পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সউদী আরবে প্রায় শতাধিক মৃত কর্মীর লাশ দেশে আনতে এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে স্বজনরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রবাসে মৃত সন্তানদের লাশ দেশে এনে দাফন-কাফন করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। মৃত প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠাতে ও ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে কতিপয় মিশনের সংশ্লিষ্ট শ্রম সচিবের চরম উদাসিনতা ও গাফলতির দরুণ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে বছরের পর বছর দৌঁড়-ঝাপ করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না স্বজনদের অনেকেই।
জনশক্তি রফতানির বৃহৎ শ্রমবাজার সউদী আরবে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মি মারা যায়। এর পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সূত্র মতে, ২০১৮ সনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ৩৭১জন প্রবাসী কর্মির লাশ দেশে এসেছে। এর মধ্যে সউদী আরব থেকেই এসেছে ১ হাজার ১১৩টি লাশ । মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ৭৩৬ টি লাশ। সউদীর বিভিন্ন হাসপাতাল মর্গে এখনো শতাধিক লাশ পড়ে রয়েছে। এসব লাশ দ্রæত দেশে পাঠাতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেও ভোক্তভোগি স্বজনদের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৩৬৬ টি লাশ দেশে এসেছে। ২০০৫ সন থেকে গত মে মাস পর্যন্ত বিদেশ থেকে দেশে আনা প্রবাসীদের লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫০৪ জনে।
প্রবাসীদের লাশ দ্রæত দেশে পাঠাতে কনস্যুলেট এর কাউন্সেলরদের (শ্রম)-কারো কারো ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রবাসী কর্মিদের লাশ দ্রæত দেশে প্রেরণ এবং মৃত প্রবাসীদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে দফায় দফায় তাগিদ পত্র পাঠিয়েও আশানুরুপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কল্যাণ বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সনের ২৪ আগষ্ট গোপালগঞ্জ সদরের চরতালা গ্রামের মৃত মোক্তার সিকদারের প্রবাসী ছেলে লিয়াকত সিকদার সউদী আরবের জেদ্দায় মারা যায়। তার লাশ বিগত ১১ মাস ধরে জেদ্দাস্থ আল বিদা ন্যাশনাল সরকারি হাসপাতাল মর্গে পড়ে রয়েছে। গত ১৭ জুন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের (প্রশাসন) উপ-সচিব মো. জহিরুল ইসলাম এক তাগিদ পত্রে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল ইসলামকে মৃত লিয়াকত সিকদারের লাশ দ্রæত দেশে প্রেরণ এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বকেয়া বেতন ভাতা, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও ইন্স্যুরেন্স বাবদ সহায়তা উদ্ধারপূর্বক দেশে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে কল্যাণ বোর্ডকে অবহিতকরণের নির্দেশ দেন। মৃত লিয়াকত সিকদারের পরিচিত চাঁন মিয়া লিয়াকতের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য কাউন্সেলর (শ্রম)কে অনুরোধ জানান। কিন্ত অদ্যাবধি কাউন্সেলর শ্রম মৃত লিয়াকতের লাশ দেশে পাঠাতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। মৃত লিয়াকতের বড় ভাই শওকত সিকদার এ তথ্য জানান। মৃত লিয়াকত সিকদারের মা অলেকা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে ইনকিলাবকে বলেন, আমার বাবার লাশ দেশে আইন্না দাফন-কাফন করতে পারলে কলিজাড্যা ঠান্ডা অইতো। উপ-সচিব জহিরুল ইসলাম গত ৩০ জুন মৃত লিয়াকত সিকদারের লাশ দ্রæত দেশে পাঠানোর তাগিদ দিয়ে জেদ্দাস্থ কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল ইসলামকে জরুরি অনুরুপ একটি চিঠি লিখেন। ফরিদপুর সদরের কাঁচারদিয়া গ্রামের প্রবাসী মামাদ মোফাজ্জেল বিগত ২৪ মার্চ জেদ্দায় মারা যায়। তার লাশ দ্রæত দেশে পাঠানোর জন্য উপ-সচিব জহিরুল ইসলাম গত ৩০ জুন জেদ্দাস্থ কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল ইসলামকে তৃতীয় দফা তাগিদ পত্র দেন। তার পরেও কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল লাশ পাঠানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। গফরগাঁও উপজেলার কুরচাই গ্রামের প্রবাসী আব্দুর রহমান ফকির গত ২ এপ্রিল সউদী আরবে মারা যায়। তার লাশ জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজিজ স্পেশালিস্ট হাসপাতালে পড়ে রয়েছে। তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন স্বামীর লাশের জন্য দ্বারে দ্বারে কান্নাকাটি করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কল্যাণ বোর্ড থেকে তার লাশ দেশে পাঠাতে গত ৫ মে ও গত ১৭ জুন দু’টি তাগিদ পত্র পাঠানো হয় জেদ্দা কাউন্সেরের (শ্রম) কাছে। ২০১৩ সনের ২৩ ফেব্রæয়ারি নরসিংদী সদরের রসুলপুর (কান্দাপাড়া) গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে প্রবাসী কর্মি সুমন জেদ্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ, কর্মস্থলের বকেয়া বেতনাদি উদ্ধারপূর্বক দেশে স্বজনদের কাছে পাঠানোর জন্য কাউন্সেলর (শ্রম) আমিনুল ইসলামকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে গত ২০ জুন উপ-সচিব নুরুন আখতার সর্বশেষ ৫ দফা তাগিদ পত্র প্রেরণ করেন। এসব অসহায় পরিবার-পরিজন অনাহার-অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে। মৃত প্রবাসীদের স্বজনরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও বকেয়া বেতনাদির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া ২০১৩ সনের ২৭ জানুয়ারী নরসিংদীর মনোহরদীর হাররদিয়া গ্রামের গনি মিয়ার প্রবাসী ছেলে আকরাম হোসেন রিয়াদে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তার লাশ দেশে এলেও দীর্ঘ ৭ বছর যাবত তার ক্ষতিপূরণ ও বকেয়া বেতনাদি স্বজনরা পায়নি। মৃত আকরামের ভাই কাউছার জানান, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে তাগিদ পত্র দেয়ার পরেও কোনো ক্ষতিপূরণ ভাগ্যে যুটছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।