Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দায়মুক্তি না দিলে কালো টাকা সাদা হবে না

আলোচনায় ড. বারকাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বলেছেন, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা; অন্তরে এক, আর মুখে আরেক, এমন নীতি-আদর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠন সম্ভব না। এ সময় সরকার, বিরোধী দল, অন্য রাজনীতিক দল সবাই মিলে আবারো ওয়ান ইলেভেনের মতো সরকার আনার দিকে এগুচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর শ্রেষ্ঠ উপহার হতো, যদি তার আদর্শ অনুযায়ী বাজেট দেয়া হতো। কিন্তু বাজেটে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের দর্শন নেই। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যহীন, অমস হ্রাসকারী প্রবৃদ্ধির চিন্তা করতেন। এখনকার বাংলাদেশ হচ্ছে- ফর দ্য ওয়ান পারসেন্ট, অফ দ্য ওয়ান, বাই দ্য ওয়ান পারসেন্ট। এই শতাংশই বাজেটের সুফল পান। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলেও তা কাজে আসবে না বলে মনে করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত। একইসঙ্গে কালো টাকা বিস্তার রোধে সৎ, যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তির দিয়ে কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরমের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ওপর অনুষ্ঠিত এক বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি শিক্ষক সমিতি এ সভার আয়োজন করে।
ড. বারকাত বলেন, দেশে কালো টাকা নিয়ে তেমন কোন গবেষণা নেই। এটা নিয়ে আগে একটা গবেষণা করা হয়েছিল। যদিও ঐ গবেষণা তথ্য আর প্রকাশ করা হয়নি। ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ৪২-৪৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা; যা আমাদের বর্তমান ৩টি বাজেটের সমান। তবে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ আরও বেশি। এটা ৩০ থেকে ৪০ লাখ কোটি টাকার কম হবে না, যা এখনকার দুটি জিডিপির সমান।
তিনি বলেন, অতীতেও কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা কাজে আসেনি। উল্টো কালো টাকার একটা অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। এর একটাই কারণ, তা হচ্ছে- কালো টাকা প্রদর্শনের পর ভবিষ্যতে এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে, এই ভয়ে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র সভরেন গ্যারান্টি দিতে হবে।
ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে ড. বারকাত বলেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় একজন লুঙ্গি পরা লোক আমার কাছে এসেছিলেন কালো টাকা সাদা করতে। তিনি এক হাজার কোটি টাকা সাদা করতে চান বলে জানান। তাকে দেখে বোঝায় যায়নি যে, তিনি এতো টাকার মালিক। যেদিন তার সাদা টাকার কথা, তার আগের দিন এনবিআর ঘোষণা দিল, কালো টাকা বৈধ করলে এনবিআর কোন প্রশ্ন করবে না। কিন্তু দুদকসহ অন্য সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে। এরপর ওই লোক আর আসেনি।
কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ও উৎপত্তি রোধে ৩টি পরামর্শ দিয়েছেন ড. বারকাত। তিনি বলেন, কালো টাকা মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে স্থায়ীভাবে কমিশন গঠন করা যেতে পারে। একজন সৎ, যোগ্য ও সাহসী লোককে কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে তাকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত; যেসব কারণে কালো টাকার সৃষ্টি হয় আর্থিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। তৃতীয়ত; কালো টাকার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করতে হবে।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে দুই ধরনের ঋণ খেলাপি আছে। একটি শ্রেণী- অভ্যাসগত, দ্বিতীয়ত- অনভ্যাসগত। অভ্যাসগত শ্রেণী ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেয় না। অনভ্যাসগত শ্রেণী নানা কারণে খেলাপিতে পরিণত হয়। তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত। ড. বারকাত বলেন, সংসদে ৩০০ শীর্ষ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে ঋণ খেলাপির সংখ্যা ১ লাখের বেশি। এ ৩০০ জনকে জেলে ভরলে কী সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। এদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে আইন সংস্কার করা যেতে পারে। যেমন যেসব খেলাপি প্রতিষ্ঠান রফতানির সঙ্গে জড়িত তাদের বিদেশে পণ্য রফতানি আয়ের অংশ সরাসরি ব্যাংক কেটে রাখতে পারবে।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এমএ জলিল ও সাধারণ সম্পাদক ড. রেজাউল করিম, যুব অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি বদরুল মুনির, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দীন প্রমুখ।
##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ