Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চশিক্ষায় ভবিষ্যৎ খুঁজে পায়না শিক্ষার্থীরা

ঢাবি দিবসের আলোচনায় প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ইমেরিটাস প্রফেসর ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের প্রবল আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ, এতে তাঁরা কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, জীবিকার নিশ্চয়তা দেখতে পায় না। বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গ্রহণক্ষমতা খুব বড় ব্যাপার। আগ্রহের অভাব
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার মান অতীতে যে খুব উঁচুতে ছিল এবং এখন যে খুব অধঃপতিত, তা নয়। আসলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে। তারা আসে, থাকে, চলে যায়।
বাংলাদেশে ভালো শিক্ষক পাওয়া এখন একটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানী, একই সঙ্গে সেই জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহী তেমন শিক্ষক দরকার।
তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষক হওয়ার অর্থ কেবল জ্ঞানী হওয়া নয়, শিক্ষকতায় আগ্রহীও হওয়া চাই। অন্য চাকরি পাননি বলে শিক্ষক হয়েছেন এমন লোকদের দিয়ে কুলাবে না। জ্ঞানী, জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহীদের শিক্ষাক্ষেত্রে টেনে আনতে হলে বেতন-ভাতা সম্মানজনক হওয়া চাই।
শিক্ষকের বেতন-ভাতা অন্য পেশাজীবীদের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেন এবং কোচিং সেন্টারে না গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানেই নিবিষ্টচিত্ত হন। তিনি বলেন, ‘আজকাল যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। যেটুকুই-বা দেওয়া হচ্ছে, তাও শিক্ষার্থী ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তার সার্বক্ষণিক ভয় পরীক্ষার। আমাদের বিদ্যায়তনিক শিক্ষা সব সময়ই পরীক্ষামুখী ছিল, এখন সেটা রীতিমতো পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। এতে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদ, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম প্রমূখ।
এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ভিসি। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ”। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় মনোরম সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও হল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা, উদ্বোধনী সংগীত, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, গবেষণা ও আবিস্কার বিষয়ক প্রদর্শনী, সাইকেল র‌্যালি, প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।
আলোচনা সভায় ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান ৯৮তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে ‘মুজিববর্ষ ২০২০’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উৎসব ২০২১’ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আগমনী বার্তা হিসেবে অভিহিত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ ২০২০’ উপলক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক (মরণোত্তর) ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
শিক্ষা ও গবেষণার উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে এমিরিটাস প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘কমিটি ফর এক্সিলেন্স ইন এডুকেশন এন্ড রিসার্চ’ শীর্ষক একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ভিসি বলেন, এর মাধ্যমে বিশ্ব র‌্যাংকিং-এ ঢাবির অবস্থান সুসংহত হবে। ঢাবিকে অভীষ্ট লক্ষ্যে উন্নীত করতে তিনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা চান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে দুর্লভ পান্ডুলপি প্রদর্শনী, কার্জন হলে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের উদ্ভাবিত চিকিৎসা প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণা প্রদর্শনী, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ডাকসু’র উদ্যোগে সাঁতার প্রতিযোগিতা, সাইকেল র‌্যালি এবং প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, দিবসটি উপলক্ষ্যে ঢাবি সকল অনুষদ, বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও হল দিনব্যাপী নিজস্ব কর্মসূচি গ্রহণ করে। এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল, তবে অফিসসমূহ খোলা ছিল।
ডাকসুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ডুজা
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) এক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডুজা। নির্ধারিত ১৫ ওভার শেষে তারা ৪ ইউকেটে ১৫৯ রানের বিশাল টার্গেট দেয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে এক ওভার বাকি থাকতেই সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৩২ রান তোলে ডাকসু। ম্যাচ শেষে খেলায়ড়দের মাজে পুরষ্কার তুলে দেন ভিসি। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ডুজা দলের আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ