিষয়ে সিরাজউদ্দৌলা অবগত হলেও মীরজাফরের অনুগত সেনাদের সংখ্যা ও যুদ্ধাস্ত্রের পরিমাণ বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এর ফলে সবচেয়ে মূল্যবান মুহূর্তে সিরাজউদ্দৌলা সাহসিকতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হন। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। প্রথম দিকে কামানের গোলার আঘাতে সেনা নায়ক মীর মদন শহীদ হন। ইংরেজের অতর্কিত আক্রমণের পাল্টা জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়নি চক্রান্তকারী মীর জাফর। এই যুদ্ধে ইংরেজের ২২ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়। আর নবাবের পক্ষে যুদ্ধরত ৫শ’ সেনা প্রাণ হারান। এই চক্রান্তের যুদ্ধে জয়ের পর ক্লাইভ কলিকাতার দক্ষিণে বার্ষিক ৩০ হাজার পাউন্ড আয়ের একটি জমিদারি ও জায়গীর লাভ করেন। তবে পলাশীর যুদ্ধে যারা নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ইংরেজদের জিতিয়ে দেন পরবর্তীতে তাদের সকলের মৃত্যু হয়েছে অস্বাভাবিক এবং করুণভাবে। নবাব সিরাজের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতির সংগঠন কর্মসূচি পালন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।