পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেছেন দেশি-বিদেশি নাগরিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। আইন-শৃংখল বাহিনীর পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে নিহতদের প্রতি। ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তিন বছর উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর হলি আর্টিজান বেকারির এই ভবনটি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য খুলে দেয়া হয়। সেখানে ফুলে ফুলে নিহতদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সবাই হয়তো কোনো অভিযানে নিহত হয়েছেন, নয়তো গ্রেফতার হয়ে জেলখানায় রয়েছেন। এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি আর বাংলাদেশে না ঘটে, সে লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া সকাল সাতটায় ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত এবং বেলা ১১টায় ইতালির রাষ্ট্রদূত হলি আর্টিজান বেকারিতে এসে নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তবে এর মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে আসেন এই হামলায় নিহত জাকিরুল হাসান শাওনের মা মাসুদা বেগম। দুই হাতে শাওনের ছবি। একটি রক্তাক্ত। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার বিচার আমি পেলাম না। আমার ছেলেটাকে র্যাব, পুলিশ নির্যাতন কইরা মারছে। ওরে জঙ্গি মনে করছিল। কিন্তু দুই বছর পর ঠিকই প্রমাণ হইছে ও জঙ্গি ছিল না। আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না। মালিক মাসে মাসে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়। ওতে কোনোরকম চলি। আমা গো দেখনের কেউ নাই। শাওনের মা মাকসুদা বেগমের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হলি আর্টিজান বেকারি এলাকা। এদিকে সকাল ১০টার আগেই হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় সেলিমা রহমান বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পর সরকার কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক সন্ত্রাসবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছে।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ আরো বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়েছি। সারাবিশ্বেই জঙ্গি হামলা হচ্ছে। শুধু ২০১৮ সালেই ইউরোপজুড়ে ১২৯টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ থেকে বোঝা যায়, জঙ্গিরা বৈশ্বিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়নি।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, তিন বছর আগে আজকের এই দিনে হলি আর্টিজানে র্নশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এই হামলার সঙ্গে নব্য জেএমবি›র যারা জড়িত ছিল তারা সকলেই নিহত হয়েছে। অনেকে অভিযানে নিহত হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ হামলার দ্রæত বিচারকাজ শেষ হবে। হলি আর্টিজানে হামলার মতো আর কোনও ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে লক্ষ্যে পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কাজ করছে।
তিনি বলেন, নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ, সরাসরি অভিযান, সচেতনতামূলক কর্মসূচিসহ ডিএমপির নানা উদ্যোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হবে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা নেই। ছোট খাট হামলাও যেন না ঘটাতে পারে, সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সিরিয়ায় আইএসে যেসব বাংলাদেশিরা যোগ দিয়েছিল, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যারা সিরিয়ায় গিয়েছিল, তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে বাংলাদেশ থেকে কিংবা অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যারা সে দেশে গেছেন, তাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন। জীবিতদের কেউ দেশে ফেরত আসতে চাইলে, তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এজন্য দেশের ইমিগ্রেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব স্থানে আমাদের তৎপরতা রয়েছে।
১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশে বসবাস করেন ইতালিয়ান নাগরিক ফাদার রিকার্দো তোবানিলি। ছিন্নমূল মানুষদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণে ফুল দিতে এসেছিলেন তিনি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ খুবই শান্তি প্রিয়। অল্প কিছু মানুষ অসুবিধা করছে। এজন্য কিছু চিন্তা আছে, সতর্কতাও আছে। তবে ভয়ের কারণ নেই। আমরা নিরাপদেই আছি। নিহত ৯ ইতালিয়ান নাগরিকের মধ্যে ছয় জনই তার পরিচিত ছিল।
৪৬ বছর ধরে এ দেশে বসবাস করছেন ফাদার আতিলিও। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর সবাই সচেতন হয়েছে। বিপদ যেকোনও সময় আসতে পারে। আর কোনও সর্বনাশ যাতে না হয়। এই ঘটনায় সবাই শিক্ষা পেয়েছে, সচেতন হয়েছে। আমি ৪৬ বছর ধরে আছি। ভয় কিংবা বিপদ কোনোটাই বোধ করি না।
আনেজি বারেলো নামে আরেক ইতালিয়ান নাগরিক বলেন, হলি আর্টিজানের এই একটি ঘটনা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করে না। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই নৃশংস এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্যসহ নিহত হন ২২ জন। দীর্ঘ সময় পার হলেও ভয়াবহ এ হামলার দগদগে ক্ষত এখনও বিরাজমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।