Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরশাদের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়াবেন না

সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, তিনি (এরশাদ) শঙ্কামুক্ত নন। তার বয়স এবং তার যে সমস্যা ও জটিলতা, সব মিলিয়ে ডাক্তাররা এখনো তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, তার (এরশাদ) আজকে (সোমবার) সকাল পর্যন্ত যে শারীরিক অবস্থা দেখেছি, ডাক্তারদের ভাষায় সেটা হচ্ছে শারীরিক অবস্থা আগের দিনের মতো স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ অপরিবর্তিত আছে। চিকিৎসকদের ভাষায়, এই অপরিবর্তিত থাকা হলো শুভ লক্ষণ। যেহেতু ওনারা শঙ্কা করছিলেন যে, অবস্থার অবনতি হতে পারে। অবনতি যখন হয়নি, স্থিতিশীল আছে। এটা শুভ লক্ষণ।

জি এম কাদের বলেন, উনার (এরশাদ) গত রোববার লাঞ্চের ইনফেকশন যতটুকু দেখা গিয়েছিল, সোমবার দেখা যায় ইনফেকশনটা একটু কমের দিকে। আগের দিন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অক্সিজেন আন্ডারপ্রেসার দিতে হতো। এখন ওনারা (চিকিৎসকরা) দুই ঘণ্টা আন্ডারপ্রেসার অক্সিজেন দিচ্ছেন। দুই ঘণ্টা নরমাল অক্সিজেন দিচ্ছেন। ওনারা (চিকিৎসকরা) এ রকম ট্রেন চালু থাকলে কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অক্সিজেন দেয়া হবে। তারপর যখন ইমপ্রুভমেন্ট হবে তখন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেবেন।

জি এম কাদের বলেন, ওনার কিডনিতে ইনফেকশনের কারণে ফ্যাংশন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ডাক্তাররা সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন। ডাক্তারদের কথায়, অবস্থা অপরিবর্তিত। সামনের দিকে প্রতিদিনিই উনি ইমপ্রুভ হবেন। তিনি বলেন, আমি দলের পক্ষ থেকে ওনার সব শুভাকাক্সক্ষী, আত্মীয়স্বজন সবার পক্ষ থেকে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে চাই, যেন উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। আবার দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এরশাদের মৃত্যুর কথা বলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, আমি অনুরোধ করব, কোনো স্ট্যাটাস এ রকম দেবেন না। যাদের নামে এসেছে স্ট্যাটাসগুলো, তা সব সময় উনাদের নাও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, সে আইডি ফেইক হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, একজনের আইডি আরেকজন চালাচ্ছেন। যেটাই হোক, এটা যেন ভবিষ্যতে না হয়। এটার জন্য আমরা সবাইকে অনুরোধ করব।

জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কথা, এগুলো আমাদের বিব্রত করেছে। কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যতটুকু সম্ভব সঠিক তথ্যগুলো আপনাদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া দরকার। আপনারা যেন সব সময় অবহিত থাকেন। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব আমাদের যে বক্তব্য, এর বাইরে আর কোনো বক্তব্য আপনারা নিজে থেকে প্রচার করবেন না। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ কোনো তথ্য দেবেন না প্লিজ। আমরা তার শারীরিক অবস্থা যতটুকু সম্ভব জানি, তা আপনাদের অবহিত করব। সিএমএইচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি, ওনারাও আইএসপিআরের মাধ্যমে সংবাদগুলো প্রচার করার চেষ্টা করবেন। যদি কোনো সংবাদ না পান, তাহলে বুঝবেন যে ওনার অবস্থা আগের মতো আছে। স্থিতিশীল আছে। আর যদি কোনো সমস্যা হয়, সঙ্কট হয়, যত দ্রুত সম্ভব আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।

জাপার এই শীর্ষ নেতা বলেন, এ মুহূর্তে ওনাকে কোথাও শিফট করাটা সিএমএইচের ডাক্তাররা সাজেস্ট করছেন না। ওনারা যেভাবে চিকিৎসা করছেন, ওনারা মনে করেন এ মুহূর্তে ওনাকে (এরশাদ) কোথাও শিফট করাটা সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। ওনার এখানে যে চিকিৎসা হচ্ছে তাতে তারা (চিকিৎসকরা) যথেষ্ট সন্তুষ্ট। এই শারীরিক অবস্থায় ওনাকে শিফট করা সঠিক হবে না। তবে এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা ডাক্তারদের পরামর্শ বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া সিফট করার সিদ্ধান্তে যাবো না। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন মেডিকেশনের কারণে এরশাদ আধা ঘুম, আধা জাগা অবস্থায় আছেন। আমরা যাওয়ার পরে আমি কথা বললাম, ভাই আপনি কেমন আছেন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব যখন আসছেন, তখন এরশাদকে উদ্দেশ করে ডাক্তাররা বললেন, স্যার আপনার জন্য মন্ত্রী এসেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এসেছেন। তখন উনি (এরশাদ) চোখ মেলে দেখেছেন। তবে উনি কোনো কথা বলতে পারেননি। যেহেতু ওনার মুখে অক্সিজেন মাস্ক আছে। ওনার সেন্স এখনো আছে, এটা বোঝা গেল।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সিএমএইচ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেয়া হয় অসুস্থ এইচ এম এরশাদকে। এরপরের দিন সংসদে জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এরশাদের চিকিৎসায় অর্থের জোগাড় হয়নি।
এরশাদ চিকিৎসার জন্য সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি সিঙ্গাপুর যান। সেখান থেকে ফেরেন ৪ ফেব্রুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সে দেশে যান এরশাদ। নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে ২৬ ডিসেম্বর তিনি ফেরেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সাইদুর রহমান টেপা, গোলাম কিবরিয়া টিপু, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এমপি, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়াসহ প্রায় শতাধিক নেতা।

রওশনের কোরআন তেলাওয়াত
এ দিকে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে স্বামী এরশাদ থেকে আলাদা বাসায় বসবাস করছেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। তিনি (রওশন) অসুস্থ স্বামী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শয্যাপাশে কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন এরশাদের শয্যাপাশে বসে প্রায় ঘণ্টাখানেক কোরআন তিলাওয়াত করেন তিনি। এ সময় এরশাদের রোগমুক্তি ও সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন রওশন এরশাদ।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ