পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত বাজেটকে ’জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এতে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ উপকৃত হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। উন্নয়নের গতিধারা ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। ইনশা আল্লাহ আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবোই। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা এবং ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করে বলেন, অতীতের সকল সরকারের আমলের বাজেট ছিল বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর। উন্নয়ন বাজেটও ছিল বিদেশ নির্ভর। কিন্তু আমরা দক্ষতার সঙ্গে প্রতিবার বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছি বলেই এবারের বাজেটে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আর উন্নয়ন বাজেটও নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এর মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মমর্যাদাশীলতা প্রমাণ করেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও এর অন্যতম সাফল্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমৃদ্ধির আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের- শিরোনাম রেখে আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ১৩ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি। গত ১০ বছরে সারাদেশেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসাব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে ২০টি দেশ অবদান রাখছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম।
বর্তমান সরকারের সাফল্য তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার, জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে দায়মুক্ত করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে শক্ত হাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীন হলেও বাংলাদেশ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারে, সেই টার্গেট থেকেই জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নিলেও তাঁর আদর্শ কেড়ে নিতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আরো বেড়েছে। গত নির্বাচনে এর প্রমাণ হয়েছে। চতুর্থবারের মতো দেশের মানুষের সেবা করার জন্য জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ-শিরোনামে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতি দেশের মানুষ পূর্ণ আস্থা জানিয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়েই এবারের বাজেটটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
আগামী ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময়ের মধ্যে মাথা পিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলারে উন্নীত এবং অতি দরিদ্র্যের হার ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ অব্যাহত রাখা হবে। কওমী মাদরাসাকে মুল শিক্ষার ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। এরাও শিক্ষা শেষে দেশে-বিদেশে চাকরি পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাজেটে তারুণ্যের শক্তিকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত। বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়াতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। যুব সমাজের উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব অত্যন্ত যুগোপযোগী। প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে শতকরা ২ ভাগ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, এতে প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠাতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হবে। তিনি বলেন, দেশের মোট শ্রমশক্তির বড় অংশই কৃষিখাতে নিয়োজিত। একদশকে কৃষিখাতের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি এবং এ খাতে ব্যাপক সাফল্যে এসেছে। ২ কোটি ৮ লাখ কৃষক কৃষিকার্ডের মাধ্যমে কৃষি উপকরণের ভর্তুকি পাচ্ছে। ব্যাপক গবেষণার কারণেই দেশের কৃষি খাতে ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে।
প্রতি গ্রামে শহরের আধুনিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার বর্তমান সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়া বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। দেশের সকল জনগণকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
দেশের রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ৩০ বছরের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি, রাজধানীতে মেট্টোরেল নির্মাণ হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে দ্রুত রেল, নৌসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রামে দ্রুতগামীর ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিয়েছি। এখন ৪জি চলছে, ৫জি আনার পরিকল্পনা চলছে। আর দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনা খাত তৈরি পোশাক খাতে এক ভাগ প্রণোদনা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ওই শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা (সামরিক স্বৈরশাসক) ক্ষমতায় থেকে শুধু নিজেরা দুর্নীতি করেনি, দুর্নীতিকে সমাজে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান বা নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যুগোপযোগী। আর ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। কারণ ব্যাংকে উচ্চহারে সুদ থাকলে শিল্পখাত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হয় না। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা রয়েছে। যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে বর্তমান সরকারের আমলে প্রস্তাবিত এই প্রথম বাজেট অত্যন্ত জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম বাজেট। এই বাজেট দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন চায়। দেশের মানুষের কল্যাণ ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।