পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা সঙ্কটকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে চীন কার্যত দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ও আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে। তবে মিয়ানমার যাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মেনে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেয়া শুরু করে, সেজন্য বন্ধু চীনের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ।
আগামী ১ থেকে ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে ছয়-সাতটি চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই সফরে চুক্তির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। ২০১৪ সালে বেইজিং সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকায় আসেন। এর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের সফর কম হলেও গত তিন বছরে পানি গড়িয়েছে অনেক দূর। অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অবস্থায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। নরেন্দ্র মোদি গতবারের চেয়ে অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছেন। পরপর তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেছেন। বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী প্রকাশ্যে প্রথমবারের মতো একটি চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে ঘুষ প্রদানের অভিযোগ করেছেন এবং সর্বোপরি রোহিঙ্গা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন চীন সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ১ জুলাই পাঁচ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী চীন যাচ্ছেন। যেখানে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুত চীন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী আগামী সোমবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উদ্দেশে রওনা হবেন। ডালিয়ানে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অনুষ্ঠানে তিনি ২ জুলাই অংশ নেবেন। পরের দিন তিনি বেইজিংয়ে যাবেন। আগামী ৪ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চেচিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর সরকারি ভোজে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। শেষ দিন অর্থাৎ ৫ জুলাই শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দেয়া চীনা প্রেসিডেন্টের ভোজে তিনি অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মনে করেন, চীন মিয়ানমারকে মদদ দিচ্ছে না; বরং তারা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি অথবা সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করছে। চীন চায় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মাঝে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সঙ্কটের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান আসুক। মন্ত্রী বলেন, চীনও চায় রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। মিয়ানমারও বলছে তারা ফিরিয়ে নেবে। বাংলাদেশও চায় এই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের স্বভ‚মে ফিরে যাক। দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন। ওই আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো ঋণ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ঋণের জালে আবদ্ধ করছে মর্মে যে সমালোচনা রয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সচেতন রয়েছে।
পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের ফিরতি সফর এটি। এই সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে। অন্য দিকে শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে ঢাকার আরো বেশি সম্পৃক্ততা চাওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং ওই সময়ে দুই পক্ষের সম্মতিতে যে প্রকল্পগুলো হাতে নেয়া হয়েছে, তার দ্রুত বাস্তবায়নে বাধা দূর করার উদ্যোগ নেয়া হবে। ওই সময়ে ২০০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ২৭টি প্রকল্প ২০১৬-২০ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য দুই পক্ষ সম্মত হয়েছিল, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে পাঁচটি প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং ঝু সাংবাদিকদের বলেন, চীনের কাছে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা একটি সফল সফর আশা করছি এবং উভয়পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে এই সফরের মাধ্যমে।
গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পরপর তৃতীয়বারের মতো জয়ী হলে চীনা রাষ্ট্রদূতই সবার প্রথম প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উপস্থিত হয়ে তাকে অভিনন্দন জানান এবং চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দেন। এখন পর্যন্ত ছয়টি চুক্তি দুই পক্ষ চ‚ড়ান্ত করেছে এবং আশা করা হচ্ছে, এবারের সফরে সেগুলো স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে তিনটি বিদ্যুৎ বিভাগ সংক্রান্ত, একটি সাংস্কৃতিক চুক্তি, একটি কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি ও শেষেরটি ব্রহ্মপুত্র নদীর পানির তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তির নবায়ন।
২০১৬ সালে শি জিনপিংয়ের সফরের সময় উভয়পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করেছে। ওই সফরে অর্থনৈতিক একটি কাঠামোর মধ্যে থেকে উভয় দেশের জন্য লাভজনক একটি অবস্থায় পৌঁছানোর জন্য উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, চায়না হারবার, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বেল্ট অ্যান্ড রোডের উদ্যোগে যতটুকু আশা করা হয়েছিল তার থেকে আপাতদৃষ্টিতে কম অংশগ্রহণসহ অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলো এই সফরে প্রভাব ফেলতে পারে।
উভয় দেশ সোনাদিয়া বন্দর নির্মাণের বিষয়ে একমত হয়েছিল, কিন্তু ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ওই চুক্তি সই হয়নি। পরে মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য জাপানকে কাজ দেয় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কর্মকর্তা ঘুষ দিয়েছে বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
২০১৭ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোডে উদ্যোগের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের ছয়জন কেবিনেট সদস্যকে দাওয়াত দেয়া হলেও তৎকালীন শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ছোট দল পাঠায় বাংলাদেশ। একজন কর্মকর্তা বলেন, চীন বর্তমানে একটি বৈশ্বিক শক্তি এবং এর একটি দৃঢ় প্রতিবেশী নীতি আছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে চীন তার প্রাধান্য বজায় রাখতে চায়, এটি কোনো গোপন বিষয় নয় এবং এটি অর্জনের জন্য বেইজিং কূটনীতির মাধ্যমে কোমল পন্থা অবলম্বন করে থাকে।
কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়টি আন্তর্জাতিকীকরণের বিপক্ষে আছে চীন এবং ঢাকাকে এ বিষয়ে একাধিকবার অনুরোধও করা হয়েছে। কিন্তু বস্তুতপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিমিন্যাল কোর্ট ও আন্তর্জাতিক কোর্ট অব জাস্টিসসহ অন্যরা এ বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, আমরা আশা করব, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য চীন যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেটি তারা অব্যাহত রাখবে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বেইজিং সফরে গেলে চীন ওই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং মিয়ানমারসহ তিন পক্ষ বৈঠক করে।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) চেয়ারম্যান মুনশি ফয়েজ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট অত্যন্ত জটিল। এ সঙ্কটের কারণে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পরীক্ষার মধ্যে পড়বে তা আমি মনে করি না। আমরা যেভাবে চাচ্ছি ভারত তো সেভাবে কথাবার্তা বলছে না। মুনশি ফয়েজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রেও চীন ভ‚মিকা রাখতে পারে। মিয়ানমারকে তো কেউ বিশ্বাস করবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।