Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্রিমুখী কর্তৃত্বের যাঁতাকল

বেতন ও মর্যাদা বৈষম্যের শিকার বিশ হাজার আদালত-কর্মচারী

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৩০ জুন, ২০১৯

নিয়োগ দিচ্ছেন জেলা জজ। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেতন-ভাতা দিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চাকরির তাৎক্ষণিক বদলি, পদোন্নতি দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। কাজ করতে হচ্ছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের অধীনে। ত্রিমুখী কর্তৃত্বের এই যাঁতাকলে পিষ্ট দেশের ২০ হাজারের বেশি আদালত-সহায়ক কর্মচারী। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটি বঞ্চনায় গুমরে কাঁদছে ২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর থেকেই। প্ল্যাটফরমহীন এই কর্মচারীরা এখন চেষ্টা করছেন সংগঠিত হতে। চাইছেন ‘বিচার বিভাগীয় কর্মচারী’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে কথা বলতে।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের ৬৪টি আদালতে বিভিন্ন পদবির ২০ হাজারের বেশি আদালত-সহায়ক কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে এমএলএসএস, প্রসেস সার্ভার, ক্যাশ সরকার, ক্যাশিয়ার, নিম্নমান সহকারী, ফরাস, দপ্তরি, নাইটগার্ড, বেঞ্চ সহকারী, হিসাব রক্ষক, নাজির, সেরেস্তাদার, সেরেস্তা সহকারী, তুলনাকারক, তুলনা সহকারী, টাইপিস্ট কপিস্ট, স্টেনোটাইপিস্ট, স্টেনোগ্রাফার, কম্পিউটার অপারেটর, রেকর্ড সহকারী, রেকর্ডকিপার, জুডিশিয়াল পেশকারের পদ রয়েছে।

এর বাইরেও কিছু পদ রয়েছে। তারাই দেশের দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত, যুগ্ম দায়রা জজ আদালত, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (সিএমএম কোর্ট), অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, অর্থঋণ আদালত। এর বাইরে বেশ কিছু ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। যেমন- প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, বিদ্যুৎ আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, নিরাপদ খাদ্য আদালত, শ্রম আদালত, নৌ আদালত, শিশু-কিশোর আদালত, বন ও পরিবেশ আদালত, বিমানবন্দর আদালত, পারিবারিক আদালত, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, নির্বাহী আদালত এবং গ্রাম আদালতসহ অন্তত ৩০ ধরনের আদালতে কাজ করছেন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্বীয় যোগ্যতায় তারা এ নিয়োগ পান। জেলা জজ আদালত তাদের নিয়োগ দেন। তবে আদালতের বিদ্যমান অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, দেশের আদালতগুলোতে কর্মচারীদের অনেক পদই এখনো শূন্য। অথচ মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বিচারকের সংখ্যা বাড়ছে। সেই তুলনায় বাড়েনি সহায়ক কর্মচারীর সংখ্যা। ফলে বিদ্যমান কর্মচারীদের কাজের পরিধি দিন দিন বাড়ছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, মাসদার হোসেন মামলা রায়ের আলোকে ২০০৭ সালের নভেম্বরে ‘পৃথক বিচার বিভাগ’ যাত্রা করে। এর পরে বিচার বিভাগ কাগজ-কলমে স্বাধীন হলেও কার্যত নির্বাহী বিভাগের অধীনেই থেকে যায়। তবে বিচার বিভাগের জুডিশিয়াল ক্যাডারদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে অনেক। অবকাঠামো সংস্কার, নতুন নিয়োগ, বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হওয়া, প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানা দিক থেকে বেশ কিছু অগ্রগতিও সাধিত হয়। পক্ষান্তরে আদালত-সহায়ক কর্মচারীরা বিচার বিভাগের অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিপুলসংখ্যক এই অংশের অধিকার এবং তুলনামূলক সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি থেকে যায় উপেক্ষিত।

এর ফলে যোগ্যতা থাকা সত্তে¡ও সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বড় সঙ্কট সৃষ্টি হয় কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, শাস্তি ও পদোন্নতি, সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি এবং অধিকারের প্রশ্নে। জেলা জজ আদালত আদালত কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। এই আদালতের অধীন বিভিন্ন আদালতে তারা কাজ করেন। অথচ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন। অন্যদিকে নাজির কিংবা বেঞ্চ সহকারী পর্যায়ের একজন কর্মচারীর বদলির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। অনুমোদন প্রয়োজন হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের। ত্রিমুখী এই কর্তৃত্বের যাঁতাকলে অধস্তন আদালত কর্মচারীদের এখন ত্রাহি দশা।

সূত্র মতে, বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে অন্যান্য সুবিধাও খুব একটা নেই তাদের। একই যোগ্যতাসম্পন্ন অন্য দফতরের একজন কর্মচারী তাদের দ্বিগুণ বেতন পান। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন জানান, ব্যাংকের একজন এমএলএসএস থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই আপ্যায়ন ভাতাসহ পদোন্নতি, সুবিধাদি সমহারে পেয়ে থাকেন।

পুলিশ বিভাগে কর্মরত একজন কনস্টেবল এবং পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা উভয়ে ৩০% ঝুঁকিভাতা, রেশন, পদোন্নতি ও সুবিধা পান। একই যোগ্যতাসম্পন্ন আদালত কর্মচারীরা সেটি পান না। আদালত কর্মচারীরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত; অথচ তারা অর্থনৈতিকভাবে মানবেতর জীবন যাপন করেন। আমরা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি চাই। এ লক্ষ্যে আমরা সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করে তিন দফা দাবি প্রচার করছি।

ভোলা সিজেএম কোর্টের ক্যাশিয়ার মো. নাজিমউদ্দিন বলেন, আদালত কর্মচারীরা বিচারকার্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন; অথচ তাদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি নেই। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর বিচারকদের জন্য স্বতন্ত্র জুডিশিয়াল পে-স্কেল হলেও বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের স্বতন্ত্র পে-স্কেল হয়নি।

ঢাকা সিজেএম কোর্টের কম্পিউটার অপারেটর মো. কামাল হোসেন মর্যাদার বৈষম্য তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। অর্থাৎ সে সময় সেরেস্তাদাররাও ‘কর্মকর্তা’র মর্যাদা পেতেন। অথচ এখন তারা ‘কর্মচারী’ হিসেবেই পরিগণিত।

অন্যদের সঙ্গে বেতন-বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে বেতন স্কেল পর্যালোচনায় দেখা যায়, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, অডিটর, সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদার পদগুলোর বেতন স্কেল সেরেস্তাদারদের নিচে ছিল। তারা এখন সেরেস্তাদারদের দ্বিগুণ স্কেলে বেতন পাচ্ছেন।

বর্তমান জনকল্যাণকামী সরকারের কর্মপরিধি বৃদ্ধির ফলে নতুন অনেক বিভাগ সৃষ্টি হয়েছে। সেসব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মচারীদের দ্বিতীয় কিংবা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। খাদ্য পরিদর্শক, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই), নার্স, কৃষির ব্লক সুপারভাইজার, উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে কর্মরত একজন মাধ্যমিক পাস উচ্চমান সহকারী কিংবা প্রধান সহকারীকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে সরাসরি প্রথম শ্রেণীর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উচ্চ মাধ্যমিক পাস তহসিলদারকে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের কর্মচারীদের সঙ্গেও অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিস্তর বেতন-বৈষম্য রয়েছে। হাইকোর্টের বেঞ্চ অফিসারগণ প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেয়েছেন। পার্সোনাল অফিসারদের দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা। অথচ একই যোগ্যতাসম্পন্ন অধস্তন আদালতের কর্মচারীরা এখনো তৃতীয় শ্রেণীতেই পড়ে আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুন্সীগঞ্জ আদালতের একজন বেঞ্চ সহকারী জানান, বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পদোন্নতির বৈষম্য ভয়াবহ। পদোন্নতির যৎসামান্য সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগই ব্লক পোস্ট। পদোন্নতির কোনো সুযোগই নেই। যে ক’টিতে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে সেই সুযোগ গ্রহণ করতে কর্মচারীকে ২০-২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়। চাকরির শেষ সময়ে এসে পদোন্নতি পেলেও অনেকে কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। চাকরি থেকে অবসরে চলে যান অনেকে।

নানামাত্রিক বৈষম্যের শিকার অধস্তন আদালতের কর্মচারী সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এবং অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন এক নয়। বৈষম্য তো থাকবেই। তারা সেটি মেনেই চাকরিতে যোগদান করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে কী করার আছে?

 



 

Show all comments
  • মোঃ জিয়াউল হক ৩০ জুন, ২০১৯, ১১:১৪ এএম says : 0
    বরাবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিষয়ঃ বাংলাদেশের অধঃস্তন আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের জুডিসিয়াল পে-স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা প্রদান, সকল ব্লক পদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজন ও অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রনয়ণ প্রসঙ্গে। মহোদয়, যথাযথ সম্মানের সাথে আপনার সদয় সমীপে আবেদন করছি যে, আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীন বিচার বিভাগের কর্মচারী। নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগ ২০০৭ খ্রিঃ সনের ১লা নভেম্বর পৃথকীকরণ করা হয়। বিচার বিভাগের কর্মচারী হওয়া সত্বেও আমাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীর সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। ২০০৯ খ্রিঃ সালে আপনার সদাশয় সরকার কর্তৃক বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য ‘‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল বেতন স্কেল’’ নামে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রদান করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমরা বিচার কার্যে মাননীয় বিচারক মহোদয়গণের সহায়ক কর্মচারী হিসেবে কর্ম সম্পাদন করা সত্বেও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল সহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা হইতে বঞ্চিত এবং বিচার বিভাগে চাকরী করা সত্ত্বেও জনপ্রশাসনের কর্মচারী হিসেবে আমাদের পরিচিতি চরম বঞ্চনা ও পীড়াদায়ক। পক্ষান্তরে বিজ্ঞ বিচারকগণ স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর পাশাপাশি দেওয়ানী আদালতের অবকাশকালীন সময়ে (ডিসেম্বর মাস) ফৌজদারী আদালতে দ্বায়িত্ব পালন করার জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমান বেতন প্রাপ্ত হন এবং প্রতি মাসেই বিচারিক ভাতা হিসাবে মূল বেতনের ৩০% প্রাপ্ত হন। চৌকি আদালতের বিচারক চৌকি ভাতা প্রাপ্ত হন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীগণকে ‘‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল বেতন স্কেল’’ এর আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি, এমনকি অবকাশকালীণ ছুটিতে দায়িত্ব পালন ভাতা ও বিচারিক সহায়তা ভাতাও প্রদান করা হচ্ছে না। দেশরত্ন, আদালতের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ বিচারকাজ করেন, অধীনস্থ কর্মচারীগণ বিচারকের বিচারকাজে সহায়তা করেন। আদালতের বিভিন্ন বিভাগ/শাখার ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান সহ আদালতের আদেশ মোতাবেক অন্যান্য কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে অধীনস্থ কর্মচারীগণ বিচার বিভাগে অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। আদালতের কর্মচারীরা বিচারক না হলেও বিচারিক কাজের অতি আবশ্যক সহায়ক কর্মচারী। বিচারঙ্গনে মামলা বৃদ্ধির ফলে বিজ্ঞ বিচারকগণ যেমন কাজের ভারে ভারাক্রান্ত, তেমনি কর্মচারীরাও দিন দিন অধিক কাজের চাপে ভারাক্রান্ত। সরকারের অন্য যে কোন বিভাগের চেয়ে বিচার বিভাগের কর্মচারীগণ অধিক পরিশ্রম করেন, তা যে কোন বিবেকবান মানুষ দেশের আদালতে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করলে বুঝতে পারবেন। ব্যাংকের মত এখানেও প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করতে হয়। আদালতে কোর্ট ডায়রী, কজলিস্ট ও ডিউটিলিস্ট সিস্টেম আছে, তাতে দিনের ধার্য মামলাগুলোর প্রতিটিতেই যেমন আদালত কর্তৃক আদেশ করতে হয়, তেমনি কর্মচারীরাও ঐ আদেশ অনুসারে প্রতিটি নথীর প্রয়োজনীয় কার্য শেষ করতে সন্ধ্যা রাত এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। আদালতের একটি মামলা দায়ের থেকে শুরু করে নিষ্পত্তি পরবর্তি কার্যক্রম পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে অপরিহার্য ভাবে বিধিবদ্ধ কর্ম সম্পাদন করেন। আদালতের একজন কর্মচারী বিচারক না হলেও বিচারে সহায়তা ও আমানতদারীতার ভার কোন অংশে তাঁর উপর কম নয়, উপরন্তু সততা, নিষ্ঠা, বিশ্বস্ততা, দ্বায়িত্বশীলতা, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার সহিত কার্য সম্পাদন করেন। ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারী সকলেই আপ্যায়ন ভাতা সহ পদোন্নতি ও যাবতীয় সুবিধা সমহারে পেয়ে থাকেন। পুলিশ বিভাগে কর্মরত কনষ্টেবল এবং অফিসারগণ উভয়েই ৩০% ঝুকি ভাতা, রেশন, পদোন্নতি সহ যাবতীয় সুবিধা পেয়ে থাকেন। মানবতার কন্যা, আদালতের কর্মচারীগণ সমাজে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে বিবেচিত হন, কিন্তু বেশীরভাগ কর্মচারীরা-ই আর্থিকভাবে মানবেতর জীবন যাপন করে থাকেন। এক সময় আদালতের উচ্চমান সহকারী (সেরেস্তাদার) এমন মর্যাদা পেতেন তিনি অফিসার্স ক্লাবের সদস্য হতে পারতেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের জাতীয় বেতন স্কেল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বর্তমানের কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় শ্রেনীর পদ যেমন-উপ সহকারী প্রকৌশলী, অডিটর, সরকারী মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক’দের বেতন স্কেল সেরেস্তাদারদের নীচে ছিল, যাহা বর্তমানে সেরেস্তাদারদের বেতন স্কেলের দ্বিগুন। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর পিতা জনাব শেখ লুৎফর রহমান, একজন সেরেস্তাদার ছিলেন এবং তিনি গোপালগঞ্জ অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারী ছিলেন। তাহা বঙ্গবন্ধু তার আত্নজীবনীতে লিখেছেন। বর্তমানে জনকল্যানের স্বার্থে সরকারের বিভিন্ন কর্ম পরিধি বৃদ্ধির ফলে অনেক নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত বিভাগ সমূহের অনেক কম গুরুত্বপূর্ন কর্মচারীদেরকেও দ্বিতীয় কিংবা প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যেমন-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান/সহকারী শিক্ষক, খাদ্য পরিদর্শক, পুলিশের উপ-পরিদর্শক, নার্স, ব্লক সুপারভাইজার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের দ্বিতীয় শ্রেনীর পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। জেলা-রেজিষ্ট্রার এর কার্যালয়ে কর্মরত একজন মাধ্যমিক পাস উচ্চমান সহকারী/প্রধান সহকারীগণকে তৃতীয় শ্রেনী থেকে সরাসরি প্রথম শ্রেনীর সাব-রেজিষ্ট্রার পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উচ্চ মাধ্যমিক পাস যোগ্যতা সম্পন্ন একজন তহশিলদারকে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা করা হয়েছে। বিচার বিভাগের কর্মচারীদের পদোন্নতির যেটুকু ব্যবস্থা আছে, তার চেয়ে বস্নক পদের সংখ্যাই বেশী। আবার যাদের পদোন্নতির সুযোগ আছে তাদের দীর্ঘ ২০-২২ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার ফলে তারা প্রনোদনার অভাবে তাদের মধ্যে কর্মস্পীহা হারিয়ে ফেলে নতুবা পদোন্নতির পূর্বেই চাকুরীর বয়সসীমা শেষ হয়ে যায় কিংবা মৃত্যুবরণও করে থাকে। মমতাময়ী মা, উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে আদালতের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বর্তমান জনবান্ধব সরকারের নিকট আমাদের নিম্মোক্ত দাবীসমূহ উপস্থাপন করা হলোঃ ১। অধঃস্তন আদালতে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদেরকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহায়ক কর্মচারী হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করে জুডিসিয়াল পে-স্কেলের আলোকে বেতন ভাতা দিতে হবে। ২। সকল ব্লক পদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজন পূর্বক মহামান্য হাইকোর্ট ও মন্ত্রনালয় এর সমন্বয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জেষ্ঠ্যতার ক্রমানুসারে প্রতি ০৫ বৎসর অন্তর অন্তর পদোন্নতি / উচ্চতর গ্রেড এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩। সারাদেশে অধঃস্তন আদালতে কর্মরত কর্মচারীদের নিয়োগ বিধি সংশোধন করত: এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধিমালা প্রনয়ণ করতে হবে। অতএব মহোদয়ের সমীপে আকূল আবেদন এই যে, বিচার বিভাগের কর্মচারীদের প্রাণের দাবীর বিষয়গুলো সদয় বিবেচনা ও কার্যকর আদেশ দানে একান্ত মর্জি হয়। বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারীদের পক্ষে সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক/ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আনোয়ার হোসেন ৩০ জুন, ২০১৯, ১:০৬ পিএম says : 0
    পুলিশ প্রশাননের বিভিন্ন হেড অফিস তথা অধস্তন অফিসগুলোতে নিয়োগকৃত বেসামরিক কর্মচারীরা যুকি ভাতা, রেশনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে,,,মন্ত্রণালয়ের একজন পিয়ন ৫ বছর পরেই প্রমোশন পাই তবে আমরা কেন পাবো না???
    Total Reply(0) Reply
  • Sohel ৩০ জুন, ২০১৯, ৩:২০ পিএম says : 0
    প্রতিবেদক সাহেবকে বলছি, ডেসপাস সহকারী নামে একটা পদ আছে সেটি বাদ পড়েছে,অন্তর্ভুক্ত করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ