Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ায় রেলওয়ের সেতুতে বাঁশ-টায়ার

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

লোহার পেরেকের পরিবর্তে কুষ্টিয়ার বেশ কিছু রেল সেতুতে দেখা গেছে বাঁশের ব্যবহার। সেতুর ওপরে বেশ কিছু লোটার বোল্ট না থাকায় বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের গোজ। সেই সাথে রয়েছে সাইকেল ও মোটর সাইকেলের টায়ারের অংশ। শতবর্ষের বেশি এসব রেল সেতুতে কাঠের স্লিপার পরিবর্তন করা হয়। তবে স্লিপার যাতে উঠে না যায় সেজন্য পেরেক দিয়ে এসব বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর সারাদেশে রেল সেতুতে বাঁশের ব্যবহার নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রেল সূত্র জানায়, ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ সরকার দর্শনা হতে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করেন এবং এরপর পর্যায় ক্রমে সংস্কার হয়। বর্তমানে কুষ্টিয়ার পোড়াদহ থেকে রেলযোগে রাজশাহী-ঢাকা-রাজবাড়ী-খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল করছে। ১৮৯৭ সালে দর্শনা-পোড়াদহ সেকশনটি সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯০৯ সালে পোড়াদহ-ভেড়ামারা এবং ১৯১৫ সালে ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী সেকশনগুলোকে ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ-হালসা রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যবর্তী কাটদহচর এলাকায় একটি রেল সেতুতে (নম্বর ১৯১) সরেজমিনে দেখা যায়, এই সেতুর কাঠের স্লিপারগুলো বেশ পুরনো হয়ে গছে। সেগুলো যাতে ট্রেন চলাচল করার সময় পানিতে পড়ে না যায় এজন্য বাঁশের বাতা এবং বাঁশের গোজ দিয়ে আটকানো। এ সেতুটি তৈরি করা হয় ১৮৯৭ সালে। আপ এবং ডাউন মিলিয়ে সেতুটির ওপর দিকে প্রায় ২৫টি ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও মালবাহী গাড়ী চলাচল করে। দর্শনা-পোড়াদহ রুটের সকল ট্রেন ও মালবাহী গাড়ী চলে এই সেতুর ওপর দিয়েই। তার দুই কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে আরো দুইটি সেতু। সেগুলোর অবস্থাও একই রকম। যেন বাঁশেরই ‘উত্তম’ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সেতুর সাথে রেল লাইনের আটকানো ক্লিপ বেশ কিছু স্থানে নেই। লোহা দিয়ে আটকানোর কথা থাকলেও মাঝে মাঝে বাঁশ দিয়ে আটকানো হয়েছে। ১৯২ এর সেতুটির অবস্থা কিছুটা ভালো। কয়েকদিন আগেই পরিবর্তন করা হয়েছে কিছু স্লিপার। তবে সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের গোজ।

স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী বলেন, সেতুটির কাঠগুলো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এই কাঠগুলো পরিবর্তন করা দরকার। আর অনেক স্থানে পিন না থাকায় ট্রেন গেলে রেল সরে যায়। পিন কম থাকার কারণে কোন রকম চলার জন্য লোহার পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে পিন তৈরি করে স্লিপার আটকে দিয়েছে। এক কিলোমিটার উত্তরে কামারডাঙ্গা (১৯৪) রেল সেতুতেও দেখা গেছে বাঁশের ব্যবহার। সেই সাথে কিছু কিছু স্থানে নেই কোন ক্লিপ। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, রেলগাড়ী এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় যাতে স্লিপার উঠে বা সরে না যায় এজন্য বাঁশ দিয়ে রেখেছে। নাট না থাকায় বাঁশের গোজ ব্যবহার করেছে। তিনি আরো বলেন, যারা এর দায়িত্বে আছেন তারা নাট না দিয়ে বাঁশের গোজ দিয়েছেন। বাপের জন্মে রেল সেতুতে বাঁশ দিয়েছে তা কোনো দিন দেখিনি। এছাড়াও বেশ কিছু রেল লাইনের ক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান না থাকায় আতঙ্কে থাকে স্থানীয় যানবাহনে চলাচলরত যাত্রী ও চালকরা।

স্থানীয় পাখি ভ্যানের যাত্রী শায়েদা খাতুন বলেন, রেলের গেট না থাকায় লাইন পার হতে ভয় লাগে। এই ভয় নিয়েই প্রতিনিয়ত রেল পার হতে হয়। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে রেল সেতু পার হওয়া ইয়ার আলী জানান, সেতুটির বেশ কিছু স্লিপার নড়বড়ে। মাঝে মধ্যেই পরিবর্তন করে। তবে কী যে করে বলতে পারবো না। লোহার পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে গেছে। রেল সেতু দিয়ে হেঁটে আসা স্কুলছাত্র মিরাজুল ইসলাম জানায়, আর কোন রাস্তা না থাকায় আমি এই রেল ব্রিজের ওপর দিয়েই স্কুলে যাই। যদি রেল চলে আসে তাহলে পাশের লাইনে ঝাঁপ দেব। তবে স্থানীয় রেল সেতুগুলো অনেক পুরাতন হলেও এখনো অনেকটা ভালো দাবি করে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার নাজমুল হাসান জানান, এই অঞ্চলে আজ অবধি কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম জানান, রেল চলার সময় জাম্পিংয়ে যাতে ক্লিপার সরে না যায় বা নড়ে না যায় এজন্য বাঁশের বাতা বাঁধা হয়েছে। নাটের পরিবর্তে বাঁশের গোজ স্থায়ী না হলেও এটি অতিরিক্ত সতর্কতা বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার শরিফুল।



 

Show all comments
  • Habib ১ জুলাই, ২০১৯, ৬:৪২ এএম says : 0
    দুঃখ্য জনক ! রেলের এত সম্পদ তার পরও কেন বাঁশ ????????????????????
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarak Khan ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৪৭ এএম says : 0
    এই দেশে কোনো কিছুই অসম্ভব না। রড বাদ দিয়ে বাশ,ঔষুধে ভেজাল,ডাক্তার নকল,দুধে সীমা,মাছে ফরমালিন,ফলে বিষ,যেকোন অফিসে ঘুষ,সঠিক বিচারের অভাব।জনগণের সামনে লাগামহীন মিথ্যা বলা।বিচার একদিন হবে, মরলে বোঝা যাবে ধর্ম কি জিনিস।
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Chowdhury ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৪৮ এএম says : 0
    উন্নয়নের মহাসড়কে ডিজিটালি লেটেস্ট আবিষ্কার টায়ার থেরাপি।
    Total Reply(0) Reply
  • এইচ.এম ফয়সাল মাহমুদ ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৪৮ এএম says : 0
    রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে।উন্নয়ের বদলে জনগন কে বাশ উপহার দিলেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ