পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একী বিভৎসতা! তারা কেমন ছাত্র। শিক্ষককে টেনে হেঁচড়ে অফিস থেকে বের করে আনেন তারা। এরপর তার গায়ে ঢেলে দেয়া হয় ড্রামভর্তি কেরোসিন। চেষ্টা করা হয় পুড়িয়ে মারার। এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটে গতকাল মঙ্গলবার দিনদুপুরে চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসি ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা ও প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর মাসুদ মাহমুদকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ক্যাম্পাস জুড়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের একাংশের নেতৃত্বে শিক্ষকের উপর হামলাকারী এ শিক্ষার্থীরা এরপর সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
মেধাবী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক প্রফেসর মাসুদ মাহমুদকে হত্যা প্রচেষ্টার ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে আভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সম্প্রতি কিছু শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। এর প্রতিবাদে তারা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে আন্দোলনও করে। ধারণা করা হচ্ছে, আন্দোলনকারীরাই প্রকাশ্যে ওই শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রবীণ ওই শিক্ষককে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের নেতৃত্বে থাকা মাহমুদুল হাসান ঘটনার পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তারা আরো জানায়, আগুন দেয়ার মুহূর্তে সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে তারা ওই শিক্ষকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়। আর তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতেন ওই শিক্ষক। শিক্ষকের ওপর হামলাকারীরা এরপর উল্টো ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন জাকির হোসেন সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ চলাকালে নগরীর একাংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তার দুইপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হন যাত্রীরা।
শিক্ষককে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার খবর পেয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে ছুটে যায় জানিয়ে খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার মাহমুদুল হাসান ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার সামনে স্বীকার করেছে সে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছে। ইউএসটিসির ভিসিকে জানিয়েই আমরা তাকে ক্যাম্পাস থেকে আটক করে থানায় এনেছি।
এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত জানিয়ে ওসি বলেন, শিক্ষককে কয়েকজন ছাত্র মিলে অফিস থেকে টেনে রাস্তায় নিয়ে আসে। তারপর কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়। এই কেরোসিন কোথা থেকে এলো হঠাৎ? নিশ্চয়ই পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে তারা কেরোসিন এনেছিল। সেই কেরোসিন শিক্ষকের গায়েও দিয়েছে, আবার রাস্তায় ঢেলে টায়ারও জ্বালিয়েছে। এই পরিকল্পনার নেপথ্যে কারা, সেটা আমরা তদন্ত করে বের করব। এ ঘটনায় থানায় হত্যা প্রচেষ্টা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান ওসি।
নগর পুলিশের বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারি কমিশনার (এসি) পরিত্রাণ তালুকদার বলেন, অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে এর আগেও কথিত যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন কিছু শিক্ষার্থী। গত কিছুদিন ধরে তাদের আন্দোলন বন্ধ ছিল। স¤প্রতি তারা আবার মাসুদ মাহমুদের পদত্যাগ দাবিতে সরব হয়েছেন। এরপর মঙ্গলবার তারা এই শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
ইউএসটিসি’র ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া বলেন, স্যার একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষ। প্রকাশ্যে স্যারকে অফিস থেকে টেনে বের করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে অপমান করেছে। এটা চরম অপমানের। এই অপমান শুধু স্যারের নয়, আমাদের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও। আমরা স্যারের পাশে আছি। যারা শিক্ষকের গায়ে হাত দেয়, তারা কেমন ছাত্র ! আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
পুলিশ ও ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের দুইটি গ্রুপ ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ইস্যু সৃষ্টি করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে। ইংরেজি সাহিত্যের কোর্স কারিকুলামের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি কবিতা পড়াতে গিয়ে নারী-পুরুষের জৈবিক সম্পর্ক, বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়া, পোশাক নিয়ে ক্লাসে নিয়মিত আলোচনা করেন শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ। সেসব বিষয়কে যৌন হয়রানি হিসেবে অভিযোগ তুলে ইউএসটিসি’র একদল শিক্ষার্থী গত এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন।
তবে মাসুদ মাহমুদের দাবি- ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি কয়েকজন শিক্ষককে চাকুরিচ্যুত করেন। এরপর তাদের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের একাংশ তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলতে থাকেন। এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।
পুলিশ জানায়, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ সক্রিয়। প্রভাবশালী দুই নেতার অনুসারী ছাত্রলীগের এ দুটি গ্রুপ নানা ইস্যুতে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কথায় কথায় তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ এবং জাকির হোসেন সড়কে অবরোধ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও দ্ব›দ্ব থাকায় ছাত্রদের দুটি গ্রুপকে ব্যবহার করে কেউ কেউ। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন জড়িত থাকায় পুলিশ কখনও কঠোর হতে পারে না। তবে দিনদুপুরে একজন শিক্ষককে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনায় সরকারের হাই কমান্ড থেকে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চুয়েটের সাবেক ভিসি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে ইউএসটিসির ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটি
ইউএসটিসিতে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে গায়ে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এ কমিটি গঠন করেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া জানান, কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।